দশম হিজরিতে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার সাহাবির সামনে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বক্তব্য পেশ করেন তা বিদায় হজের ভাষণ হিসেবে পরিচিত। ওই ভাষণের অনুকরণে হজের সময় আরাফাতের ময়দানসংলগ্ন মসজিদে নামিরা থেকে এখনো হজের খুতবা দেওয়া হয়।
আধুনিক সৌদি যুগ শুরুর পর থেকে বিগত একশ বছর ধরে যারা হজের খুতবা দিয়েছেন, সম্প্রতি তাদের একটি তালিক প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকায় দেখা গেছে, ১৩ জন ইমাম গত একশ বছরে হজের খুতবা দিয়েছেন। এর মধ্যে ১৪০২ হিজরি (১৯৮১ সাল) থেকে টানা ১৪৩৬ হিজরি (২০১৫ সাল) পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সময় ৩৫ বছর হজের খুতবা দিয়েছেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আলে শায়খ।
শায়খ আবদুল আজিজ ২০১৬ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে অবসর নেন। এরপর থেকে প্রতিবছর একজন করে নতুন খতিব নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আবদুল আজিজ আলে শায়খ মক্কায় ১৯৪৩ সালের ৩০ নভেম্বর (১৩৬২ হিজরি) জন্মগ্রহণ করেন। শায়খ মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাবের নাতি। অর্থাৎ ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব নজদি ইবনে সুলাইমান আত-তামীমী তথা আবদুল ওয়াহাবের বংশধর। যারা সৌদি আরবে নেতৃস্থানীয় ধর্মীয় পরিবার বলে স্বীকৃত, তারা দেশটির আলেম শ্রেণি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।
শায়খ আবদুল আজিজ আট বছর বয়সে পিতাকে হারান। তিনি ১১ বছর বয়সে শায়খ মুহাম্মদ বিন সিনানের কাছে পবিত্র কোরআন মুখস্ত করেন। তার পড়ালেখার তত্ত্বাবধান করেন তৎকালীন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহিম আলে শায়খ।
ষোলো বছর বয়সে তার চোখে একটি গুরুতর সংক্রমণ হয় এবং তিনি দৃষ্টিশক্তি হারানো শুরু করেন। বিশ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে একদম অন্ধ হয়ে যান।
রিয়াদের আদ-দাওয়া বৈজ্ঞানিক ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা শেষে ১৩৮০ হিজরিতে তিনি রিয়াদের কলেজ অফ শরিয়াতে যোগ দেন এবং শরিয়া বিজ্ঞান এবং আরবি ভাষায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৩৮৪ হিজরিতে তিনি আদ-দাওয়া বৈজ্ঞানিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। এর পর বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১৯৯৯ সালের জুন মাসে তিনি আবদুল আজিজ ইবনে বাযের নেতৃত্বে বাদশাহ ফাহাদের আদেশে সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি নিযুক্ত হন। প্রধান মুফতির পদ দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃত্বধারী এবং ক্ষমতাশালী ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ। পদাধিকার বলে প্রধান মুফতি দেশের ইলমি গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য। তার প্রধান কাজ হলো বিভিন্ন আইনি ও সামাজিক বিষয়ে ফতোয়া দেওয়া। সৌদি আরবের আদালত ব্যবস্থা এই সংস্থার ফতোয়ার দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত।
সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি হিসাবে শায়খ আবদুল আজিজ ইসলামি গবেষণা এবং বিভিন্ন ইস্যুতে ফতোয়া জন্য স্থায়ী কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেতৃত্বে দেওয়া অনেক ফতোয়া বিশ্বে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তিনি ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর দেওয়া এক ফতোয়ায় বলেন, আত্মঘাতী বোমা হামলা ‘বড় অপরাধ’ এবং বোমা হামলাকারিরা ‘ফাঁসির অপরাধী।’ যারা তাদের কর্মের কারণে জাহান্নামে নিক্ষেপিত হবে।
সৌদি আরবে প্রধান মুফতি হিসেবে তিনি অনেক সম্মানের অধিকারী। তার পরামর্শে দেশটির মজলিশে শূরা তাদের কাজ পরিচালনা করে থাকে। তিনি চার সন্তানের জনক। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহণ ও বক্তৃতার পাশাপাশি রেডিও এবং টেলিভিশনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তিনি নিয়মিত অংশ নেন।
শায়খ আবদুল আজিজ ইসলামি আইন ও আকিদাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কিতাব রচনা করেছেন।