মরুভূমির গোলাপের সৌন্দর্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নকশা করা ভিন্ন ধাঁচে নির্মিত একটি মসজিদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের নজর কেড়েছে।
কাঁচের গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। আগত মুসল্লিদের জুতা সংরক্ষণের জন্য ইলেকট্রনিক ড্রয়ার, কাঁচের দরজা-জানালা, চমৎকার ঝাড়বাতি থেকে শুরু করে সাউন্ড সিস্টেমে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া। চমত্কার ঝাড়বাতি, সূক্ষ্ম খোদাই এবং মনোমুগ্ধকর মোজাইক মসজিদের মহিমাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
রঙিন কাঁচের মেহরাব ও দরজা-জানালায় ক্যালিগ্রাফির নান্দনিক ব্যবহার যে কাউকে মুগ্ধ করে। আলোচিত এই মসজিদের গম্বুজ বিশেষ কংক্রিট এবং কাঁচের কাঠামো ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে। এর ফলে দিনে সূর্যের আলো ব্যবহার এবং রাতে চাঁদ ও তারা দেখা যায় মসজিদের ভেতর থেকে।
এটি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের কিং আবদুল্লাহ ফিনান্সিয়াল ডিস্ট্রিক্ট গ্র্যান্ড মসজিদ। আধুনিক উপকরণ, ঐতিহ্যের মিশ্রণ ও সৌদির মরু-সাহারাময় পরিবেশের মিশেলে তৈরি দর্শনীয় মসজিদটির নির্মাণ কাজ ২০১৭ সালে শেষ হয়।
সৌদি আরবের আর্কিটেক্ট ফার্ম ওমরানিয়ার নকশায় নির্মিত মসজিদটি আকাশচুম্বি ভবনগুলোর মাঝে অন্যরকম সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। ফলে রিয়াদের ওই এলাকার অধিবাসী ও ভ্রমণকারীদের জন্য আধ্যাত্মিক কেন্দে পরিণত হয়েছে মসজিদটি। জ্যামিতিক অনন্য নকশায় নির্মিত মসজিদটি দূর থেকে দেখলে সুবিশাল মরুর বুকে স্ফটিক-স্বচ্ছ ফুলের মতো দেখায়, যেন জমিন ফুঁড়ে বৃহদাকার স্ফটিক-স্থাপনার রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। মসজিদের মূল ভবনের পাশের দুটি মিনার মসজিদের সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
মসজিদের ভেতরের দৃশ্য বেশ মনোমুগ্ধকর। ছাদ ও দেয়ালের সৌন্দর্য বিস্ময়-জাগানিয়া। ভেতরের আলোকোজ্জ্বল পরিসর ও দারুণ ব্যবস্থাপনা মুসল্লিদের ইবাদত-বন্দেগি প্রাণবন্ত করে তোলে। মসজিদটির আয়তন দশ হাজার বর্গমিটার। দুই তলায় ১৪৬৬ জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।
স্বাভাবিক নকশাকৃত মসজিদ থেকে ব্যতিক্রম এই মসজিদ চিত্তাকর্ষণ ও নতুনত্ব উপহার দিয়েছে। ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক উপাদানের এমন সম্মিলন অন্য কোনো মসজিদ-স্থাপত্যে দেখা যায় না। ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক স্থাপত্য পুরস্কারের ধর্মীয় স্থাপনা বিভাগে মসজিদটি স্থান করে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে অবস্থিত অ্যাথেনিয়াম জাদুঘর প্রতিবছর বিশ্বের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি স্থাপনার জন্য এ পুরস্কার দিয়ে থাকে। স্থাপত্যশৈলীর ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের মধ্যে শিকাগোর আন্তর্জাতিক স্থাপত্য পুরস্কার অন্যতম।
মসজিদটি শুধু স্থাপত্যের বিস্ময় নয়, এটা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় একটি দর্শনীয় স্থান। ইসলামি সংস্কৃতি ও ইতিহাসের প্রতীক। পবিত্র স্থানের প্রতি যথাযথ সম্মান নিশ্চিত এবং শালীন পোশাকে যে কেউ মসজিদটি পরিদর্শনে যেতে পারেন।
তবে কেউ কেউ এই মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের সমালোচনা করেছেন। তাদের অভিমত, ইসলামিক দেশগুলোতে বিপুলসংখ্যক অভাবী লোক রয়েছে। মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে এত বেশি অর্থ খরচ না করে তা, এসব মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা যেত।