‘যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, তারা আপনার পালনকর্তার নিকট থেকে অবতীর্ণ কোরআনকে সত্য জ্ঞান করে এবং এটা মানুষকে পরাক্রমশালী ও প্রশংসনীয় আল্লাহর পথ প্রদর্শন করে।’ ‘এবং যারা কুফরের পথ অবলম্বন করে তারা বলে, আমরা কি তোমাদেরকে এমন ব্যক্তির সন্ধান দেব, যে তোমাদেরকে খবর দেয় যে, (মৃত্যুর পর কবরে) তোমরা সম্পূর্ণ পঁচে-গলে যাওয়ার পরও তোমাদেরকে নতুন করে সৃষ্টি করা হবে?’ -সূরা সাবা: ৬-৭
বর্ণিত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, যাদের জ্ঞান আছে এবং যারা চিন্তা করে তারা কোরআনের আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে এবং এক পর্যায়ে তাদের কাছে এগুলোর সত্যতা প্রমাণিত হয়। সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার পর, মানুষের কর্তব্য হলো- কোরআনে কারিমের আয়াতে বিশ্বাস ও তা অনুসরণ করা।
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামানায় ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ধর্মগুরুরা আল্লাহর রাসূলের প্রতি ঈমান এনে মুসলমান হয়ে যান। পরবর্তীতে ইতিহাসের দীর্ঘ পরিক্রমায় বহু জ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তি কোরআনের আয়াত অধ্যয়ন করে এর সত্যতা ও বিশালতা উপলব্ধি করার পর আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছেন।
এই শ্রেণির লোকদের বিপরীতে সব সময়ই একটি গোষ্ঠী ছিল এবং এখনও আছে যারা কোরআনে কারিম ও রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অস্বীকার করার অজুহাত হিসেবে মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে তুলে ধরে তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। যা ঈমানহানিকর বিষয়। কিন্তু তারা জানে না, যারা ধর্মকে মানুষের অজ্ঞতার ফসল বলে মনে করে তাদের বিপরীতে ইতিহাসে এমন অনেক চিন্তাবিদ ও গবেষক পাওয়া যায় যারা ইসলামের সত্যতা উপলব্ধি করে তা স্বীকার করেছেন এবং মুসলমান হয়েছেন। এমন ব্যক্তিরা নবী-রাসূলদের পথ অনুসরণের মাধ্যমে পার্থিব ও পরকালীন জীবনে সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন লাভ করেছেন।
এর পরের আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘সে কি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে অথবা সে কি উম্মাদ? (মোটেই না) বরং যারা পরকালে অবিশ্বাসী, তারা আজাব ও ঘোরতর পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত রয়েছে।’ ‘তারা কি তাদের সামনের ও পশ্চাতের আকাশ ও পৃথিবীর প্রতি লক্ষ্য করে না? আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে ভূপৃষ্ঠের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে অথবা আকাশের কোনো (প্রস্তুর) খণ্ড তাদের ওপর নিক্ষেপ করতে পারি। নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রত্যেক তওবাকারী বান্দার জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে।’ -সূরা সাবা: ৮-৯
চরম ঔদ্ধত্যবাদী কিছু মানুষের জবাব দিতে গিয়ে আল্লাহতায়ালা এসব কথা বলেছেন। আয়াতের পরবর্তী অংশে এ ধরনের অবাধ্য ও গোঁয়ার প্রকৃতির লোকদের উদ্দেশ করে বলা হয়েছে, তোমরা কি আকাশ ও ভূপৃষ্ঠের প্রতি লক্ষ্য করো না যে, সেগুলো কি বিশাল শক্তিমত্তায় সৃষ্টি করা হয়েছে? যিনি এই বিশাল জগতকে অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে অস্তিত্বে এনেছেন, তার পক্ষে কি মানুষকে মৃত্যুর পর আবার সৃষ্টি করা অসম্ভব? তোমরা কি সত্যিই তার শক্তিমত্তার ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে এ ধরনের কথা বলছ? তিনি কি শক্তিশালী ভূমিকম্পের মাধ্যমে তোমাদেরকে ভূপৃষ্ঠের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে পারেন না? অথবা আকাশ থেকে বিশাল পাথরখণ্ড নিক্ষেপ করে তোমাদেরকে তোমাদের ঘরবাড়িসহ ধ্বংস করে ফেলতে পারেন না? প্রত্যেক চিন্তাশীল মানুষ আল্লাহতায়ালার এই ক্ষমতার ব্যাপারে অবগত রয়েছেন এবং তারা জানেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের ঘটনা বহুবার ঘটেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, একদল মানুষ এতসব নিদর্শন চোখের সামনে থাকার পরও তা থেকে শিক্ষা না নিয়ে উল্টো কিয়ামতকে অস্বীকার করে।
বস্তুত কিছু মানুষ আছে যারা আল্লাহকে এই সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা মনে করলেও পরকালে বিশ্বাসী নয়। তারা মনে করে, এভাবে আল্লাহর আদেশ-নিষেধের বেড়াজাল থেকে মুক্ত থেকে যা খুশি তাই করা সম্ভব। বর্ণিত আয়াত থেকে ইসলামি স্কলাররা যেসব শিক্ষার কথা বলেছেন, সেগুলো হলো-
এক. আখেরাতের প্রতি অবিশ্বাস থেকে পথভ্রষ্টতার সূচনা হয়।
দুই. এই বিশাল সৃষ্টিজগত সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করলে স্রষ্টার পাশাপাশি পরকাল সম্পর্কে মানুষের বিশ্বাস শক্তিশালী হয়।
তিন. যারা ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে না তারা কীভাবে আল্লাহর ভয়াবহ আজাব তেকে নিজেদেরকে রক্ষা করবে?
চার. সৃষ্টিজগত সম্পর্কে চিন্তাভাবনা মানুষকে আল্লাহতায়ালার ইবাদতের দিকে ধাবিত করে। কাজেই মানুষের উচিত বেশি বেশি চিন্তা ও গবেষণা করা।