হিজরি নববর্ষের রাতে পবিত্র কাবাঘর নতুন গিলাফ দিয়ে মোড়ানো হবে। ১৪৪৬ হিজরির ১ মহররম রাতে সৌদি আরবের মক্কায় মসজিদে হারাম প্রাঙ্গণে গিলাফ পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। ঐতিহ্যবাহী এ কাজে অংশ নেবেন ১৫৯ জন বিশেষজ্ঞ কারিগর। এর আগে বিশেষভাবে বানানো ট্রাকে করে গিলাফটি কাবা চত্বরে আনা হবে।
শনিবার (৬ জুলাই) সৌদি সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
যেহেতু হিজরি নববর্ষের মহররম মাসের সূচনা চাঁদ দেখা সাপেক্ষে নির্ধারিত হয়। শুক্রবার (৫ জুলাই) সৌদি আরবের কোথাও মহররম মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে রোববার (৭ জুলাই) থেকে মহররম মাস গণনা শুরু হবে। এমতাবস্থায় শনিবার (৬ জুন) দিবাগত রাতে পবিত্র কাবাঘরের কিসওয়া বা গিলাফ পরিবর্তনের কাজটি সম্পন্ন হবে।
আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, পবিত্র কাবাঘরের গিলাফ প্রতিবছর পরিবর্তন করা হয়। পুরনো গিলাফ সরিয়ে নতুন গিলাফ পরানো হয়। মূলত এর চারটি কাপড়ের টুকরো থাকে এবং দরজার একটি অংশ থাকে। নতুন কাপড়ের টুকরোগুলো ওপরের দিকে তুলে পুরনো কাপড়ের টুকরোগুলো ধীরে ধীরে নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়।
এর আগে গত ১৮ জুন সৌদি বাদশাহর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাবাঘরের সদ্যঃপ্রয়াত প্রধান রক্ষক শায়খ আবদুল মালিক আল-শায়বির কাছে নতুন গিলাফ হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে প্রধান রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শায়খ আবদুল ওয়াহাব বিন জয়নুল আবেদিন আল-শায়বি।
মূলত ইসলামের প্রথম যুগ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে জিলহজ মাসের ৯ তারিখ আরাফাত দিবসে কাবাঘরের গিলাফ পরিবর্তনের রীতি ছিল। ২০২২ সাল মোতাবেক ১৪৪৪ হিজরি থেকে কাবার গিলাফ পরিবর্তনের সময়সূচিতে পরিবর্তন করে সৌদি সরকার। তখন থেকে হিজরি নববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে মহররমের প্রথম রাতে গিলাফ পরিবর্তন করা হয়।
৬৫৮ বর্গমিটারের গিলাফটি তৈরিতে ৬৭০ কেজি কালো প্রাকৃতিক রেশম ব্যবহার করা হয়। ৪৭টি কাপড়ের টুকরা দিয়ে পুরো গিলাফ সেলাই করা হয়। ১৬ মিটার দৈর্ঘ্যের বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেলাই মেশিনে করা হয় এসব কাজ। কারুকার্যের অনেক কাজ হাতেও করা হয়। কাপড়ের ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটি অংশ একত্রে সেলাই করা হয় এবং তামার রিং দিয়ে গোড়ায় স্থির করা হয়।
২১ ক্যারেটের ১২০ কেজি স্বর্ণ ও ১০০ কেজি রুপার সুতা দিয়ে সেই কাপড়ে লেখা হয় পবিত্র কোরআনের আয়াত ও আল্লাহর গুণবাচক নাম। গিলাফের সব কাজ শেষ করতে ছয় থেকে আট মাস সময় লাগে। সব মিলিয়ে ১৩০০ কেজি ওজনের এই গিলাফ তৈরিতে ব্যয় হয় ২৫ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল বা সাড়ে ছয় মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই গিলাফকে বিশ্বের ব্যয়বহুল কাপড় বলে মনে করা হয়।
মক্কার উম্মুল জাওদ নামক স্থানে অবস্থিত ‘দ্য কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর ম্যানুফ্যাকচারিং দ্য কাবা’স কিসওয়াহ’ নামক একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে কাবাঘরের গিলাফটি তৈরি করা হয়। ১৯২৮ সালে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সৌদের নির্দেশে গিলাফ তৈরির একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। এরপর ২০১৭ সাল থেকে বাদশাহ সালমানের নির্দেশনায় এর নাম দেওয়া হয় ‘দ্য কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর ম্যানুফ্যাকচারিং দ্য কাবা’স কিসওয়া।’