সারা পৃথিবী থেকে লাখ লাখ মুসলমান প্রতি বছর নির্দিষ্ট একটা সময়ে হজ করতে সৌদি আরবে যান। হজ মৌসুম শেষে সারা বছর ওমরা পালনের জন্য সৌদি আরবের স্থানীয় নাগরিকদের পাশাপাশি অন্য দেশের মানুষও যান।
এক পরিসংখ্যানে দেখে গেছে, ২০১৮ সালে ৮৫ লাখ মানুষ হজ-ওমরা পালন করেছেন। তন্মধ্যে ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ ওমরা পালন করেছেন। ওমরা পালনকারীদের প্রায় ৫০ লাখ ভিন্ন দেশের। আর বাকী দশ লাখ সৌদি আরবের। সৌদি থেকে ওমরা পালনকারীর সংখ্যা ১০ লাখ হলেও এর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবে কর্মরত বিভিন্ন দেশের লোক।
হজের সময় সৌদি আরবের আর্থিক লেনদেনের হার অনেকটাই বেড়ে যায়। অন্যদিকে ওমরাকে কেন্দ্র করেও মক্কা-মদিনায় আর্থিক লেনদেন চাঙ্গা থাকে। এসব কারণে, অনেকেই প্রশ্ন করেন, সৌদি আরবে হজ আর ওমরা করতে যাওয়া মানুষের কাছ থেকে দেশটি আসলে কত অর্থ রোজগার করে?
বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছিল, ২০১৮ সালে হজ থেকে সৌদি আরবের সরাসরি রোজগার হয়েছিল প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার। আর হজযাত্রীরা মোট ২৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছিলেন সৌদি আরব যেয়ে। এই অর্থের একটা বড় অংশ কিন্তু সৌদি অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে।
মক্কার চেম্বার অব কমার্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাইরের দেশ থেকে আসা মুসলমানরা মাথাপিছু ব্যয় করেন ৪ হাজার ৬০০ ডলার, আর স্থানীয়রা মাথাপিছু খরচ করেন প্রায় ১ হাজার ৫০০ ডলার।
এসব খরচের মধ্যে রয়েছে, হজ-ওমরার জন্য সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন চার্জ, মোয়াল্লেম ফি, ভিসা ফি, ট্রাভেল ফি, খাওয়া-দাওয়া, পরিবহন ও কেনাকাটা ইত্যাদি। এসব খরচ কোনো না কোনোভাবে সৌদি অর্থনীতিতেই যোগ হচ্ছে।
বিবিসির ওই খবরে আরও বলা হয়েছিল, অপরিশোধিত তেল বিক্রি করে সৌদি আরবের যা রোজগার হয়, তার থেকেও বেশি আয় করে তারা হজ থেকে।
সৌদি আরবের পত্রিকা ওকাজ বলেছে, হজ ও ওমরা থেকে সৌদি আরবের রাজস্ব আয় হয় প্রায় ৩০ ভাগ। এই আয়ের পুরোটা খরচ করা হয় মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীর সংস্কার কাজ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার কাজে।
বিশেষ করে হজের সময় অতিরিক্ত আড়াই লাখ নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ, ৩০ হাজার পরিচ্ছন্ন কর্মী, ৬০ হাজার কর্মকর্তা, হজযাত্রীদের জন্য ১৮ হাজার যানবাহন, শত শত এ্যাম্বুলেন্স, হাজার হাজার ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী এবং ব্যবস্থাপনার জন্য ডজন খানেক হেলিকপ্টার নিয়োগ করা হয়।
সুতরাং এটা মনে করার কোনো কারণ নেই, হজ-ওমরা থেকে প্রাপ্ত অর্থ সৌদি আরব অন্যখাতে খরচ করছে, অথবা হজ-ওমরাকে সৌদি আরব আয়ের মাধ্যম বানিয়েছে। সৌদি আরব আল্লাহর মেহমান হজযাত্রীদের আরাম-আয়েশ, নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য অনেক গুণ বেশি রাজস্ব ব্যয় করে।
বর্তমান সৌদি শাসকের আমলেই মক্কা ও মদিনায় সবেচেয়ে বেশি সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজ সাধিত হয়েছে। হজযাত্রীদের কষ্ট কমিয়ে আরামদায়ক হজ নিশ্চিত করতে অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছে, এর অনেকগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে, কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে। এসব প্রকল্পের মাঝে রয়েছে, জেদ্দা-মক্কা ও মক্কা-মদিনায় দ্রুতগতির বুলেট ট্রেন চালু, আরাফা ও মিনায় নিরাপদ তাঁবু স্থাপন, মুজদালিফায় রাত কাটানোর উন্নত ব্যবস্থা, মিনায় পাথর নিক্ষেপের স্থানে বহুমুখি ও বহুতল ব্যবস্থাপনা, মক্কার চারপাশে টানেল ও উড়াল সেতু নির্মাণ ইত্যাদি।