নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। তার জীবন ও আচরণ আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি যেসব খাবার গ্রহণ করতেন, সেগুলো ছিল না শুধু সুস্বাদু বরং স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। তিনি সর্বদা পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতেন এবং সাহাবিদেরও তা করতে উৎসাহিত করতেন।
আলোচ্য নিবন্ধে নবী কারিম (সা.)-এর প্রিয় ৫টি খাবার এবং তার স্বাস্থ্যগত গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হলো-
খেজুর: আরবের মরুভূমিতে খেজুর ছিল প্রধান খাদ্য। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি এবং ফাইবার। এটি শক্তি জোগায়, হজম শক্তি বাড়ায় এবং হাড়কে মজবুত করে।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর নিজে পছন্দ করতেন, সাহাবায়ে কেরামকেও খেজুর খেতে বলতেন। খেজুর খাওয়ার গুরুত্ব বোঝাতে নবীজি এটাও বলেছেন, যে ঘরে খেজুর নেই সে ঘরে খাবার নেই। হাদিসে এসেছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে বাড়িতে খেজুর নেই, সে বাড়ির অধিবাসীরা অভুক্ত। -সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৩১
দুধ: দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ভিটামিন ডি। এটি হাড়কে মজবুত করে, দাঁতের ক্ষয়রোধ করে এবং শরীরকে শক্তিশালী করে। তাই নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত দুধ পান করতেন।
হাদিসে এসেছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মেরাজের রাতে বায়তুল মোকাদ্দাসে আমি দুই রাকাত নামাজ পড়ে বের হলে হজরত জিবরাইল (আ.) আমার সামনে শরাব ও দুধের আলাদা দু’টি পাত্র রাখেন। আমি দুধের পাত্রটি নির্বাচন করি। হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি প্রকৃত ও স্বভাবজাত জিনিস নির্বাচন করেছেন। -সহিহ বোখারি: ৩১৬৪
মধু: মধুতে রয়েছে অসংখ্য ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট। এটি শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেয়, হজম শক্তি বাড়ায় এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। মধু আল্লাহতায়ালার বিশেষ নেয়ামতগুলোর একটি। এতে রয়েছে হাজারও রোগের শেফা।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিষ্টান্ন ও মধু পছন্দ করতেন। -সহিহ বোখারি: ৫১১৫
অন্য এক হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মধু হলো- উত্তম ওষুধ। -সহিহ বোখারি: ৫৩৫৯
কিশমিশ: কিশমিশে রয়েছে আয়রন, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন কে। এটি রক্ত পরিশুদ্ধ করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং হাড়কে মজবুত করে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কিশমিশ ভিজিয়ে রাখা হতো এবং তিনি সেগুলো পান করতেন। -সহিহ মুসলিম: ২০০৪
সারিদ: সারিদ হলো- গোশত, রুটি এবং মশলা দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরনের পুষ্টিকর এক খাবার। এটি শরীরকে প্রচুর শক্তি জোগায় এবং পেশিকে মজবুত করে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে রুটির সারিদ ও হায়সের সারিদ অত্যন্ত প্রিয় ছিল। -সুনানে আবু দাউদ: ৩৭৮৩
নবী কারিম (সা.)-এর খাদ্যাভ্যাস নির্য়ে পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তা বর্তমান বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। আজকের ব্যস্ত জীবনে সুস্থ থাকা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এ সময় তার সুন্নত অনুসরণ করলে আমরা শুধু সুস্থই থাকব না, বরং ইসলামের প্রতি আমাদের আস্থা আরও দৃঢ় হবে।