আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করছেন, ‘এটা এজন্য যাতে আল্লাহ সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতার কারণে প্রতিদান দেন এবং ইচ্ছা করলে মুনাফিকদের শাস্তি দেন অথবা (তওবা করলে) ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ ‘এবং আল্লাহ কাফেরদেরকে ক্রুদ্ধাবস্থায় ফিরিয়ে দিলেন। তারা কোনো কল্যাণ পায়নি। যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ মুমিনদের জন্যে যথেষ্ট হয়ে গেছেন (অর্থাৎ তাদেরকে যুদ্ধে জয়ী করেছেন)। এবং আল্লাহ শক্তিধর, মহা পরাক্রমশালী। -সূরা আহজাব: ২৪
বর্ণিত দুই আয়াতে আহজাবের যুদ্ধের ফলাফল এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে সত্যবাদী যেসব মুমিন শত্রুবাহিনীকে মোকাবিলা করার জন্য বর্ম পরিধান করেছে এবং আল্লাহর রাস্তায় জীবন দেয়ার জন্য হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তারা আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে মহা পুরস্কার লাভ করবে। যদিও আহজাবের যুদ্ধে দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ হয়নি এবং তাদের কেউ শহীদও হয়নি। অন্যদিকে মুনাফিকদের মনোবল ছিল দুর্বল এবং তারা অন্যদের মনোবলও দুর্বল করে দিয়েছিল। ফলে তারা আল্লাহতায়ালার শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হয়ে গিয়েছিল। তবে তাদের মধ্যে যারা তওবা করে মুমিনদের মধ্যে ফিরে এসেছিল তাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে যেসব কাফির ও মুশরিক ভেবেছিল, তারা সম্মিলিতভাবে আক্রমণ করে ইসলামের শেকড় উৎপাটন করবে এবং আল্লাহর রাসূল ও তার অনুসারীদের ধ্বংস করে দেবে, তারা কোনো ধরনের গনিমতের মাল ছাড়াই ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
এই ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের এই শিক্ষা দেন যে, তারা যেন কোনো অবস্থাতেই ইসলামের শত্রুকে ভয় না করে। অন্যদিকে শত্রুর সামনেও এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, মহান আল্লাহর পরিকল্পনার সামনে তাদের ষড়যন্ত্র কোনো কাজেই আসবে না। তারা আল্লাহর ক্ষমতার ওপর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এ কারণে, মুসলমানদের সমূলে উপড়ে ফেলার লক্ষ্যে যেসব শত্রু ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল তারা অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে এবং ক্ষুব্ধ হয়ে নিজেদের জনপদে ফিরে যায়। মুসলমানদের ধ্বংস করার ব্যাপারে তাদের মনবাসনা অপূর্ণ থেকে যায়।
এই দুই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো-
এক. সত্যবাদিতা শুধু কথায় প্রমাণিত হয় না। কাজেও আল্লাহর সঙ্গে করা প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ঘটাতে হয়। আমরা যেন ধর্মের সহযোগিতা করতে গিয়ে কোনো ধরনের অবহেলা বা উদাসিনতা না দেখাই।
দুই. মহান আল্লাহর দয়া থেকে কেউ দূরে নয়। এমনকি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী মুনাফিকরাও অনুতপ্ত হয়ে তওবা করার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার ক্ষমা লাভের যোগ্য হতে পারে। এ ছাড়া, আল্লাহতায়ালা তার প্রজ্ঞা অনুযায়ী যাকে খুশি তাকে এমনিতেই ক্ষমা করে দিতে পারেন।
তিন. পার্থিব জীবনে চলার পথে বিভিন্ন পরিকল্পনা করার সময় শুধুমাত্র বস্তুগত সুযোগ-সুবিধা ও অবস্থা বিবেচনা করলে হবে না। বস্তুগত জগতের ঊর্ধ্বে আল্লাহতায়ালার গায়েবি সাহায্যের কথাও আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে।