শারীরিক, মানসিক ও চারিত্রিক পবিত্রতা অনেকটাই নির্ভর করে বিয়ের ওপর। নিখুঁত ইবাদতের জন্য এসব পবিত্রতা একান্ত প্রয়োজন।
বিয়ের উপকারিতা ও বিয়ের বিকল্প দুটিই হাদিসে বলে দেওয়া হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বলেছেন, ‘হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কারণ বিয়ে দৃষ্টিকে অবনমিত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। আর যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে না সে যেন রোজা পালন করে। কারণ রোজা যৌন প্রবৃত্তি নিবৃত করে।’ -সহিহ বোখারি : ৫০৫৬
ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে কেবল একটি উৎসাহিত বিষয়ই নয়, বরং নবী-রাসুলদের সুন্নত। হজরত ইয়াহইয়া (আ.) ও হজরত ঈসা (আ.) ছাড়া সব নবী-রাসুল বিয়ে করেছেন।
হজরত আবু আইয়ুব (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘চারটি জিনিস নবী-রাসুলদের সুন্নত। লজ্জাবোধ, সুগন্ধি ব্যবহার, মেসওয়াক ও বিয়ে।’ -জামে তিরমিজি : ১০৮০
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বিয়ে আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নতের ওপর আমল করে না সে আমার দলভুক্ত নয়।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৮৪৬
বিয়ে মহান আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার মাধ্যম। এর জন্য প্রয়োজন আল্লাহর ওপর ভরসা এবং নিজের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার সদিচ্ছা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে যে ছেলেদের স্ত্রী নেই এবং যে মেয়েদের স্বামী নেই, তাদের এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদের বিয়ে দিয়ে দাও। যদি তারা অভাবগ্রস্ত থাকে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের ধনী করে দেবেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ।’ -সুরা নূর : ৩২
বিয়ে একটি পারিবারিক বন্ধন। পারিবারিক মূল্যবোধের জায়গা থেকে পরিবারের সদস্যদের অভিমত ও বংশীয় মর্যাদা পারিবারিক বন্ধনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। পারিবারিকভাবে বিয়ে হলে উভয়েরই দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি থাকে। উভয় পরিবারের সহযোগিতা ও আন্তরিকতায় বিয়ে টেকসই ও স্থায়ী হয়। পক্ষান্তরে অভিভাবকদের অজান্তে বা অসম্মতিতে বিয়ে করা হলে পরিবারের সহযোগিতা ও আন্তরিকতা না থাকার ফলে যৌবনের উন্মাদনা কেটে গেলে সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হতে দেখা যায়। কাজেই পারিবারিক সম্মতি ছাড়া বিয়েশাদি একেবারেই অনুচিত।
হজরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অভিভাবক ছাড়া বিয়ে সংঘটিত হয় না।’ -জামে তিরমিজি : ১১০১
মানুষের কাছে বিয়ের বার্তা পৌঁছানো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বিয়ের বার্তা সমাজের মানুষকে জানানো আবশ্যকীয় কর্তব্য। মানুষ যেন তাদের সম্পর্কে স্বচ্ছ সুন্দর ধারণা রাখে। তাদের জন্য বরকতের দোয়া করে। বিয়েতে সামর্থ্যবান তরুণরা উদ্বুদ্ধ হয়। অভিভাবক সচেতন হয়ে সন্তানের নির্মল ভবিষ্যতে সজাগ হয়।
মুহাম্মাদ ইবনে জুমাহি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হারাম (ব্যভিচার) ও হালালের (বিয়ে) মধ্যে পার্থক্য হলো ঘোষণা ও দফ ব্যবহার।’ -জামে তিরমিজি : ১০৮৮
দফ হলো- যার এক পাশ খোলা। বাজালে ঢ্যাব ঢ্যাব শব্দ হয়। জানান দেওয়ার জন্য এটি বাজানো হয়। এটি কোনো বাদ্যযন্ত্রের পর্যায়ে পড়ে না। ‘আওনুল বারী’ গ্রন্থে বলা হয়েছে- এর আওয়াজ স্পষ্ট ও চিকন নয় এবং সুরেলা ও আনন্দদায়কও নয়। কোনো দফের আওয়াজ যদি চিকন ও আকর্ষণীয় হয় তা আর দফ থাকবে না; বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হবে। -আওনুল বারী : ২/৩৫৭
সুন্নাহ পালন, পাপ থেকে বেঁচে থাকা এবং চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার্থে বিয়ে অন্যতম ইবাদত হিসেবে পরিগণিত। সে ক্ষেত্রে সামর্থ্যবানদের জন্য পারিবারিকভাবে সুন্নাহমাফিক বিয়ের আয়োজন জীবনের প্রশান্তি নিশ্চিত করতে পারে, অন্যথায় রোজা পালনের মাধ্যমে সংযত জীবন যাপন করে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে করার চেষ্টা ও দোয়া অব্যাহত রাখতে হবে।