ইন্দোনেশিয়ায় আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী ব্যক্তিদের কোরআনে কারিম তেলাওয়াত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শরিয়া শাসিত আচেহ প্রদেশের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে।
চলতি মাসের ১৫ জানুয়ারি এই পরীক্ষার আয়োজন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে বিষয়টি ভেবে দেখার কথা বলা হলেও বিরোধী প্রার্থী এ বিষয়ে আয়োজকদের কোনো জবাব দেননি।
মূলত শরিয়া শাসিত আচেহ প্রদেশের রীতি অনুসরণ করেই এমন পরীক্ষার আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে সমালোচকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠের পরীক্ষা দিতে হলে তা দেশটির নৃতাত্ত্বিক ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাদের যুক্তি হলো, বিমান চালানোর ক্ষেত্রে বৈমানিকের কোরআন তেলাওয়াত সক্ষমতা নয় বরং বিমান চালানো সংক্রান্ত জ্ঞানের পরীক্ষা নেওয়া হয়। ঠিক তেমনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ব্যক্তিদের কোরআন তেলাওয়াত পরীক্ষা নয়, বরং ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষদের প্রতি তাদের সহানুভূতি কেমন; তার পরীক্ষা হওয়া উচিত।
সম্প্রতি আচেহ প্রদেশের একটি ইসলামি সংগঠনের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী জোকো উইদোদো এবং এবং বিরোধী প্রার্থী প্রোবো সুবিয়ান্তোকে কোরআন তেলাওয়াত পরীক্ষার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে সহিহ-শুদ্ধভাবে সূরা ফাতেহা তেলাওয়াত করতে হবে। আয়োজকরা আরও একটি সূরা নির্ধারণ করে দেবেন তেলাওয়াত করার জন্য।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের কোরআন পরীক্ষার আমন্ত্রণ জানানো ইসলামি সংগঠনের চেয়ারম্যান মারসিউদ্দিন ইশাক বলেছেন, প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের আসল চরিত্র জনগণের সামনে আনা এবং শরিয়া শাসিত প্রদেশটির সংস্কৃতিকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য তারা কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতার আয়োজনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।
আচেহ প্রদেশে স্থানীয়ভাবে যেসব ব্যক্তি নির্বাচিত হন তাদেরকে কোরআনে কারিমে তেলাওয়াতের পরীক্ষা দিতে হয়।
মারসিউদ্দিনের মতে, ‘আমাদের এখানকার নেতা, যেমন গভর্নর, সংসদ সদস্য এবং অন্যান্য কাউন্সিলরদের কোরআন তেলাওয়াতের পরীক্ষা দিতে হয়। পরবর্তী প্রেসিডেন্টও আমাদের নেতা হবেন। তাই আমরা কোরআন পাঠে তার সক্ষমতার বিষয়ে জানতে চাই, ঠিক যেমন আমাদের স্থানীয় নেতাদের ক্ষেত্রে হয়।’
তবে ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘নাহদাতুল উলামার’ কর্মকর্তা ড. রুমাদি আহমাদ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের জন্য কোরআন তেলাওয়াত পরীক্ষার আয়োজন করার মধ্য দিয়ে ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের চেষ্টা চলছে।’ তার ভাষ্য, ‘আসন্ন নির্বাচনে কোরআন তেলাওয়াতের সক্ষমতাকে কোনো ইস্যু বানানোর প্রয়োজন নেই। এটা ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের স্পষ্ট উদাহরণ। বিষয়টি বিপদজনক, যা ভিন্ন ভিন্ন নৃতাত্বিক গোষ্ঠী ও ধর্মের মানুষের মধ্যে ঘৃণা তৈরি করবে।’
মারসিউদ্দিন ইশাক জানিয়েছেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর পক্ষ থেকে এই আমন্ত্রণের বিষয়ে উত্তর পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি বিবেচনার কথা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, বিরোধী প্রার্থী প্রাবো আমন্ত্রণের কোনো উত্তর পাঠাননি। তিনি একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা। সাবেক প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর দ্বিতীয় কন্যার বিয়ে হয়েছিল তার সঙ্গে।