বাংলাদেশি ওমরাযাত্রী বৃদ্ধি ও বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট কমিয়ে আনার কারণে তীব্র টিকিট সঙ্কটে রমজানে প্রায় ২০ হাজার লোকের ওমরা পালন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। অনেক যাত্রীকে দ্বিগুণেরও বেশি মূল্যে টিকিট কিনে ওমরা পালনে যেতে হচ্ছে। সময়মতো যেতে না পারায় অনেকের ভিসা বাতিল হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে হজ এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।
সমস্যা সমাধানে ঢাকা-জেদ্দা, ঢাকা-মদিনা ও ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বাড়ানো এবং অন্যান্য বিমান সংস্থাকে বিভিন্ন চার্জ কমিয়ে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাইট পরিচালনায় উৎসাহী করার প্রস্তাব দিয়েছে হাব।
শনিবার (১১ মে) রাজধানীর নয়া পল্টনে একটি হোটেলে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম এই আহ্বান জানান।
তিনি স্বপ্লমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে বিমানের কম দূরত্বের রুটের ফ্রিকুয়েন্সি কমিয়ে সৌদি আরবের রুটে ফ্রিকুয়েন্সি বৃদ্ধি করা এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে বিদেশি এয়ারের বিভিন্ন ধরণের চার্জ কমানো বা মওকুফ করে দেওয়া এবং ওপেনস্কাই করার বিষয়টি বিবেচনা করা যায় কিনা দেখার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ওমরাযাত্রীদের টিকিট সঙ্কট শুধু রমজানে নয় সারাবছরই বিরাজ করবে। কারণ বাংলাদেশে ওমরা যাত্রীর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পাচ্ছে। সৌদি সরকারও এখন হাজের কয়েকদিন বাদ দিয়ে সারাবছর ওমরার ভিসা দিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে হাব সভাপতি বলেন, চলতি বছর ওমরা যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এয়ারলাইন্সগুলোতে আসন সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ সুযোগে এয়ারলাইন্সগুলো বিমান ভাড়া অসহনীয় মাত্রায় বৃদ্ধি করেছে। আগে যেখানে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা সরাসরি বিমানভাড়া ছিল ৫০ হাজার টাকা বিমানে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা ওমরা যাত্রীদের বিমানভাড়া ৮০-৮৫ হাজার টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৯০-৯৫ হাজার টাকাও নেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বেশি ভাড়া দিয়েও ফ্লাইটের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে সৌদি কর্তৃপক্ষ বছরের নির্দিষ্ট ৬-৭ মাস (জানুয়ারি থেকে জুন) পর্যন্ত ওমরা ভিসা প্রদান করলেও চলতি বছর থেকে সারাবছর (হজের কয়েকদিন বাদ দিয়ে) ভিসা প্রদান করছে। গত ৮ মে পর্যন্ত বাংলাদেশের ১ লাখ ৬২ হাজার ৫০৮ জনকে ওমরা ভিসার জন্য মুফা দিয়েছে সৌদি আরব। বিমানে আসন সঙ্কটের কারণে বহু ওমরাযাত্রীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র রোজার মাসে সময়মতো টিকিট না পেলে ২০ হাজার যাত্রী ওমরা পালন করতে পারবেন না। আর্থিক বিবেচনায় ৯০ থেকে ১০০ কোটি টাকার আর্থিক লোকসান হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে হাব সভাপতি বলেন, চাহিদার কারণে সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স তাদের ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশ বিমানকেও বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। প্রধানত: ওমরাযাত্রীদের সমস্যা সমাধানের দিকটি প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এছাড়া বিমান এই রুটে ফ্লাইট বাড়ালে ব্যবসায়িকভাবেও লাভবান হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে কোনো এয়ারলাইন্সের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আগামী ২০ মে একটি অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করবে। যেদিন টিকিট বুকিং শুরু হয়েছে সেদিন ১০ মিনিটের মধ্যে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এ থেকে বুঝা যায় পরিস্থিতিটা কেমন।
শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে দ্রুত সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। ফ্লাইটের টিকিট বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে এক সঙ্গে অধিক সংখ্যক টিকিট যেন না দেওয়া হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার। যাতে কোনো রকমের সিন্ডিকেট হতে না পারে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে হাব সভাপতি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশের দুই কোটি মানুষকে বিমানে চড়ে বিদেশ যেতে হয়? একমাত্র বাংলাদেশের এই সংখ্যক মানুষ প্রবাসী। অভিবাসীদের অবদানের বিষয়টি সামনে রেখে সরকারকে অবশ্যই ওমরাসহ মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইটের টিকিট সঙ্কটের দ্রুত অবসানে পদক্ষেপ নিতে হবে।
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করা ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সমস্যা তুলে ধরে আমাদের প্রস্তাবও দিয়েছি। আশাকরি, সরকার সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাবের মহাসচিব ফারুক আহমেদ সরদার, সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী, সহ-সভাপতি এএস.এম ইব্রাহীম, অর্থ সম্পাদক মুফতি আবদুল কাদেরমোল্লা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাওলানা কফিল উদ্দিন, জনসংযোগ সচিব মাজাহারুল ইসলাম, ইসি সদস্য মো. আবু তাহের, আবুল হাসান, মাহবুবুর রহমান ও মুস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।