যে মসজিদে দুই রাকাত নামাজে উমরার সওয়াব মেলে

মসজিদ পরিচিতি, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-07-04 20:57:57

দুনিয়ায় ফজিলতপূর্ণ চারটি মসজিদের একটি মসজিদে কুবা। মসজিদটি মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিমকোণে অবস্থিত। এর দূরত্ব মসজিদে নববি থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মতো।

‘কুবা’ একটি কূপের নাম। এই কূপকে কেন্দ্র করে যে বসতি গড়ে উঠেছে তাকে কুবা মহল্লা বলা হয়। এই যোগসূত্রে মসজিদটির নামকরণ হয়- মসজিদে কুবা।

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা শরিফে হিজরতের প্রথম দিন কুবায় অবস্থানকালে এর ভিত্তি স্থাপন করেন। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) এ মসজিদের নির্মাণকাজে সাহাবাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন।

ইতিহাসবিদ মুহাম্মদ বিন ইসহাক (রহ.) বলেন, রাসুল (সা.) কুবায় সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার অবস্থান করেন। এ সময়ের মধ্যে মসজিদে কুবার ভিত্তি স্থাপন করেন এবং এতে নামাজ আদায় করেন। নবুওয়ত প্রাপ্তির পর এটাই প্রথম মসজিদ, যার ভিত্তি তাকওয়ার ওপর স্থাপিত হয়। অতঃপর জুমার দিন মদিনা অভিমুখে যাত্রা করেন...।

ইবনে আবি খাইসামা উল্লেখ করেন, ‘রাসুল (সা.) যখন এর ভিত্তি স্থাপন করেন, তখন কেবলার দিকের প্রথম পাথরটি স্বহস্তে স্থাপন করেন। অতঃপর হজরত আবু বকর (রা.) একটি পাথর স্থাপন করেন। তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে আবু বকর (রা.)-এর পাথরের পাশের পাথরটি স্থাপন করেন হজরত উমর (রা.)। এরপর সবাই যৌথভাবে নির্মাণকাজ শুরু করেন।’

নবুওয়ত পাওয়ার পর এটাই প্রথম মসজিদ, এমনকি ইসলামের এবং উম্মতে মোহাম্মদির প্রথম মসজিদ। মসজিদে হারাম, মসজিদে নববি এবং মসজিদে আকসার পরই মসজিদে কুবার সম্মান ও ফজিলত। এ মসজিদের আলোচনা কোরআনে করা হয়েছে এবং মসজিদ সংলগ্ন অধিবাসীদের একটি বিশেষ গুণের প্রশংসা করা হয়েছে।

কুবা মসজিদের জায়গাটি ছিলো- হজরত কুলসুম ইবনুল হিদম (রা.)-এর খেজুর শুকানোর পতিত জমি। তিনি ছিলেন আমর ইবনে আওফের গোত্রপতি। এখানে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ১৪ দিন (কেউ বলেন ১০ দিন) অবস্থান করেন ও তার আতিথ্য গ্রহণ করেন।

পবিত্র কোরআনের সূরা তওবার ১০৮ নম্বর আয়াতে এই মসজিদের কথা উল্লেখ আছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে মসজিদ প্রথম দিন থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার ওপর (মসজিদে কুবা), তাই বেশি হকদার যে, তুমি সেখানে নামাজ কায়েম করতে দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’

মসজিদে কুবা এ পর্যন্ত কয়েক দফা সংস্কার ও পুনর্নিমাণ করা হয়। নবীর আমলের পর ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.) তার খেলাফতকালে মসজিদে কুবার সংস্কার ও পুনর্নিমাণ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আরও বেশ কয়েকবার এই মসজিদের পুনর্নিমাণ ও সংস্কার করা হয়। সবশেষ ১৯৮৬ সালে মসজিদটি পুনর্নিমাণ করা হয়। এই মসজিদ নির্মাণে পুরো মসজিদে এক ধরনের সাদাপাথর ব্যবহার করা হয়, যা অন্যকোনো মসজিদে সাধারণত দেখা যায় না।

চারটি উঁচু মিনার, ছাদে ১টি বড় গম্বুজ এবং ৫টি অপেক্ষাকৃত ছোটো গম্বুজ রয়েছে। এ ছাড়া ছাদের অন্য অংশে রয়েছে গম্বুজের মতো ছোটো ছোটো অনেক অবয়ব। মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসেন। মসজিদে নারী ও পুরুষদের নামাজের জায়গা ও প্রবেশ পথ আলাদা। অজুর জায়গাও ভিন্ন। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদের ভেতরের কারুকাজও বেশ মনোমুগ্ধকর। মূল মসজিদ ভবনের মাঝে একটি খালি জায়গা আছে, সেখানেও নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। দামি কারপেট বিছানো মেঝেতে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন, রয়েছে জমজম পানির ব্যবস্থা।

মসজিদের বাইরে এ মসজিদ সম্পর্কে বর্ণিত পবিত্র কোরআনের আয়াত ও হাদিসের বাণীগুলো সুন্দরভাবে লিখে রাখা হয়েছে।

হজ ও উমরা পালনকারীরা মসজিদে কুবায় যেয়ে ইবাদত-বন্দেগি করেন, ছবি: সংগৃহীত

মদিনায় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ১০ বছর কাটিয়েছেন। এ সময়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) পায়ে হেঁটে অথবা উট কিংবা ঘোড়ায় আরোহন করে কুবা মসজিদে যেতেন। এরপর তিনি সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন।

হাদিসে আছে, প্রতি শনিবারে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কুবায় আগমন করতেন। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

আরেক হাদিসে বর্ণিত আছে, মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় করার সওয়াব একটি উমরার সমপরিমাণ। -তিরমিজি

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিজের ঘরে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (সুন্নত মোতাবেক অজু করে) মসজিদে কুবায় আগমন করে নামাজ আদায় করে তাকে এক উমরার সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে। -ইবনে মাজাহ

হাদিসের এমন বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে নবীর যুগ থেকেই প্রতি শনিবার মসজিদে কুবায় নামাজ আদায়ের জন্য গমন করা মদিনাবাসীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। এখনও তাদের এই আমল অব্যাহত রয়েছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণে কুবা মসজিদে আসা ও দুই রাকাত নামাজ আদায় করা মোস্তাহাব। হজ পালন শেষে মদিনায় অবস্থানরত হাজিরাও মসজিদে কুবায় যেয়ে নামাজ আদায় করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর