বাংলাদেশ থেকে পবিত্র ওমরাহযাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে ওমরাহ ব্যবস্থাপনাকারী এজেন্সিগুলোর জন্য কোটা দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগে সরকার অনুমোদিত এজেন্সি বছরে ৫০০ জন ওমরাহযাত্রী পাঠানোর অনুমতি ছিল। এখন থেকে প্রতি এজেন্সি ১ হাজার জনকে ওমরাহ পাঠাতে পারবেন।
মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আব্দুল্লাহ আরিফ মোহাম্মদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এসব কথা জানানো হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। কোটার কারণে প্রতি বছর হজযাত্রীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ হজে যেতে পারছেন না। এ কারণে ওমরাহ যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। গড়ে লক্ষাধিক লোক প্রতি বছর ওমরাহ পালন করছেন। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
বাংলাদেশস্থ সৌদি দূতাবাস থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশি ওমরাহ যাত্রীদের অনুকূলে এক লাখ ২৬ হাজার ৪৬৭টি ভিসা ইস্যু করা হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ২০১৮-১৯ সালে ওমরাহ ব্যবস্থাপনার জন্য ৫ দফায় ৩২৫টি এজেন্সিকে অনুমতি প্রদান করে। প্রত্যেক এজেন্সির জন্য ওমরাহ যাত্রী পাঠানোর কোটা ছিল ৫০০ জন। কিন্তু কিছু এজেন্সি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এই কোটা ছাড়িয়েও ওমরাহ যাত্রী পাঠায়। এ কারণে ধর্ম মন্ত্রণালয় গত ২৩ সেপ্টেম্বর ৬৩টি এবং ১৮ অক্টোবর ৩৪টি এজেন্সিকে সতর্ক করে নোটিশ দেয় এবং ভবিষ্যতে কোটার অতিরিক্ত যাত্রী না পাঠানোর জন্য চূড়ান্তভাবে সতর্ক করে। কিন্তু ওমরাহ যাত্রীদের অব্যাহত চাপ ও এজেন্সিগুলোর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বশেষ চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয় এজেন্সিগুলোর জন্য ওমরাহ যাত্রীর কোটা দ্বিগুণ করার নোটিশ জারি করে।
সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় প্রতি সপ্তাহে ওমরাহ যাত্রীদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। গত সপ্তাহের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি ওমরাহ মৌসুমে বাংলাদেশের ওমরাহ যাত্রীদের জন্য গত সপ্তাহ পর্যন্ত ৫২ হাজার ৮৪৮টি ওমরাহ ভিসা ইস্যু হয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ মোট ওমরাহ ভিসা ইস্যু করেছে ২৫ লাখ ৫৫ হাজার ২০১টি। এর মধ্যে ২১ লাখ ৮৩ হাজার ১৩ জন ওমরাহ করার জন্য সৌদি আরব পৌঁছান। এর মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক ওমরাহ যাত্রী পাকিস্তানের ছয় লাখ ১৫ জন। তারপর ইন্দোনেশিয়ার তিন লাখ ৯৪ হাজার ২৭ জন এবং ভারত ও মালয়েশিয়ার যথাক্রমে দুই লাখ ৮১ হাজার ৫৪৯ জন ও এক লাখ ৩০ হাজার ৭৯৩ জন। ইয়েমেন, আলজেরিয়া, মিসর, তুরস্ক, আরব আমিরাতের পরই বাংলাদেশের ৫২ হাজার ৪৮৪ জন। গত এক সপ্তাহে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে।
সৌদি সরকারের ভিশন ২০৩০ এ প্রতি বছর তিন কোটির বেশি ওমরাহ যাত্রীকে ওমরাহ পালনের সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
ওমরাহ পালনের নামে মানবপাচারের অভিযোগে সৌদি সরকার বাংলাদেশের জন্য দুই মৌসুম ওমরাহর ভিসা ইস্যু বন্ধ রেখেছিল। পরে ওমরাহ যাত্রীদের ফেরত আসার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ, শাস্তি ও জরিমানার বিষয়টি নিশ্চিত করলে সৌদি ভিসা ইস্যু শুরু করে গত বছর থেকে।
ওমরাহ এজেন্সিগুলোকে ওমরাহ ব্যবস্থাপনার জন্য সৌদি ওমরাহ কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে হতে হয়। এ জন্য এজেন্সিগুলোকে নির্ধারিত ফি দিয়ে সৌদি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে হয়। এরপর ওমরাহ যাত্রীদের পাসপোর্ট স্ক্যান করে তথ্যসহ ওমরাহ ভিসার অনুমতির (মুফাহ) জন্য সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হয়। অনলাইনে অনুমোদন আসার পর মূল পাসপোর্ট বাংলাদেশস্থ সৌদি দূতাবাসে জমা দেওয়া হলে ওমরাহর জন্য ভিসা দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্য ওমরাহ ভিসা ইস্যু করা হয়।
বাংলাদেশ থেকে সারা বছরই মানুষ ওমরাহ পালন করতে গেলেও বেশি সংখ্যায় ওমরাহ করতে যান পবিত্র রমজান মাসে।