মদিনার মসজিদে নববিতে অবস্থিত কোরআন মাজিদ হেফজ ও শিক্ষার ক্লাসে ২০২৪ সালে ৬০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে চার থেকে ৯১ বছর বয়সি নারী-পুরুষ রয়েছেন।
পবিত্র কোরআন শিক্ষার এই আয়োজনে বছরজুড়ে ১ হাজার ৯০০টি সরাসরি এবং ৯০০টি অনলাইন ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে ১৬ ভাষায় ১৬০ দেশের শিক্ষার্থীরা কোরআন শেখার সুযোগ পান। ক্লাসে কোরআন তেলাওয়াত ও মুখস্থ করানোর পাশাপাশি বিভিন্ন সুন্নত আমল, দোয়া-দরুদ ও ইসলামের প্রয়োজনীয় বিষয়াদী শেখানো হয়।
বিজ্ঞাপন
অনলাইনে প্রায় এক হাজারের বেশি শিক্ষক কোরআন শেখানোর কাজে যুক্ত।
অন্যদিকে সরাসরি মসজিদে নববিতে রুটিন করে প্রায় বিশ জন শিক্ষক প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের পবিত্র কোরআনের সহিহ-শুদ্ধ তেলাওয়াত ও মুখস্থ (হেফজ) করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।
ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্রতম এই মসজিদে কোরআনের তেলাওয়াত শেখানোর জন্য আধুনিক নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এই উদ্যোগের লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কাছে এর সুবিধা পৌঁছানো এবং নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে অসমর্থদের সুযোগ প্রদান এবং শেখার জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি মদিনার গভর্নর, যুবরাজ সালমান বিন সুলতান বিন আবদুল আজিজ মসজিদে নববির কোরআন শিক্ষার ক্লাস পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মসজিদে নববির খতিব ও কোরআন শিক্ষা ক্লাসের তত্ত্বাবধায়ক শায়খ আবদুল মহসিন বিন মুহাম্মদ আল কাসিম।
পরিদর্শনকালে মদিনার গভর্নরকে কোরআন শিক্ষার আয়োজন সম্পর্কে অবহিত করা হয়। তিনি এ কর্মসূচির ব্যাপক প্রশংসা করেন।
উল্লেখ্য, মসজিদে নববিতে শিশু-কিশোরদের জন্য আলাদা আলাদা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও হেফজা শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। কোরআন শেখানোর প্রকল্প সম্পূর্ণ একটি ভিন্ন ব্যবস্থা।
হজ ও উমরা সৌদি আরবের ছোট ছোট ব্যবসার জন্য আয়ের অন্যতম উৎস। এসব ব্যবসার মধ্যে রয়েছে থাকার ব্যবস্থা, খাবার, পরিবহন এবং উপহার সামগ্রী বিক্রি। এ ছাড়া পরিবার নিয়ে সৌদি আরবে ভ্রমণের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। দেশটির দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটনবান্ধব করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, ব্যবস্থা করা হচ্ছে পরিবহনের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার।
সৌদি আরবের মক্কা-মদিনায় হোটেল রুম সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হোটেল রুম থাকবে মক্কায়। দেশটির লক্ষ্য, ২০৩০ সাল নাগাদ ৩ কোটি মানুষের জন্য হজ ও উমরা পালনের জন্য সুযোগ তৈরি করা।
এ লক্ষে বেশ কয়েক বছর আগে ‘ভিশন-২০৩০’ ঘোষণা করেছে সৌদি আরব। এর অধীনে নিজেদের অর্থনীতিকে বহুমুখী করতে চাচ্ছে দেশটি। তারই অংশ হিসেবে সৌদি কর্তৃপক্ষ গত কয়েক বছর ধরে পর্যটনশিল্পের ওপর আলোকপাত করেছে এবং সফলও হয়েছে। পর্যটনশিল্পের সঙ্গে উমরাকে নানাভাবে যুক্ত করা হচ্ছে।
২০২৪ সালে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ হজপালন করেছেন। আর ২০২৩ সালে ১৩ কোটি ৫৫ লাখের বেশি মানুষ উমরাপালন করেছেন। ২০২৪ সালের উমরাপালনকারীর সংখ্যা আরও বাড়বে। হজ ও উমরাপালনকারীর মধ্যে সৌদি আরবের বাইরে থেকে আসেন সিংহভাগ মানুষ।
হজ ও উমরাযাত্রী বৃদ্ধির কারণে মক্কা-মদিনায় যে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছে, তা প্রতিবছরই বাড়ছে। হজ ও উমরাকেন্দ্রিক আর্থিক লেনদেন থেকে সৌদি আরব মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করছে।
আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, সৌদি আরব প্রতি বছর হজ ও উমরা খাত থেকে আনুমানিক ১৫ বিলিয়ন ডলার আয় করে। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকৃত আয় আরও অনেক বেশি।
আবার হজের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সৌদি আরবের মোট দেশজ উপাদনের প্রায় ১৫ শতাংশ জোগান দেয়। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে চারটি শহর মক্কা, মদিনা, জেদ্দা ও তায়েফের অর্থনীতি পরিচালিত হয় হজ ও উমরার ওপর।
গালফ নিউজের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, হজকেন্দ্রিক আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ অন্তত পাঁচ হাজার কোটি ডলার। বিজনেস মনিটর ইন্টারন্যাশনালের সমীক্ষা অনুসারে হজের সময় উপহারসামগ্রী ও স্মারক বেচাকেনার পরিমাণ অন্তত ১৭০ কোটি ডলার। এসব সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে টুপি, তসবিহ, জায়নামাজ, স্কার্ফ, বোরকা, হিজাব ইত্যাদি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রগ্রেসিভ পলিসি ইনস্টিটিউটের ‘ট্রেড ফ্যাক্ট অব দ্য উইক’ প্রকাশনায় ২০১৯ সালে বলা হয়েছিল, হজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক অনুষ্ঠান। এতে বলা হয়, চাইলে আরও লাখ লাখ মানুষ এসে যোগ দিতে পারেন। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে হাজিদের সংখ্যা সীমিত রাখা হয়।
অন্যদিকে গার্ডিয়ান পত্রিকা হজকে অভিহিত করেছে মন্দারোধক (রেসেশন প্রুফ) অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে। হজের মৌসুমে শুধু জেদ্দায় বাদশাহ আবদুল আজিজ বিমানবন্দরে যে পরিমাণ ফ্লাইট ওঠা-নামা করে, তা অন্যকোনো বৈশ্বিক অনুষ্ঠানে হয় না। এই বিমানবন্দরের পরিসরও ব্যাপকভাবে বাড়ানো হচ্ছে যেন ২০৩৫ সাল নাগাদ এখানে বছরে আট কোটি যাত্রী ওঠা-নামা করতে পারে। অবশ্য এর মধ্যে অর্ধেকই হজ ও সারাবছরে উমরার জন্য আসা ব্যক্তি হবেন।
মক্কা-মদিনায় হজ ও উমরার জন্যই বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেলের সংখ্যাও বেড়েছে। মক্কার কোনো কোনো বিলাসবহুল হোটেলে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত এত দামি রাজকীয় স্যুট আছে, যার জন্য প্রতি রাতে পাঁচ হাজার ডলার পর্যন্ত ভাড়া গুনতে হয়।
মরক্কো, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, আলজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য প্রভৃতি দেশ থেকে আসা হাজিরা অনেকেই দামি ও বিলাসবহুল হোটেলে থাকেন। অন্যদিকে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশ থেকে হজপালনের জন্য যারা যান, তাদের সিংহভাগই সাধারণ ও মধ্যম মানের হোটেলে থাকেন।
তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তারের কল্যাণে এখন বিভিন্ন দেশের হাজিরা দেশ থেকে মুঠোফোনের সিম কার্ড নিয়ে যান। আবার অনেকে মক্কা-মদিনায় গিয়ে সিম কার্ড সংগ্রহ করেন। এখান থেকেও ভালো ব্যবসা হয়।
আবার লেনদেনের জন্য নগদ অর্থের বদলে ইলেকট্রনিক পদ্ধতি বা কার্ডের ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশ থেকেও অনেক হাজি ভিসা বা মাস্টার ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড নিয়ে যান। কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক হজ প্রিপেইড কার্ড প্রবর্তন করেছে।
আরব নিউজের আরেক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গড়ে প্রতিবছর এক কোটির বেশি হজ ও উমরাযাত্রী সৌদি আরব সফর করেন। হজের পর উমরাযাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মক্কা-মদিনার বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোও প্রাণবন্ত থাকে বছরজুড়ে। মসজিদে হারামের আশেপাশের শপিং মল, বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং দোকানগুলোতে সারাক্ষণ ভিড় লেগেই থাকে।
এ ছাড়া মিসফালা, আজইয়াদ, আল গাজা, আল জিন, আজিজিয়া, কাকিয়া ও নাক্কাসা এলাকায় বিপুল সংখ্যক বিদেশি যাত্রী থাকেন। মসজিদে হারাম এলাকায় ক্লক টাওয়ারে অবস্থিত হোটেল ও মলগুলিতেও প্রচুর দোকান রয়েছে।
আজিজিয়ার সর্বত্রই দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায়। জিসিসিভুক্ত দেশগুলো ছাড়াও বহু আরব দেশ থেকে যাত্রীরা প্রচুর সংখ্যায় উমরা করতে আসেন।
মিসফালার একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্রের ইনচার্জ ফরিদ মুহাম্মদ জানান, বিদেশিরা তাদের প্রিয়জনের জন্য উপহার, কার্পেট, কৃত্রিম অলঙ্কার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনেন। অনেকে জামাকাপড় ও গয়না কিনতেও আগ্রহী।
ফরিদ মুহাম্মদ বলেন, দর্শনার্থীদের আগমনে বাণিজ্যিক কেন্দ্রের মালিকরা খুশি।
সাধারণত উমরা মৌসুম চলে ৯ মাস। এ সময় মক্কায় বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তুঙ্গে থাকে। হজের মৌসুমে দেশটির আর্থিক খাতের বড় একটি অংশ আসে হাজিদের কাছ থেকে। এ ছাড়া বছরব্যাপী উমরাযাত্রীদের থেকে পাওয়া রাজস্বও দেশটির অর্থনীতির অন্যতম বড় খাত।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে, অপরিশোধিত তেল বিক্রি করে সৌদি আরবের যা রাজস্ব আসে, তার থেকেও বেশি অর্থ আসে হজ থেকে। তবে প্রকৃত আয় কত, তার সঠিক হিসাব জানা যায়নি। অনুমান এবং পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করে হজের মোট আয় ধারণা করা হয়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই অর্থের বড় অংশ আসে মূলত ট্যাক্স, পারমিট ফি এবং ট্যারিফ খাত থেকে। পাশাপাশি হোটেল, রিসোর্ট, পরিবহন এবং খাবারের মতো পরিষেবা থেকেও আয় করে থাকে দেশটি।
বর্তমানে সৌদি আরব ও উপসাগরীয় অঞ্চলের ট্রাভেল এজেন্সি, এয়ারলাইনস ও পর্যটন খাতে সম্প্রসারিত হয়েছে বাণিজ্যিক সুবিধা।
আগামী বছর উমরা ও হজযাত্রীর পাশাপাশি সৌদি আরবে পর্যটক সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এ বিশাল সংখ্যক দর্শনার্থীর নিরাপত্তা ও অন্যান্য সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা মোকাবেলার ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
আমাদের আশপাশে এমন বহু মানুষ রয়েছে, যারা বাস্তবেই অতিদরিদ্র, তাদের সাহায্য করা সবার নৈতিক দায়িত্ব। আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির আশায় তাদের পাশে দাঁড়ালে মহান আল্লাহর রহমত পাওয়া যাবে। কিন্তু কিছু মানুষ এমন আছে, যারা বাস্তবে অভাবী নয়, বরং অভাবে ভান করে অর্থ সংগ্রহ করা তাদের পেশা।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যমতে, এই ভিক্ষা বাণিজ্য করে রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। যে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতি মাসে শত শত কোটি টাকার ভিক্ষা বাণিজ্য করা হয়।
কষ্টের বিষয় হলো, অধিক পরিমাণে ভিক্ষা পাওয়ার জন্য অনেকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছায় অঙ্গহানির মাধ্যমে বিকলাঙ্গ হওয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়। আবার অনেকে শিশুদের বিকলাঙ্গ করছে বলেও বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে, যা জঘন্য অপরাধ।
পবিত্র হাদিস শরিফের তথ্যমতে, পরচুলা ব্যবহার, ভ্রু উপড়ে ফেলা কিংবা শরীরে উল্কি অঙ্কনকে অভিসম্পাত করা হয়েছে, সেখানে সরাসরি অঙ্গ কেটে ফেলা যে কত জঘন্য অপরাধ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
অনেকে আবার অঙ্গহানি না করলেও দরিদ্রের বেশ ধারণ করে মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়ায়। অথচ প্রকৃত অভাবি না হয়েও মানুষের কাছে অভাবের কথা বলে বেড়ানো, হাত পাতা জঘন্য অপরাধ। একান্ত বিপদে না পড়ে শুধু সম্পদ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কারো কাছে চাইলে, তা জাহান্নামের আগুন চাওয়ার নামান্তর।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অমুখাপেক্ষী হওয়া সত্ত্বেও সম্পদ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে অন্যের কাছে কিছু চায়, সে অধিক দোজখের আগুন চায়।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৬২৯
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পর্যাপ্ত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষা করে, সে কেয়ামতের দিন তার মুখমণ্ডলে অসংখ্য জখম, নখের আঁচড় ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উপস্থিত হবে। কেউ জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! সম্পদশালী কে? তিনি বললেন, পঞ্চাশ দিরহাম অথবা এ মূল্যের স্বর্ণ (যার আছে)। -সুনানে আবু দাউদ : ১৬২৬
তবে কেউ যদি সত্যিকার অর্থেই বিপদে পড়ে যায়, তার কথা ভিন্ন। নবী কারিম (সা.) এমন লোকদের খুঁজে বের করে সাহায্য করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে সে মিসকিন নয়, যাকে এক লোকমা, দুই লোকমা একটি খেজুর বা দুটি খেজুর দান করা হয়।
সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাহলে মিসকিন কারা? তিনি বলেন, যার কাছে এই পরিমাণ সম্পদ নেই, যা দিয়ে সে নিজের প্রয়োজন মেটাতে পারে আর তার অবস্থা কারো জানা নেই যে তাকে সদকা দেওয়া যেতে পারে, আর না সে লোকের নিকট চেয়ে বেড়ায়। -মুয়াত্তা মালেক : ১৬৫৫
২০ দিনের সফরে বাংলাদেশ আসছেন মুফতি সাইয়্যিদ ফয়সাল নাদীম শাহ। শনিবার (৪ জানুয়ারি) রাত পৌনে এগারোটায় তিনি পাকিস্তান থেকে দুবাই হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছবেন বলে জানা গেছে।
মুফতি ফয়সাল নাদীম রাওয়ালপিন্ডির (পাকিস্তান) মারকাযু নাদীমুল কুরআন মাদরাসার পরিচালক এবং উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব, সুবক্তা ও পাকিস্তানের শীর্ষ আলেম সাইয়্যিদ আবদুল মজিদ নাদীম (রহ.)-এর সুযোগ্য সন্তান।
মুফাসসিরে কোরআন মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ্ আইয়ুবীর আমন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। মারকাযুত তারবিয়াহ বাংলাদেশ (আলমনগর, হেমায়েতপুর, সাভার, ঢাকা) থেকে তার সফর তত্ত্বাবধান করা হবে। সফরের যাবতীয় বিষয়াদী দেখভাল করছেন মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ আরমান ও মাওলানা সালেহ আহমদ আজম।
পাকিস্তানের এই আলেম বাংলাদেশ সফরে ৪ জানুয়ারি বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ৫ জানুয়ারি মারকাযুত তারবিয়াহ বাংলাদেশ, ১০ জানুয়ারি সাভার বলিয়ারপুরের যমযম নূর সিটি জামে মসজিদ, ১১ জানুয়ারি সিলেট জামেয়াতুল খাইর আল ইসলামি, ১২ জানুয়ারি গওহরডাঙ্গা মাদরাসার উলামা মজলিস ও যশোর দারুল আরকাম মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিল, ১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের পটিয়া মাদরাসা, ২১ জানুয়ারি রংপুর জুম্মাপাড়া মাদরাসা ও ২২ জানুয়ারি উত্তরা ১৩ নং সোসাইটির আয়োজনে ওয়াজ মাহফিলসহ ঢাকা, রংপুর, সিলেট, যশোর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন জেলায় ওয়াজ মাহফিল, খতমে বোখারি ও বার্ষিক ইসলামি মহা সম্মেলনে অংশ নেবেন।
মুফতি ফয়সাল নাদীম ইতোমধ্যে দ্বীনী সফরে জাপান, মরিশাস, ফ্রান্স, মৌরিতানিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন।
২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে দুবাই হয়ে পাকিস্তান ফিরে যাবেন তিনি।
মুফতি ফয়সাল নাদীমের বাবা সাইয়্যিদ আবদুল মজিদ নাদীম (রহ.) অনেকবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। তার হৃদয়ছোঁয়া বয়ানের স্মৃতি এখনও ধর্মপ্রাণ মানুষকে আন্দোলিত করে।
প্রতিবছর রোজা রাখতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে কিছু নিয়ম মেনে ডায়াবেটিস রোগীরা সহজে রোজা রাখতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ক্লিনিক্যাল অ্যান্ডোক্রিনোলজিস্ট ও ডায়াবেটোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এসিইডিবি) প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ইসলামধর্ম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। নিয়ম মেনে সব ধরনের ইবাদত পালন করা যায়। নিয়ম মেনে ডায়াবেটিস রোগীও রোজা রাখতে পারবেন। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের জন্য ডায়াবেটিস এমন কোনো বাধা নয়। প্রয়োজন পূর্ব প্রস্তুতি। ডায়াবেটিস রোগীদের রমজানের কমপক্ষে ২-৩ মাস আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রস্তুতি নিতে হবে।
ফরিদ উদ্দিন বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৮০ জন ডায়াবেটিস রোগী রোজা রেখে থাকেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারা বিশ্বের প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগী রোজা রাখেন। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে যারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোজা রাখেন তারা কিছু জটিলতার সম্মুখীন হন। বিশেষ করে রক্তে সুগারের স্বল্পতা (হাইপোগ্লাইসেমিয়া), রক্তে সুগারের আধিক্য (হাইপারগ্লাইসিমিয়া), ডায়াবেটিস কিটোএসিডোসিস, পানি শূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনে ভোগেন।
নিরাপদে ডায়াবেটিস রোগীর রোজা পালনের ব্যাপারে দীর্ঘদিন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ড্রোক্রাইন ডিপার্টমেন্ট সর্বস্তরে জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে আসছে। রমজানের আগে এ হাসপাতালের অ্যান্ড্রোক্রাইনোলজিস্টরা সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। বাংলাদেশের অ্যান্ড্রোক্রাইনোলজিস্টদের প্রাণের সংগঠন ক্লিনিক্যাল অ্যান্ডোক্রিনোলজিস্ট ও ডায়াবেটোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এসিইডিবি) ২০২৩ সালের অক্টোবরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য রজব মাসকে 'ডায়াবেটিস ও রমজান সচেতনতা মাস' হিসেবে ঘোষণা করেছে।
প্রতি বছরের মত এবারও এসিইডিবি দেশব্যাপি উদযাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রজব মাসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ, ডায়াবেটিস রোগীদের প্রশিক্ষণ, মসজিদের খতিবদের সাথে আলোচনা, বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জন-সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সংবাদ সম্মেলন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এসিইডিবি'র কোষাধক্ষ্য প্রফেসর ডা. এ. কে. এম আমিনুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রফেসর ডা. মোরশেদ আহমেদ খান, যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মঈনুল ইসলাম, প্রফেসর ডা. মো. আতিকুল ইসলাম।