পাপের প্রতি মানুষের আকর্ষণ স্বভাবজাত। শয়তানের ধোঁকা, কুপ্রবৃত্তির প্ররোচনা, পরিবেশের তাড়না, মানুষকে বিভিন্ন গুনাহর কাজে জড়িয়ে ফেলে। মানুষের এই পাপপ্রবণতার বিষয়ে এক হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জাহান্নামকে ঘিরে রাখা হয়েছে আকর্ষণীয় কাজকর্ম দিয়ে আর জান্নাতকে ঘিরে রাখা হয়েছে নিরস কাজকর্ম দিয়ে।’ -সহিহ বোখারি : ২৪৫৫
ইসলামের দৃষ্টিতে এমন কয়েকটি বড় পাপ আছে, যেগুলো আরো বহু পাপের বিস্তার ঘটায়। এখানে এমন কয়েকটি বড় পাপ নিয়ে আলোচনা করা হলো-
মিথ্যা : মিথ্যা বহু পাপের জনক। কথাবার্তা, কাজকর্ম, চাকরি-বাকরি ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে এবং সব শ্রেণি-পেশা মানুষের মধ্যে মিথ্যার সয়লাব চলছে। আজকাল মিথ্যা বলা যেন একটি ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর মিথ্যা সব গুনাহর মূল।
দেখা যায়, যে ব্যক্তি মিথ্যায় অভ্যস্ত, সে বহু পাপের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। মিথ্যাবাদীর শাস্তি সম্পর্কে কোরআনে কারিমে এসেছে, ‘তাদের অন্তরে আছে একটি রোগ, যে রোগ আল্লাহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তারা যে মিথ্যা বলে তার বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ -সুরা আল বাকারা : ১০
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন বান্দা মিথ্যা বলে, তখন (ফেরেশতা) মিথ্যার দুর্গন্ধে এক মাইল দূরে চলে যান।’ -জামে তিরমিজি : ১৯৭২
কুদৃষ্টি : চোখের আলো বা দৃষ্টিশক্তি আল্লাহর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ আমানত ও অপার নেয়ামত। এই নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় হলো- নিষিদ্ধ বস্তু থেকে দৃষ্টি হেফাজত করা। কুদৃষ্টি পাপের বিস্তার ঘটায়। কুদৃষ্টি থেকে জিনা-ব্যভিচার ও ধর্ষণের মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে।
কুদৃষ্টির ভয়াবহতা সম্পর্কে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এক হাদিসে বলেছেন, ‘চোখের জিনা ও ধর্ষণ হলো হারাম দৃষ্টি।’ -সহিহ বোখারি : ৬৬১২
অহংকার : অহংকার বহু পাপের মূল। অহংকার থেকে হিংসা-ঘৃণা, প্রতিশোধপরায়ণতা প্রভৃতি পাপের পথ প্রশস্ত হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে অহংকার মারাত্মক আত্মিক ব্যাধি। অহংকারের জন্য ইহকাল ও পরকালে ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে, কেয়ামতের দিন তুমি তাদের চেহারাগুলো কালো দেখতে পাবে। অহংকারীদের বাসস্থান জাহান্নামের মধ্যে নয় কি?’ -সুরা জুমার : ৬০
নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘যার অন্তরে সামান্য পরিমাণ অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ -কানজুল উম্মাল : ৭৭৭১
অতিরিক্ত রাগ : অতিরিক্ত রাগ বহু পাপের জন্ম দেয়। রাগ থেকে জিদ, হিংসা, প্রতিশোধপরায়ণতা ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটে। ইসলাম মানুষকে অপ্রয়োজনীয় ও মাত্রাতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা উভয় অবস্থায় ব্যয় করে, যারা রাগ করা সত্ত্বেও দোষত্রুটি ক্ষমা করে দেয়; এ ধরনের লোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন।’ -সুরা আলে ইমরান : ১৩৪
নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘ওই ব্যক্তি বীরপুরুষ নয়, যে অন্যকে ধরাশায়ী করে; বরং সে-ই প্রকৃত বীর, যে রাগের সময় নিজেকে সংযত রাখতে পারে।’ -সহিহ বোখারি : ৬১১৪