মদিনা (সৌদি আরব) থেকে: কনকনে বাতাসে শীতার্ত হয়ে আছে মদিনার আবহাওয়া। রোদের দেখা নেই বললেই চলে। মক্কার তুলনামূলক গরম আবহাওয়া থেকে মদিনায় নেমে টের পাওয়া যায় শীতের অনুভূতি।
নাক মুখ ঢেকে ভারি কাপড়ে মানুষ চলেছেন নবীর মসজিদে। তীব্র শীতের জমাট পরিবেশ ভেঙে হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশু উচ্চারণ করছেন দরূদ ও সালাম। শীতার্ত মদিনা উষ্ণ হয়ে আছে নবী প্রেমের তীব্র আবেগে।
গত এক সপ্তাহ ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে শুরু হলো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। পুরো পরিবেশ কুয়াশাচ্ছন্ন। এরই মধ্যে মসজিদে নববীর দিকের সকল সড়ক লোকারণ্য। মুসুল্লিরা ফজরের নামাজে যোগ দিতে চলেছেন দলে দলে। মুখে উচ্চারণ করছেন আল্লাহর প্রশংসা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ আর সালাম।
হজ বা ওমরাহ পালন করতে মক্কায় আসা সকল মুসলমানকেই মদিনাতে নবীর রওয়াজা শরিফ জিয়ারত করে যেতে হয়। নবীর শানে দরূদ ও সালাম পেশ করে জানাতে হয় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। উম্মতের কল্যাণের জন্য যে প্রিয় নবী অশেষ কষ্ট ও পরিশ্রম করেছেন, তার প্রতি সকল মুসলমানের আনুগত্য ও প্রেম সীমাহীন। নবীর রওয়াজা শরিফে সর্বক্ষণ সালাম পেশকারী মুসলমান নর-নারীর ভিড়। সকলের মুখে দরূদ ও সালাম।
মসজিদে নববীর বাব আস সালাম ( সালাম জানানোর দরজা) দিয়ে দলে দলে মানুষ রওয়াজা পাকে প্রবেশ করছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াস সালামের রওয়াজার সামনে দিয়ে হেটে হেটে তার বের হয়ে যাচ্ছেল বাব আল জিবরাইল দিয়ে। নবীর দুই পাশে শায়িত খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাজিয়াল্লাহু আনহু এবং হযরত ওমর ফারুখ রাজিয়াল্লাহু আনহু-এর প্রতি সবাই জানাচ্ছেন সালাম।
মসজিদ থেকে বের হয়েই সামনে ঐতিহাসিক জান্নাতুল বাকী কবরস্থান। যেখানে শায়িত রয়েছেন নবী পরিবারের পবিত্র সদস্যগণ এবং অসংখ্য সাহাবী। বিশেষত হযরত ফাতিমা রাজিয়াল্লাহু আনহা এবং হযরত আয়েশা রাজিয়াল্লাহু আনহা-এর কবর রয়েছে এখানে। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে ও আরবের কঠোর বিধিনিষেধের কারণে কবরগুলো চিহ্নিত করে রাখা হয় নি। হাজার হাজার করবের সারিতে শুয়ে থাকা ইসলামের মহাত্মা ব্যক্তিত্বের প্রতিও মানুষ সালাম জানান।
চিরশান্তির সবুজ শহর মদিনা হট্টগোল ও আওয়াজহীন। মহান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে শুয়ে আছেন। এজন্য মানুষ আদব ও সম্ভ্রমে চলাচল করে এখানে। উচ্চকণ্ঠে কথা বলে না। উত্তেজনা প্রকাশ করে না।
জগতসমূহের জন্য রহমত ও করুণা স্বরূপ যে নবীর আগমন, তিনি সর্বশেষ নবী এবং হায়াতুন নবী, কিয়ামতের পূর্ব-পর্যন্ত তাঁর নবুয়ত প্রবহমান। এবং তিনি কিয়ামতের পর আখেরাতে কঠিন দিনে মানুষের শাফায়াতকারী। আল্লাহর এই মাহবুব নবীর প্রতি বিশ্ববাসীর সালাম, সালাত ও দরূদ অনিঃশেষ।