পবিত্র হজের সময় মক্কায় হজযাত্রীদের সেবায় বিভিন্ন দেশের স্বেচ্ছাসেবী কমিউনিটি কাজ করলেও বাংলাদেশি এমন কোনো কমিউনিটি গড়ে উঠেনি। অথচ বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি মক্কায় বসবাস করেন। বাংলাদেশ হজ মিশন কমিউনিটি নেতাদের মাধ্যমে এমন উদ্যোগ নিলেও সেটা আলোর মুখ দেখেনি।
জানা গেছে, ভারত ও পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও হজযাত্রীদের জন্য মক্কায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের জন্য ২০১৭ ও ২০১৮ সালে উদ্যোগ নেয়; কিন্তু তাতে কোনো সাড়া মেলেনি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ দূতাবাস, রিয়াদ এবং জেদ্দা কনসুলেট স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের আবেদন জানায়। কিন্তু সেবার মাত্র দরখাস্ত পাওয়া যায় ২৬টি। এর কারণ হলো, সৌদি আরবের নিয়ম অনুযায়ী কোনো দেশের ভলান্টিয়ারকে হজের অনুমতি দেওয়া হয় না, তাই আর কেউ স্বেচ্ছাসেবক হতে রাজি হয়নি।
মক্কায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হজগাইডরা হাজিদের হজপালনের ব্যাপারে সহযোগিতা করেন; কিন্তু হারিয়ে যাওয়া হজযাত্রীদের পথ দেখানো এবং অসুস্থ হাজিদের সেবাসহ হজের দিনগুলোতে হজযাত্রীদের সেবার জন্য ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা স্বেচ্ছায় বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে আসছেন। সৌদি আরবে প্রবাসীদের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয় বা চতুর্থ অবস্থানে। মক্কা, মদিনা, জেদ্দা, রিয়াদসহ সৌদি আরবে বাংলাদেশি কমিউনিটি রয়েছে। কমিউনিটির মাধ্যমে এই স্বেচ্ছাসেবার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কমিউনিটি অন্যান্য দেশের মতো এমন ফ্রন্ট খুলতে পারেনি। এটা একটা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, কিন্তু কমিউনিটি নেতারা বিভিন্ন ভাগে ও দলে বিভক্ত থাকায় সম্মিলিতভাবে কাজটি করা হয়ে উঠেনি।
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, উল্টো অনেক বাংলাদেশি হাজিদের নিয়ে কীভাবে ব্যবসা করবে; সেই চিন্তায় বিভোর থাকে।
জানা গেছে, ভারতীয় হাজিদের জন্য পুরো সৌদি আরবে প্রায় ৫ হাজার প্রবাসী ভারতীয় স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে থাকেন। ইন্ডিয়া ফ্যাটেনারি ফোরামের (আইএফএফ) ব্যানারে ভারতীয় প্রবাসীরা প্রায় ১২ বছর আগে এই বিনাপারিশ্রমিক সেবাকার্যক্রম শুরু করেন।
এ দিকে পাকিস্তান হজ ভলান্টিয়ারস গ্রুপের (পিইভিজি) ব্যানারে ২০১১ সালে ৮৫ জন নিয়ে হাজিদের স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রম শুরু করে। সংগঠনটির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, সৌদি আরবে দেশটির দূতাবাস, হজ মিশনের সহায়তায় পুরো সৌদি আরব থেকে এই স্বেচ্ছাসেবকদের সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতিবার বিপুল সংখ্যক প্রবাসী পাকিস্তানি দেশটির হজযাত্রীদের মক্কায় সেবা দিয়ে থাকেন। ১৬ বছরের ওপরে যেকোনো প্রবাসী নাগরিক পিইভিজির সদস্য হয়ে হজযাত্রীদের সেবার জন্য তালিকাভুক্ত হতে পারেন।
হজের মূল কাজ সম্পন্ন হয় মক্কার কয়েকটি স্থানে। সেখানেও দেখা গেছে, হুইল চেয়ার, গাড়ি ও খাবার নিয়ে বিভিন্ন দেশের স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। বাংলাদেশি হজযাত্রীদের মধ্যে গ্রামাঞ্চলের হজযাত্রী এবং তুলনামূলক বয়স্ক হজযাত্রী বেশি। ফলে হজের দিনগুলোতে বিশেষ করে মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতের ময়দানে অবস্থানসহ হজের কার্যক্রম সম্পাদনের সময় বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়েন। এ জন্য হজযাত্রীদের সেবায় অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবক দল দরকার। যারা নিরলসভাবে হাজিদের জন্য কাজ করবেন, আর তাদের যাবতীয় সহায়তা দেবে বাংলাদেশ হজ মিশন।
বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকে হজপালনের পাশাপাশি স্বেচ্ছাশ্রম দিতে আগ্রহী হন; কিন্তু সৌদি সরকারের নিয়ম অনুযায়ী স্বেচ্ছাসেবকদের হজপালনের অনুমতি নেই। হজপালন করা যাবে না জেনে পরে আর কেউ স্বেচ্ছাসেবক হতে আগ্রহ দেখান না। তার পরও দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কেউ উদ্যোগ নিলে কাজটি শুরু করা সম্ভব হবে। এ জন্য দরকার একটি উদ্যোগ।