নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় ও বন্ধুত্বের মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরার এক অসাধারণ সুযোগ তৈরি হয়, বিশেষত যখন মুসলিমরা তাদের অমুসলিম বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
ইসলাম একটি শান্তিপূর্ণ ধর্ম, যা মানবজাতির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রচার করে। তাই মুসলিমরা নতুন বছরের শুরুতে অমুসলিমদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারেন, তবে এটি ইসলামের নীতির মধ্যে থেকে।
যেমন- ‘আপনার নতুন বছর শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরপুর হোক’, ‘আল্লাহ আপনার জীবনকে শান্তিতে পূর্ণ করুন’ এমন শুভেচ্ছা প্রদানের মাধ্যমে মুসলিমরা শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।
ইসলামের মূল শিক্ষা হলো- মানুষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি ও ভালোবাসা থাকা, তাই মুসলিমরা তাদের ধর্মের মূল চরিত্র অনুযায়ী অমুসলিমদের কাছে নিজের আচরণ ও কথার মাধ্যমে ইসলামের সত্যিকারের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পারেন।
ইসলামে পরস্পরের প্রতি সাহায্য, সহানুভূতি, দয়া ও অন্যদের কল্যাণ কামনা করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব আদর্শই মুসলিমরা তাদের অমুসলিম বন্ধুদের কাছে তুলে ধরতে পারেন। বন্ধুত্বের মাধ্যমে তারা অমুসলিমদের কাছে ইসলামের মানবিক দিক ও শান্তিপূর্ণ বার্তা পৌঁছাতে পারেন, যা ধর্মীয় বিভাজন ছাড়াই সকল মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করবে।
ইসলামের শিক্ষা হলো- পরস্পরের মধ্যে শান্তি ও শ্রদ্ধার পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং মুসলিমরা যদি তাদের ব্যক্তিগত জীবন, আচরণ এবং কথাবার্তার মাধ্যমে এই মূল্যবোধগুলো তুলে ধরতে পারেন, তাহলে তারা সত্যিকার অর্থে ইসলামের সৌন্দর্য অন্যদের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হবেন।
ইসলামি স্কলাররা নতুন বছর উদযাপনের ধরন ও পদ্ধতি নিয়ে আপত্তির জায়গাগুলো বারবার বলে আসছেন। আমাদের উচিৎ সেগুলো মেনে চলা।
আলেমরা বলেন, নতুন বছর উদযাপনে আতশবাজি ও পটকাবাজি আজকাল বহুল প্রচলিত। এটি দেখতে যত আকর্ষণীয়ই হোক না কেন, এর ফলে শহরের বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ এবং বাসিন্দাদের আরামের বিঘ্ন ঘটে। রাতের শান্তি ভেঙে যায় এবং অনেক সময় গুরুতর দুর্ঘটনারও সূত্রপাত হয়। শহরগুলোতে এরকম কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যে পরিবেশগত এবং সামাজিক ক্ষতি হয়, তা উদযাপনের আনন্দকে ছাপিয়ে যায়। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
নববর্ষ উদযাপনের সময় অনেক তরুণ-তরুণীর মধ্যে উচ্ছৃঙ্খলতা এতটাই মাত্রা ছাড়িয়ে যায় যে, তা সমাজের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। নারী নির্যাতন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
নতুন বছরের উদযাপনে অনেক সময় অশ্লীলতা, মদ্যপান এবং ব্যভিচারের মতো কর্মকাণ্ড সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এগুলো সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ইঙ্গিত দেয়। এ ধরনের উদযাপন তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি ভুল বার্তা বহন করে এবং তাদের মধ্যে অনুকরণ প্রবণতা তৈরি করে।
বাঙালি সংস্কৃতিতে উৎসব-পার্বণ সবসময়ই সামাজিক সংহতি ও ইতিবাচক আবেগের প্রতীক। আমাদের উচিত এমন একটি উদযাপন আয়োজন করা যা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। শালীনতা, সামাজিক সংহতি এবং ইতিবাচক মূল্যবোধের ভিত্তিতে উদযাপনগুলোকে পরিচালনা করা।
বিশেষ করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। সেই সঙ্গে অপসংস্কৃতি বর্জন এবং সুস্থ সংস্কৃতি গ্রহণে সমাজে সচেতনতা তৈরি করা। পরিবারে সন্তানদের মাঝে নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ জাগ্রত করা।
মনে রাখতে হবে, নতুন বছর উদযাপন আনন্দের মাধ্যম হলেও তা কখনোই সমাজের শান্তি ও নৈতিকতার ক্ষতি করে হওয়া উচিত নয়। উৎসবের নামে অশ্লীলতা ও উচ্ছৃঙ্খলতার বিপরীতে আমাদের সংস্কৃতিকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। এই দায়িত্ব আমাদের সবার, যাতে নতুন বছরের উদযাপন সত্যিকারের আনন্দ এবং শৃঙ্খলার প্রতীক হয়ে ওঠে।