মানুষের জীবনের সুন্দরতম মুহূর্তকে গ্রাস করে বিষন্নতা। এটি এমন এক নীরব ঘাতক যা মানুষের জীবনে এনে দেয় একাকিত্ব। সমাজের অনেকেই একাকি, স্বপ্নহীন, আনন্দহীন এক দুর্বিষহ জীবন নিয়ে বসবাস করেন। তাদের হতাশা, অবসাদ ও বিষন্নতা অন্যকেও সংক্রমণ করে। এ কারণে ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, ‘যারা কথোপকথনকালে তোমাকে বিষণ্ণ ও অবসাদগ্রস্ত করবে, তাদের সঙ্গ পরিহার করো।’
মানুষ যখন মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়, তখন এক ধরনের নেতিবাচকতা তাকে পেয়ে বসে। নিজের সম্পর্কে বা নিজের দিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে তাকাতে শুরু করে দেয়। যার ফলে আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে ওঠে, বিষন্নতা অবসাদ পেয়ে বসে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মানসিক অবস্থার কুপ্রভাব ব্যক্তি আচরণের ওপর প্রভাব ফেলে। ফলে সে অশালীন ও অসংলগ্ন আচরণ করতে শুরু করে, অযথা উত্তেজিত হয়ে যায়। তাই এ ধরণের মানুষের সংশ্রব এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে।
মানুষের কল্যাণে শুধু এই দুই প্রকারের লোক নয়, আরও বিশেষ চরিত্রের কিছু মানুষকে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন। ওই শ্রেণির লোকগুলো হলো-
এক. যারা মানুষের সামনে প্রশংসা করে এবং পেছনে কুৎসা রটনা করে।
দুই. যারা সামান্য বিরোধিতায় ভীষণভাবে ক্রোধান্বিত হয় এবং অন্যকে ভৎর্সনা করে।
তিন. যাদের কথা ও কাজের মধ্যে কোনো মিল নেই।
চার. যারা অন্যের ছিদ্রান্বেষণের উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জন করে।
এ ছাড়া ফাসেক, পাপাচারী এবং প্রকাশ্যে গোনাহকারীদের সঙ্গ থেকে বিরত থাকা।
বলা হয়, ‘জ্ঞানী শত্রু, নির্বোধ বন্ধু অপেক্ষা শ্রেয়।’ এটা সর্বজনবিদিত সত্য যে, জ্ঞানী শত্রু চিহ্নিত এবং তার শত্রুতাও প্রকাশ্য। এ কারণে তার থেকে নিরাপদে থাকা সহজতর হয়। কিন্তু নির্বোধ বন্ধু যদি মানুষের উপকারও করতে চায়, তবুও নির্বুদ্ধিতার দরুণ যে অনিষ্ট করে বসে।
মানুষ কখনও অপরাধ করে আবার কখনও অন্যের কোনো অন্যায় কাজের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপনের মাধ্যমে ওই ব্যক্তির কৃত অপরাধের অংশীদার হয়ে যায়।
কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর কোনো কাজের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ, ওই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততাকে বুঝায়। যে ব্যক্তি কোনো অন্যায় কাজে সম্পৃক্ত থাকবে সে দু’টি গোনাহ করবে, এক. ওই অন্যায় কাজ সম্পাদনের কারণে এবং অপরটি সে কাজের প্রতি সন্তুষ্টি থাকার কারণে।
ইসলাম মনে করে, মানুষের কোনো কাজের প্রতি সম্মতি অথবা অসম্মতি ব্যক্ত করা বস্তুত ওই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কিংবা অসম্পৃক্ততাকে বুঝায়। যেমন সামুদ গোত্রের (নবী হজরত সালেহ আ.-এর গোত্র) উটকে এক ব্যক্তি হত্যা করেছিল। কিন্তু যেহেতু গোত্রের অন্যরা সে কাজে সম্মতি জ্ঞাপন করেছিল। সেহেতু আল্লাহতায়ালা এ অপরাধকে গোত্রের অন্যদের অপরাধ হিসেবে গণ্য করেন এবং সবার ওপর কঠিন আজাব নাজিল করেন।
তাই কোনো অত্যাচারী, অত্যাচারীকে সহায়তাদানকারী এবং অত্যাচারে সম্মতিদানকারী প্রত্যেকেই সম অপরাধী। এস লোকদের সংশ্রবও এড়িয়ে চলতে হবে।
সেই সঙ্গে কখনও মিথ্যাবাদীর সঙ্গী হওয়া যাবে না। কেননা, মানুষের উপকার করতে যেয়ে ক্ষতিই করে। মিথ্যার মাধ্যমে সাদাকে কালো, কালোকে সাদা বলে দিতে পারে। ইসলামে মিথ্যাকে সব পাপের জননী বলা হয়েছে।