প্যাকেজ ঘোষণার পরও হজ নিবন্ধনে তেমন সাড়া নেই। মন্ত্রণালয় হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর চূড়ান্ত নিবন্ধনের জন্য তাড়া দিলেও বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো অনেকটা গুটিয়ে রয়েছে। হাবের নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের প্রভাব পড়ছে হজ নিবন্ধনেও। এই সময়ে এজেন্সিদের হজ নিবন্ধনে সময় পার করার কথা থাকলেও তাদের সময় ব্যয় করতে হচ্ছে নেতৃত্ব ধরে রাখার পেছনে।
সোমবার (৪ নভেম্বের) সন্ধ্যা পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন মাত্র ১০ হাজার ১৫৩ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধিত হজযাত্রী ২ হাজার ৮৭০ জন ও বেসরকারি মাধ্যমে ৭ হাজার ২৮৩ জন।
এদিকে সোমবার (৪ নভেম্বর) ২০২৫ সালের হজ প্যাকেজের আলোকে চূড়ান্ত নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগ। বিজ্ঞপ্তিতে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে হজের জন্য চূড়ান্ত নিবন্ধনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে হজের সব ধরনের লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে হজপালনের সুযোগ পাবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গাইডসহ ১ লাখ ১৭ হাজার জন হজে যাবেন।
হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশের (হাব) কর্তৃত্ব দখলে হজ এজেন্সির সাধারণ সদস্যদের দু’টি গ্রুপ মাঠে নেমেছে। বিগত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী হাসিনার পতনের পর হাবে সাবেক সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম ও আরও একজন সদস্য হাব থেকে পদত্যাগ করেন। পরে বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সির মালিকবৃন্দের আহবায়ক মো. আখতার উজ্জামান ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলীসহ অন্যান্য হাব সদস্যরা হাবের কমিটির বিরুদ্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নানা অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপন করেন।
ফলে গত ১৫ অক্টোবর চলমান অস্থিরতা ও অসন্তোষ দূরীকরণের লক্ষ্যে সরকার হাবের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিলপূর্বক হাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ দাউদুল ইসলামকে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে। সরকার আগামী ১২০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে হাবের নির্বাচিত কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাবে প্রশাসক নিয়োগে বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সির মালিকবৃন্দ সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে। অন্যদিকে ‘সাধারণ হজ এজেন্সির মালিকবৃন্দ’-এর ব্যানারে আরেক গ্রুপ মানববন্ধন করে হাবে প্রশাসক নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়েছে। এর বিপরীতে হাবের সাবেক কমিটির নেতৃবৃন্দ হাবে প্রশাসক নিয়োগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় চরম বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট এবং দীর্ঘ শুনানিও হয়েছে। হজ এজেন্সিগুলোর সদস্যদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হওয়ায় সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে অধিকাংশ হজ এজেন্সিগুলোর মাঝে চরম উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। এর প্রভাব দেখা দিয়েছে হজ নিবন্ধনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন হজ এজেন্সির মালিক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘হাবে প্রশাসক থাকলে হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেব। সরকারও বিব্রত অবস্থায় পড়বে এবং হজযাত্রীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
এবার হজ প্যাকেজে যা যা থাকবে
ইতোমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ এর মূল্য ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা এবং অন্যটির মূল্য ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ মসজিদে হারাম থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মসজিদে নববি হতে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মসজিদে হারামে যাতায়াতের জন্য থাকবে বাসের ব্যবস্থা। এই প্যাকেজে মিনায় তাঁবুর অবস্থান হবে সবুজ জোনে (জোন-৫, পাথর নিক্ষেপের জায়গা থেকে পৌনে ৫ কিলোমিটার দূরে) এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিস পাওয়া যাবে।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ মক্কায় মসজিদে হারাম থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মার্কাজিয়া এলাকায় আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এই প্যাকেজটিতে মিনায় তাঁবুর অবস্থান হবে হলুদ জোনে (জোন-২, পাথর নিক্ষেপের জায়গা থেকে সোয়া দুই কিলোমিটার দূরে) এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিস পাওয়া যাবে।
উভয় প্যাকেজের হজযাত্রীরা মক্কার হোটেল কিংবা বাড়ি থেকে বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা-মিনা ট্রেনে যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া, মিনা এবং আরাফায় মোয়াল্লেম খাবার পরিবেশন করবে। দুটি প্যাকেজেই মক্কা ও মদিনায় বাড়ি বা হোটেলে এটাচড বাথরুমসহ প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৬ জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। হোটেলে থাকবে রেফ্রিজারেটরের ব্যবস্থা। এছাড়া হজযাত্রীদের মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে।
প্যাকেজের বাইরে প্রত্যেক হজযাত্রীকে খাবার বাবদ ন্যূনতম ৪০ হাজার টাকার সমপরিমাণ সৌদি রিয়াল এবং কোরবানি বাবদ ৭৫০ সৌদি রিয়াল আবশ্যিকভাবে সঙ্গে নিতে হবে। এ ছাড়া, অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করে মক্কা ও মদিনার বাড়ি বা হোটেলে ২, ৩ ও ৪ সিটের রুম এবং শর্ট প্যাকেজের সুবিধা গ্রহণ করা যাবে।
হজের লেনদেন ব্যাংকে করার আহ্বান
হজের যাবতীয় লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করার আহ্বান জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিবন্ধনের জন্য সরকারি মাধ্যমের প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রী ভাউচার তৈরি করে প্যাকেজ মূল্যের অর্থ সোনালী ব্যাংকে জমা দিয়ে নিবন্ধন সনদ গ্রহণ করবেন। প্যাকেজ নির্বাচন করে চূড়ান্ত নিবন্ধনের টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবে। নিবন্ধনের পর আর প্যাকেজ পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে না। তাই বাড়ি বা হোটেলে ২, ৩ বা ৪ সিটের রুম ও শর্ট প্যাকেজে যাতায়াতের সিদ্ধান্ত আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। হজযাত্রীরা এয়ারলাইন্সের ইকোনোমি ক্লাসে গমনাগমন করবেন।
নিবন্ধনের পর হজে না গেলে ব্যয়িত অর্থ কর্তনের পর অবশিষ্ট অর্থ ফেরত প্রদান করা হবে এবং হজের খরচ কোনো কারণে বৃদ্ধি পেলে তা প্যাকেজ মূল্য হিসেবে গণ্য হবে এবং হজযাত্রীকে পরিশোধ করতে হবে। সৌদি আরবে হুইল চেয়ার ব্যবহারের প্রয়োজন হলে নিজ উদ্যোগে হুইল চেয়ার সংগ্রহ ও ব্যবহার করতে হবে।
বেসরকারি মাধ্যমে হজযাত্রী নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সরকার অনুমোদিত ‘সাধারণ হজ প্যাকেজ’ গ্রহণপূর্বক উন্নতমানের হোটেল, মিনা-আরাফায় উন্নত জোন ও সার্ভিস গ্রহণের ভিত্তিতে এজেন্সি সর্বোচ্চ ১টি বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে।
প্যাকেজ মূল্য ও প্রতিশ্রুত সেবার বিস্তারিত উল্লেখপূর্বক হজ এজেন্সি-হজযাত্রীর সঙ্গে লিখিত চুক্তি করতে হবে। হজে যাওয়ার জন্য প্রতিনিধির পরিবর্তে এজেন্সির মালিকের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা এবং হজের টাকা নগদ জমা না দিয়ে হজ কার্যক্রমে এজেন্সির নির্ধারিত ‘ব্যাংক হিসাবে’ জমা দিতে হবে।