নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের এক সপ্তাহ পূরণ হবে কাল শুক্রবার (২২ মার্চ)। ভয়াবহ এ সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অংশ হিসেবে এ দিন দেশটির সরকারি বেতার ও টেলিভিশনে জুমার নামাজের আজান সরাসরি সম্প্রচারের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। নিউজিল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় বেতার ও টেলিভিশনে এর আগে কখনও আজান সম্প্রচারিত হয়নি। শুক্রবার প্রথমবারের মতো আজান সম্প্রচারিত হতে যাচ্ছে এই দুই মাধ্যমে।
হামলার পর নিরাপত্তার কারণে কয়েকদিন বন্ধ থাকা মসজিদ দু’টিতে কাল আবার জুমার নামাজ আদায় করতে সমবেত হবেন মুসল্লিরা। ধারণা করা হচ্ছে, কালকের জুমায় ব্যাপক মুসল্লির সমাগম হবে। সেই সঙ্গে শান্তিপ্রিয় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা মুসলমানদের প্রতি সমবেদনা জানাতে মসজিদ চত্ত্বরে সমবেত হবেন।
আজান সম্প্রচারের সেই সঙ্গে জাতীয়ভাবে দুই মিনিটের নীরবতা পালন করা হবে দেশটিতে।
এদিকে বুধবার (২০ মার্চ) সিরীয় শরণার্থী খালেদ মুস্তাফা এবং তার ছেলে হামজাকে দাফনের মাধ্যমে ক্রাইস্টচার্চ হামলায় নিহতদের দাফন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় আল নুর মসজিদের কাছে তাদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শত শত মুসল্লি অংশ নেন। জানাজার নামাজে নিহত খালেদ মুস্তাফা এবং তার ১৫ বছর বয়সী ছেলে হামজার রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়। জানাজায় উপস্থিত মানুষের কান্নায় তখন পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন জানিয়েছেন, জুমার নামাজের আজান সরাসরি সম্প্রচারের পাশাপাশি শুক্রবার নিহতদের স্মরণে দুই মিনিটের নীরবতা পালন করা হবে।
বুধবার ক্রাইস্টচার্চের একটি স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে এমন ঘোষণা দেন তিনি। আল নুর মসজিদে হামলার পর সেখানে সবার আগে পৌঁছানো পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ দিন প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে পৌঁছে হতাহতদের উদ্ধার ও দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করায় তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
দেশটির ইংরেজি দৈনিক নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, স্বাভাবিকভাবে যেকোনো প্রাণঘাতী নৃশংসতার পর দেশে এক মিনিটের নীরবতা পালনের রেওয়াজ থাকলেও এবার ক্রাইস্টচার্চ হামলার ভয়াবহতার কারণে দুই মিনিটের নীরবতা পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০১০ সালে পাইক রিভার বিস্ফোরণে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে সর্বশেষ দুই মিনিট নীরবতা পালন করেছিল নিউজিল্যান্ড।
উল্লেখ্য, উগ্র-ডানপন্থী ব্রেন্টন ট্যারান্ট নামে অস্ট্রেলিয়ার এক নাগরিক মুসল্লিদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫০ মুসল্লিকে হত্যা করে। ১৫ মার্চের ওই হামলায় বাংলাদেশ, ভারত, তুরস্ক, কুয়েত, সোমালিয়া এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকরা নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন কমপক্ষে ৪৯ জন। যাদের মধ্যে ১২ জনের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক।
-আল জাজিরা অবলম্বনে