দেশ পরিচালনার দায়িত্ব কোনো মুসলমানের কাঁধে আরোপিত হলে, তার প্রথম দায়িত্ব ও করণীয় হলো- সংবিধানে ইসলামকে মূল হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা। দেশের সামগ্রিক অর্থব্যবস্থাকে ইসলামের আলোকে গড়ে তোলা।
আপনি যে মন্ত্রণালয়েই কাজ করুন, যে বিভাগেরই উপদেষ্টা হোন- ইসলামের দৃষ্টিতে এসব দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে উদার ধারণাও সমর্থিত নয়। রাষ্ট্রের পরিচয় নির্ণিত হবে কেবল ভৌগোলিক সীমানা দিয়ে। তবে জাতির পরিচয় তৈরি হবে বৃহৎ কল্যাণ ও জনস্বার্থকে সামনে রেখে ঈমান ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে। ইসলাম সবসময় আদর্শ শাসক ও বিজয়ী দ্বীন। এর আলোকেই রাষ্ট্র বিনির্মাণ নিশ্চিত করতে হবে।
হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। রাষ্ট্র হবে ধর্মভিত্তিক, ইসলামভিত্তিক। এখানে কোনো ধরনের ‘ফোবিয়া’ নেই। ইসলামই একমাত্র দ্বীন, যাতে আল্লাহতায়ালা ও বান্দার উভয়ের হক আদায়ের সুষ্ঠু নির্দেশ ও শিক্ষা দেওয়া আছে।
ইসলামই একমাত্র দ্বীন, যা বৃহৎ পরিসরে অত্যন্ত ভারসাম্যতার সঙ্গে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম। ইসলাম সবসময় অসাম্প্রদায়িক। তবে কখনই ধর্মনিরপেক্ষ নয়। কোনো অর্থ ও ব্যাখ্যাতেই নয়। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র কাঠামো ইসলাম স্বীকার করে না। এমন ধারণা কারো থাকলে তার ঈমান নিয়ে সংশয় তৈরি হবে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশ গঠন ও সংস্কারে নানা কমিটি-কমিশন গঠন করেছে। যা বাহ্যত ভালো উদ্যোগ। যেমন, জাতীয় পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন বিষয়ক বিশেষ কমিটি, ব্যাংকিং খাত সংস্কারের লক্ষ্যে টাস্কফোর্স, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি বিষয়ক পরামর্শ দেওয়ার জন্য শ্বেতপত্র কমিটি গঠনসহ সংবিধান সংস্কারেও কমিশন গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিশনগুলোতে সংস্কারমূলক নানা প্রস্তাবনা ও রূপরেখা দেওয়া হবে।
এসব জায়গায় ইসলামি ভাব ও বিশ্বাস প্রবল হতে হবে। সেটি কি হচ্ছে? না হচ্ছে না।
প্রতিটি কমিটি গঠনে দেশের প্রধান ধর্ম- ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থ আগে যেমন রক্ষা হতো না, এখনও হচ্ছে না। পাঠ্যপুস্তক কমিটিতে ইসলামবিরোধী কোনো বিষয় যেন না থাকে, তা নিশ্চিত করতে সেখানে ইসলাম ধর্মের বিশেষ প্রতিনিধি অনুপস্থিত।
ব্যাংকিং খাতের প্রায় ৩০ শতাংশ ইসলামি ব্যাংকিং সেক্টরের। এই বৃহৎ খাতে বিশেষ শরিয়াহ বিষয়ক উন্নয়ন করতে এখানেও ইসলামি ব্যাংকিং সেক্টরের বিশেষ প্রতিনিধি অনুপস্থিত।
দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়নে ইসলামি ফাইন্যান্স, ইসলামি ফিসক্যাল পলিসি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেখানেও ইসলামি অর্থনীতি জানেন এমন কোনো প্রতিনিধি নেই। জাকাত, হালাল ফুড, ট্যুরিজম ইত্যাদি নানা ইস্যু রয়েছে- যেখানে ইসলামি অর্থনীতির প্রতিনিধি বিজ্ঞ আলেম থাকা জরুরি ছিল। তাও অনুপস্থিত।
আমরা নিজেরা ছোট ছোট ইস্যুতে এতো বেশি ব্যস্ত যে, এসব বিষয় নিয়ে ভাবার সময় নেই। এই সুযোগে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বামরা তাদের কাজ ঠিকই করে যাচ্ছে। রক্ত ঝরে মুসলিমদের আর ফসল ঘরে তুলে ইসলামবিরোধীরা কিংবা বামরা।
সময় হয়েছে জেগে ওঠার। সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তাবনা ও রূপরেখা প্রদানের নিমিত্তে গঠিত প্রতিটি কমিটিতে বিজ্ঞ আলেমদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার।
ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষায় সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনের পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়ে স্বতন্ত্র শরিয়াহ সচিব পদ সৃষ্টি করতে হবে। তিনি রাষ্ট্রকে অর্থনীতি বিষয়ে ইসলামের আলোকে পরামর্শ প্রদান করবেন। জাতীয়ভাবে সুদকে বর্জন করতে হবে। আর্থিক সব সেক্টর ইসলামি অর্থনীতির আলোকে ঢেলে সাজাতে হবে।
আবেগ নয়, চ্যালেঞ্জ করছি। দায়িত্ব দিয়ে দেখুন, সক্ষমতা রাখি- ইনশাআল্লাহ। আধুনিক অর্থনীতিতে ইসলামের অর্থনীতির যৌক্তিকতা তুলে ধরতে। সব সেক্টরকে ধীরে ধীরে ইসলামের কালজয়ী অর্থনীতির আলোকে বিনির্মাণ করে দিতে।
মানিটারি পলিসি কিভাবে ইসলামি মানিটারি পলিসিতে রূপান্তর করতে হয়, ফিসক্যাল পলিসি কিভাবে ইসলামি পলিসিতে রূপান্তর করতে হয়, বরোয়িং পলিসি কিভাবে ইসলামি করতে হয়, ব্যাংকিং কাঠামো কিভাবে ইসলামি হবে- সবই আমরা করে দিতে পারবো- ইনশাআল্লাহ।
নমনীয় আবদার নয়। চ্যালেঞ্জ করছি, সুযোগ দিয়ে দেখুন। একটি ভালো অর্থনীতি উপহার দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে আমাদের। যে শিক্ষানীতি নিয়ে পড়ে আছেন, সুযোগ দিয়ে দেখুন- আদর্শ কারিকুলাম ও সিলেবাস তৈরি করতে দিতে সক্ষমতা রাখি। এসব করতে পাশ্চাত্য চিন্তাধারা থেকে কোনো কিছু ধার করতে হবে না, ইসলাম নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ।
আমরা চাই, বিনির্মিত হোক ঈমান ও ইসলামভিত্তিক জাতিসত্ত্বা। গড়ে উঠুক ইসলামভিত্তিক সংবিধান। সামগ্রিক কল্যাণ ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার এটিই একমাত্র পথ ও সমাধান।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, আইএফএ কনসালটেন্সি।