‘আমি খুব আনন্দিত ও ভাগ্যবান। পবিত্র কাবার ইমামের পেছনে নিজের শহরে জুমার নামাজ আদায়ের সুযোগ পেয়েছি। তাকে কাছে থেকে দেখেছি’- এভাবেই নিজের খুশির কথা বলছিলেন- মেহবুব বুলি আলী। মধ্যবয়সী মেহবুব কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে একটি খাবারের দোকান চালান।
কম্বোডিয়ায় বসবাসরত মুসলমানদের কাছে চলতি বছরের ১৬ আগস্ট (শুক্রবার) তারিখটি স্মরণীয় হয়ে আছে। এদিন নমপেনের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত অন্যতম ইসলামিক কেন্দ্র আল সেরকাল মসজিদ কমপ্লেক্সে দেশের সর্ববৃহৎ জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ওই জামাতে ইমামতি করেন পবিত্র কাবার ইমাম শায়খ ড. বানদার বিন আবদুল আজিজ বালিলা।
বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশির পাশাপাশি নমপেনে বসবাসরত প্রবাসীদের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা এবং পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমান রয়েছেন।
নমপেনে কাবার ইমামের নামাজ পড়ানোকে কেন্দ্র করে আল সেরকাল মসজিদ প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশের এলাকা মুসলমানদের বিশাল মিলনমেলায় পরিণত হয়। প্রায় দেড় হাজার মুসলমান তার পেছনে নামাজ পড়ার সুযোগ পেয়ে বেশ খুশি।
জুমার খুতবায় কাবার ইমাম আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে এটা সবচেয়ে বড় পাপ বলে উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে অমুসলিমদের মাঝে শান্তিপূর্ণভাবে ইসলাম প্রচারের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি মুসলমানদেরকে অন্য ধর্মের প্রতি অসম্মান এড়ানোর কথা বলেন।
এর আগে ১৪ আগস্ট চার দিনের এক সরকারি সফরে কম্বোডিয়া যান মসজিদে হারামের এই ইমাম। নমপেনে তিনি আবু বকর আল-সিদ্দিক ইসলামিক স্কুল পরিদর্শন শেষে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায় এবং ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
আল সেরকাল মসজিদ কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনের প্রধান মসজিদ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল সেরকাল পরিবার কম্বোডিয়ার মুসলমানদের জন্য উপহার হিসেবে নির্মাণ করেন ১৯৬৮ সালে। পরবর্তীতে পুরোনো ভবন ভেঙে ২০১৫ সালে নতুন মসজিদ ভবন নির্মাণ করা হয়। দুবাইভিত্তিক আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ী ইসা বিন নাসের এর অর্থায়ন করেন, মসজিদটি নির্মাণে তিন বছর সময় লাগে। এটি কম্বোডিয়ার ৫২০টি মসজিদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। প্রাসাদসুলভ, সাদা টাইলযুক্ত এই মসজিদে একসঙ্গে দেড় হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
কম্বোডিয়ায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ মুসলমানের বসবাস। ক্ষমতাসীন কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি)-এর সঙ্গে মুসলমানদের সম্পর্ক বেশ ভালো। সরকারে মুসলিম প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।
দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের আমলে মুসলিম মেয়েদের সরকারি বিদ্যালয়ে হিজাব পরার অনুমতির পাশাপাশি হোটেলগুলোতে নামাজের জায়গা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
২০১৩ সালে মক্কার মসজিদে হারামে তারাবির নামাজ পড়ানোর মাধ্যমে (কাবা শরিফে) ইমামতি শুরু করেন শায়খ ড. বানদার বিন আবদুল আজিজ বালিলা। একই বছরে মসজিদে হারামের স্থায়ী ইমাম হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
২০১৯ সাল থেকে তিনি মসজিদে হারাম তথা কাবা শরিফে ইমামতির পাশাপাশি খতিব হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০২০ সালে সৌদি সরকার তাকে সৌদি আরবের সিনিয়র স্কলার কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেন।
পবিত্র কাবা শরিফে ইমামতির পাশাপাশি তিনি তায়েফ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
চমৎকার কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াতের জন্য বিশ্বব্যাপী শায়খ ড. বানদার বালিলার সুনাম রয়েছে। অসাধারণ চেহারা আর বাচনভঙ্গির দরুণ তিনি বেশ জনপ্রিয়। ২০২১ সালের হজে তিনি আরাফাতের ময়দানে খুতবা দেন।