বরকতময় খাবার সেহেরি

রামাদ্বান কারীম, ইসলাম

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-09-01 21:57:14

রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সুবহে সাদেকের আগে যা কিছু পানাহার করা হয় তাকে বাংলায় সেহেরি বলে। এর আরবি হলো- সাহারি। পৃথিবীর সব ভাষাতেই ভিন্ন ভাষার শব্দ যখন প্রবেশ করে তখন মূলের মতো হুবহু থাকে না। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে স্বাভাবিক ভাবেই শব্দটি কিছুটা বিকৃতির শিকার হয়। চিরায়ত এ নিয়মেই আরবি, ফার্সি, ইংরেজি, পর্তুগিজসহ বহু বিদেশি ভাষার শব্দ নিজের করে নিয়েই বাংলা ভাষার বর্তমান রূপ।

ঠিক সেভাবেই আরবি সাহারি শব্দটির বাংলা রূপ হলো সেহেরি, সেহরি। এখন এটি বাংলা ভাষার শব্দ। এ রূপেই এ শব্দটি সর্বস্তরের বাংলাভাষী মানুষের সাধারণ ব্যবহারে এবং বাংলা অভিধানে নিজের অবস্থান দৃঢ় করে নিয়েছে।

আরবিতে সেহর অর্থ জাদু এবং সেহরি অর্থ জাদুর উপকরণ এ ব্যাখ্যা করে গণমানুষের ব্যবাহরকে সংশোধন করার সুযোগ এখন আর নেই।

সেহেরি রোজার অন্যতম অনুষঙ্গ। পূণ্য লাভের ইচ্ছায় উপবাস যাপনের সাধনা হিন্দু, ইহুদি, খ্রিস্টানসহ পৃথিবীর প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মেই আছে। তবে অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপবাস সাধনা আর মুসলমানদের রোজার অন্যতম দু’টি পার্থক্যের একটি হলো-সেহেরি। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাদের ও আহলে কিতাবদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো-সেহেরি খাওয়া।’ –সহিহ মুসলিম: ২৬০৪

এ হাদিস থেকে বুঝে আসে কেউ যদি ইচ্ছা করে অথবা অবহেলা করে সেহেরি খাওয়া পরিত্যাগ করে তাহলে সে ইহুদি-খ্রিস্টানদের রোজা রাখল। তার রোজা মুসলমানদের রোজা নয়।

সেহেরি হলো- বরকতের খাবার। তিনি আমাদের আদেশ করে বলেছেন, ‘তোমরা সেহেরি খাও। কেননা, তাতে বরকত রয়েছে।’ –সহিহ মুসলিম: ২৬০৩

ইরবায ইবনে সারিয়া (রা.) বলেন, একদা রমজান মাসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সেহেরি খেতে এভাবে ডাকলেন, ‘বরকতময় খাবারে অংশগ্রহণ করো।’ –সুনানে আবু দাউদ: ২৩৪৬

সেহেরি পেট ভরে খেতে হবে বা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খেতে হবে তা জরুরি নয়। কোনো কারণে খেতে অনিহা থাকলে, বা সম্ভব না হলে মাত্র এক ঢোক পানি অথবা একটি খেজুর অথবা এক লোকমা খাবারের দ্বারাই সেহেরি খাওয়ার সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।

সেহেরিতে নিজের রুচিসম্মত ও সামথ্র্যমতো যেকোনো খাবারই খাওয়ার সুযোগ ও অনুমতি আছে। তবে সেহেরির সর্বোত্তম হলো- খেজুর।

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনের সর্বোত্তম সেহেরি হলো- খেজুর।’ –সুনারে আবু দাউদ: ২৩৪৭

যারা ভাত বা রুটি নির্ভর, তা ছাড়া তৃপ্তি ও স্বস্তি হবে না তারা তো সেহেরিতে ভাত বা রুটিই খাবেন। কেননা তা জায়েজ। তবে এ হাদিসের ওপর আমল করার ইচ্ছায় ভাত খাওয়ার পর দু’একটা খেজুর খেয়ে নিতে পারেন। তাহলে অভ্যাসও ঠিক থাকলো, সুন্নতও রক্ষা হলো।

সেহেরি খাওয়ার সুন্নত সময় হলো- একেবারে শেষ সময়ে অর্থাৎ সুবহে সাদেকের নিকটতম পূর্ব সময়ে। সাহাবি যায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সেহেরি খেতাম। অত:পর ফজরের নামাজে দাঁড়াতাম। আমাদের সেহেরি ও নামাজের মাঝে ৫০ আয়াত তেলাওয়াতের মতো দূরত্ব থাকতো। -সহিহ মুসলিম: ২৬০৬
অর্থাৎ সেহেরি খাওয়ার আনুমানিক ১৫-২০ মিনিট পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাজে দাঁড়াতেন। আর অবশ্যই তিনি সেহেরি খেতেন সুবহে সাদেকের পূর্বে আর ফজরের নামাজ শুরু করতেন সুবহে সাদেকের পর। এ থেকে বুঝে আসে তিনি একেবারে শেষ সময়ে সেহেরি খেতেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর