মৃতের জানাজায় অধিক সংখ্যক মুসল্লির উপস্থিতি শরিয়তে কাম্য। হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কোনো মৃতের জানাজার নামাজ একশ’ জন মুসলমান পড়ল, যারা সকলে তার মাগফিরাতের জন্য শাফায়াত করে তবে তাদের এ শাফায়াত অবশ্যই কবুল করা হবে।’ -সহিহ মুসলিম: ৯৪৭
জানাজার নামাজে শরিক হওয়া সওয়াবের কাজ এবং জীবিতদের ওপর মৃত মুসলমানের হক। এ জন্য বেশ কিছু হাদিস ও সাহাবাদের বাণীতে জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য মৃত্যু সংবাদ প্রচার করার ব্যাপারে নির্দেশনা এসেছে।
সহিহ বোখারিতে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, ‘এক ব্যক্তি রাতে ইন্তিকাল করলে সাহাবারা তাকে রাতেই দাফন করে দেন। সকালে সংবাদটি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালে তিনি বলেন, কেন তোমরা আমাকে (তখন) জানালে না?’ -সহিহ বোখারি: ১২৪৭
অন্য আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজ্জাশি বাদশার ইন্তেকালের দিন তার মৃত্যুসংবাদ জানিয়ে জানাজার স্থানে গেলেন, অতপর সাহাবায়ে কেরামকে কাতারবন্দি করে চার তাকবিরের সঙ্গে জানাজা আদায় করলেন।’ -সহিহ বোখারি: ১২৪৫
সুনানে বায়হাকির (৪/৪৭) এক বর্ণনায় এসেছে, রাফে ইবনে খাদিজ (রা.) আসরের পর ইন্তেকাল করলে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) কে তার মৃত্যু সংবাদ দিয়ে জিজ্ঞেস করা হলো- তার জানাজা কি এখন পড়া যেতে পারে? তিনি বলেন, আশপাশের গ্রামসমূহে খবর না দিয়ে রাফের মতো ব্যক্তির জানাজা পড়া যায় না।
এ বর্ণনার আলোকে ইসলামি স্কলাররা বলেন, জানাজার নামাজে অংশগ্রহণের জন্য আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের মৃত্যু সংবাদ দেওয়া মোস্তাহাব। কিন্তু জানাজার উদ্দেশ্য ছাড়া মৃতের গুণাবলী বর্ণনার উদ্দেশ্যে মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা কিংবা বিলাপ আর্তনাদের সঙ্গে মৃত্যু সংবাদ প্রচার করার ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), হজরত হুযায়ফা (রা.) প্রমুখ সাহাবারা নিজেদের মৃত্যু সংবাদ এভাবে প্রচারিত হওয়ার ভয় করে মৃত্যু সংবাদ কাউকে না জানাতে বলেছেন। -জামে তিরমিজি: ৯৮৪-৯৮৬
জামে তিরমিজির সূত্রে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস, এ সংক্রান্ত অন্যান্য হাদিস ও কজকর্ম দ্বারা মৃত্যুর কারণে বিলাপ আর্তনাদ করা অথবা মৃতের গুণাবলী বর্ণনাসহ মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। অভিজ্ঞ ইসলামি স্কলাররা এমনই বলেছেন। এতে জানাজা ও দাফনে শরিক হওয়ার জন্য মৃত্যু সংবাদ প্রচার করাকে নিষেধ করা হয়নি।
যেমন ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগের মতো না করে শুধু জানাজার নামাজের সংবাদ দেওয়ার জন্য মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা মোস্তাহাব। কেননা হাদিসে জাহেলি যুগের মতো মৃতের গুণগান গেয়ে মৃত্যু সংবাদ প্রচার করতে নিষেধ করা হয়েছে। -আল মিনহাজ, শরহে নববী: ৭/২১
হাফেজ ইবনে হাজার রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মৃত্যু সংবাদ প্রচার নিষেধ নয়, নিষেধ তো হল জাহেলি যুগের কর্মকাণ্ড। -ফাতহুল বারি: ৩/১৪০
ইবনুল আরাবি (রহ.) বলেন, মৃত্যু সংবাদ প্রচার সংক্রান্ত হাদিসগুলোর সারকথা হলো-
১. আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও নেককারদের মৃত্যু সংবাদ দেওয়া সুন্নত।
২. মৃতের প্রভাব প্রতিপত্তি উল্লেখ করে মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা মাকরূহ।
৩. বিলাপ, আর্তনাদের সঙ্গে প্রচার করা হারাম। -ফাতহুল বারি: ৩/১৪০
ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) বলেন, জানাজার কথা প্রচার করতে সমস্যা নেই। -আল জামেউস সগীর: পৃ. ৭৯
ইবরাহিম হালাবি (রহ.) বলেন, বিশুদ্ধ মত হলো- মৃতব্যক্তির গর্ব-গৌরবের উল্লেখ ছাড়া সাধারণভাবে অলিতেগলিতে মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা দোষণীয় নয়। কেননা জাহেলি যুগের প্রচার তো হলো- বিলাপ-আর্তনাদের সঙ্গে মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা। -শরহুল মুনইয়া, পৃষ্ঠা: ৬০৩
সুতরাং সাধারণভাবে মৃত্যু সংবাদ পৌঁছাতে কোনো সমস্যা নেই। আর তা মৌখিকভাবে যেমন করা যায়, তদ্রূপ বর্তমানে মাইকের মাধ্যমে আরও সহজেই পৌঁছানো যায়।
তবে, জানাজা কখন হবে এটি কোনো এলাকায় একবার জানিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট। কিন্তু কোথাও কোথাও দেখা যায় দীর্ঘসময় নিয়ে মাইকে একই ঘোষণা বহুবার করা হয়ে থাকে। এমনটি করা ঠিক নয়। কেননা এতে অন্যদের কষ্ট হতে পারে।