সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পবিত্র হজ গমনেচ্ছুকদের নিবন্ধনের সময়সীমা আরও এক দফা বাড়ানো হয়েছে। বুধবার (১০ এপ্রিল) নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হওয়ায় আরেক দফা বাড়িয়ে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। এখনও সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রায় ৫শ’ জনের কোটা খালি রয়েছে।
১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনার এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের চূড়ান্ত নিবন্ধন শুরু হওয়ায় ছয় বার সময় বাড়িয়েও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের নিবন্ধনের কোটা পূরণ হয়নি। ষষ্ঠবার বাড়ানো সময়সীমা বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) শেষ হওয়ার প্রেক্ষিতে আবারো সময় বাড়ানো হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে সপ্তম দফায় ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এখনও ৯ হাজার জনের কোটা খালি রয়েছে।
দফায় দফায় এভাবে সময় বাড়ানোর পরও হজের চূড়ান্ত নিবন্ধনের কোটা পূরণ না হওয়ায় হজ ব্যবস্থাপনায় এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। বার বার সময় বাড়ানোর পরও কেন নিবন্ধনে ধীরগতি এমন প্রশ্নের উত্তরে আল ওয়াসী ট্রাভেলসের মালিক মাওলানা আবদুল গাফফার বার্তা২৪.কমকে বলেন, নিবন্ধন শুরুর পর পাসপোর্ট নিয়ে কিছুটা জটিলতা ছিলো, এখন আর তা নেই। আসলে হজযাত্রীদের টাকা সংগ্রহ করতে কিছুটা সময় লাগছে। এটাই নিবন্ধনের ধীরগতির মূল কারণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাক-নিবন্ধনের পরও অনেকে হজে যাচ্ছেন না। অন্যদিকে কিছু এজেন্সির বিরুদ্ধে আগের হজের অনিয়মের অভিযোগের নিষ্পত্তি হতে দেরি হওয়াসহ অর্থনৈতিক মন্দা, দীর্ঘমেয়াদে প্রাক নিবন্ধনের নিয়মের কারণে তাৎক্ষণিক হজ পালনের মনোভাবে পরিবর্তন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় গ্রুপ লিডাররা ধর্মপ্রাণ মানুষকে হজের চেয়ে স্বল্প খরচে ওমরা পালনে উৎসাহিত করাসহ নানা কারণে হজযাত্রী কমছে।
চলতি বছর বাংলাদেশের জন্য হজযাত্রী পাঠানোর কোটা রয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮জন। এর মধ্যে এক লাখ ২০ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি ৭ হাজার সরকারি ব্যবস্থাপনার জন্য নির্ধারিত। এজেন্সিগুলোর গাইড বাদ দিয়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৬ জনের নিবন্ধন করা হবে।
এদিকে ৮ এপ্রিল ২০১৮ সনের হজ মৌসুমে সৌদি আরবে নিম্নমানের বাড়ী ভাড়া করার অভিযোগে ধর্ম মন্ত্রণালয় ১০৩টি বেসরকারি হজ এজেন্সি বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এ মর্মে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (হজ-৩) স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নোটিশ জারি করা হয়।
অভিযুক্ত এসব হজ এজেন্সির বেশিরভাগই চলতি হজ মৌসুমের জন্য হজযাত্রী নিবন্ধনের কার্যক্রম প্রায় সম্পন্ন করছে। এমতাবস্থায় অভিযুক্ত হজ এজেন্সি ও ওই সব এজেন্সির মাধ্যমে হজ গমনে ইচ্ছুকদের মাঝে চরম হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। নানা ধরনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে তাদের মনে।
হাবের মহাসচিব ও হাব সম্মিলিত ফোরামের প্যানেল প্রধান এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম এ বিষয়ে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ১০৩টি অভিযুক্ত হজ এজেন্সির কারণ দর্শানোর নোটিশে কারও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ বিষয়য়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ এডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ, ধর্ম সচিব আনিছুর রহমান ও হজ কাউন্সেলর মাকসুদুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়েছে।
হাব মহাসচিব তসলিম বলেন, অভিযুক্ত ১০৩টি হজ এজেন্সি যাতে কোনো প্রকার হয়রানির শিকার না হয় এবং চলতি বছর নির্বিঘ্নে হজের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা নিয়ে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে এর কোনো যুক্তিকতা নেই। এ ধরনের অভিযোগ তুলে এজেন্সিগুলোর মধ্যে অহেতুক ভীতি সৃষ্টি করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক এজেন্সির মালিক বলেছেন, হজের দীর্ঘ ৮ মাস পরে এমন অভিযোগপত্র আসায় কিছুটা বিস্মিত হয়েছি। প্রচলিত নিয়ম ও বিধি অনুযায়ী কোনো হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ থাকলে হজের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর পরই তা দ্রুত ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এবার বিভিন্ন এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। কিন্তু এভাবে একসাথে শেষ মুহূর্তে অভিযোগ আসায় এটা নিয়ে এক ধরনের ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেওয়া হয়েছে, এর আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। কারণ, যেখানে অভিযোগকারী থাকে না সেখানে আইনের দৃষ্টিতে এ নোটিশ অবৈধ ও বাতিল।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ আগস্ট (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ পালিত হবে।