পৃথিবীর প্রথম নির্মিত ঘর ও প্রথম মসজিদ হলো- মক্কা মোকাররমায় স্থাপিত কাবাঘর। সেটিই মুসলমানের কেবলা ও হজ-উমরার মূল কেন্দ্র। হজ ও উমরায় রয়েছে হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তার পরিবারের অসংখ্য স্মৃতি। হজরত ইবরাহিম (আ.) স্ত্রী হজরত হাজেরা (আ.) ও শিশু ইসমাঈলকে আল্লাহর হুকুমে মক্কায় রেখে যান।
হজরত ইসমাঈল (আ.) পিতার কাজে সহযোগিতা করার মতো বয়সে পদার্পণ করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর প্রতি কাবাঘর পুনর্নির্মাণের নির্দেশ আসে। তিনি পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে নিয়ে কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করেন। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কাবা নির্মাণকালীন পদচিহ্নবিশিষ্ট পাথর আজও সেখানে বিদ্যমান, যা মাকামে ইবরাহিম নামে পরিচিত। হজরত হাজেরা (আ.) দুগ্ধপোষ্য শিশুকে নিয়ে জনশূন্য এই প্রান্তরে অবস্থানকালে কঠিন পিপাসায় পানির খোঁজে সাফা-মারওয়া পাহাড়ে বারবার দৌড়ান।
সাতবার ছোটাছুটি করেও পানির সন্ধান না পেয়ে শিশুর কাছে ফিরে আসেন। তখনই হজরত জিবরাইল (আ.) শুষ্ক মরুভূমিতে পানির একটি ঝরনাধারা বইয়ে দেন। বর্তমানে এই ধারাই জমজম কূপ।
সামর্থ্যবানদের জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ এবং জীবনে একবার উমরা পালন করা সুন্নতে মোয়াক্কাদা।
তুলনামূলকভাবে উমরা একটি সহজ ইবাদত। তাই সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে উমরা করা উচিত। রমজান মাস উমরা পালনের সেরা সময়।
উমরার গুরুত্ব ও ফজিলত
উমরার মর্যাদা অনেক। এক উমরা থেকে অন্য উমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সব পাপের কাফফারা হয়ে যায়।
উমরা দরিদ্রতা ও গোনাহকে মুছে ফেলে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এক উমরা অন্য উমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সব কিছুর কাফফারা। আর মাবরুর (কবুল) হজের একমাত্র প্রতিদান হলো- জান্নাত। -সহিহ বোখারি : ১৭৭৩
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা বারবার হজ ও উমরা করো। কেননা এ দুটি দারিদ্র্য ও গোনাহকে সেভাবে মুছে ফেলে, যেভাবে কর্মকারের হাওয়া দেওয়ার যন্ত্র লোহার ময়লাকে দূর করে থাকে। -সুনানে নাসায়ি : ২৮৮৭
রমজানের উমরা নবীজির সঙ্গে হজের মতো
পবিত্র রমজানে উমরা আদায় করা হজের সমান। এক বর্ণনায় আছে, রমজানের উমরা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে হজ আদায়ের সমতুল্য। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এক আনসারি নারীকে বললেন, আমাদের সঙ্গে হজ করতে তোমার বাধা কিসের? মহিলা বলল, আমাদের একটি পানি বহনকারী উট ছিল। কিন্তু তাতে অমুকের পিতা ও তার পুত্র (মহিলার স্বামী ও ছেলে) আরোহণ করে চলে গেছে। আর আমাদের জন্য রেখে গেছেন পানি বহনকারী আরেকটি উট, যা দ্বারা আমরা পানি বহন করে থাকি। নবী কারিম (সা.) বললেন, আচ্ছা! রমজান এলে তখন উমরা করে নিয়ো। কেননা রমজানের একটি উমরা একটি হজ। -সহিহ বোখারি : ১৭৮২
অন্য বর্ণনায় হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজান মাসে একটি উমরা আদায় একটি হজ আদায়ের সমতুল্য অথবা আমার সঙ্গে হজ আদায়ের সমতুল্য। -সহিহ বোখারি : ১৭৬৪
রমজান মাসে উমরার খরচ ও কষ্ট দুটিই বেড়ে যায়। তার পরও ফজিলত পেতে এ মাসেই উমরা পালনের নিয়ত ও চেষ্টা থাকা চাই। আল্লাহ সবাইকে তওফিক দান করুন। আমিন।