মরুর লু’ হাওয়ার উষ্ণ-শুষ্ক গরম ছাপিয়ে, ওমরা ও রোজা পালনরতদের স্বস্তি দিয়ে পবিত্র মক্কায় সোমবার (২০ মে) রাতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। দিনভর রোদ থাকলেও বিকেলের দিকে মক্কার আকাশে মেঘ জমতে শুরু করে। মেঘ-রোদের লুকোচুরি শেষে রাতে প্রায় ১৫ মিনিট টানা বৃষ্টির হয়। বৃষ্টিতে হারাম শরিফ প্রাঙ্গণে পানি জমে যায়।
কাবা চত্বরে এ সময় তাওয়াফরত বহু মানুষ বৃষ্টিতে ভিজতে থাকেন। বৃষ্টির পর কাবা শরিফের নিরাপত্তারক্ষী ও ক্লিনাররা জমে থাকা বৃষ্টির পানি দ্রুত অপসারণ করে নামাজের উপযোগী করে তোলেন।
বৃষ্টি সবসময়ই রহমতের। আর সেই বৃষ্টি যদি হয় পবিত্র কাবা চত্বরে, মাতাফের ওপর তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই। ওই স্থানে রহমতের দোয়ার খুলে আসমান থেকে নেমে আসে রহমতের বারিধারা। খানায়ে কাবায়, মসজিদে হারামে। কাবার ছাদে জমে থাকা সেই বৃষ্টির পানি নেমে আসে মিজাবে রহমতের ঝরনা দিয়ে। কী মনোরম দৃশ্য!
বৃষ্টি শুরু হতেই তাওয়াফকারীদের মাঝে নেমে অনাবিল আনন্দ, অলৌকিক খুশির ঝলকানি। যারা বৃষ্টির সময় কাবা চত্বরের বাইরে কিংবা হোটেলে ছিলেন, তাদের অনেকেই দৌঁড়ে চলে আসেন বৃষ্টিতে ভিজে তাওয়াফ করতে।
বৃষ্টির সময় হাজার হাজার তাওয়াফকারী বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে তাওয়াফ করেন। তাদে তাকবিরের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে কাবা প্রাঙ্গণ।
কাবা ঘরের উত্তর দিকে ছাদের পানি গড়িয়ে পড়ার জন্যে সোনার তৈরি একটা নালা আছে। এটাকে মিজাবে রহমত বলে। রাতের ঝমঝম বৃষ্টির সময় মিজাবে রহমত দিয়ে হাতিমের মধ্যে পানি গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য দেখে তাওয়াফকারীদের কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠে। আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরছে, বাতাস বইছে, বাতাসে কাবার গিলাফ ফুলে ফুলে উঠছে। এমন দৃশ্য দেখা সৌভাগ্য সত্যিই বিরল। কারণ, সৌদি আরব বিশেষ করে রমজানে কাবায় বৃষ্টি এমনিতে দুর্লভ।
এ সময় তাওয়াফরত মুসল্লিরা কেঁদে কেঁদে আল্লাহতায়ালার দরবারে ফরিয়াদ জানায়। কেউ বৃষ্টিতে ভিজে নামাজ পড়তে থাকে। তাকবিরের ধ্বনি, উচ্চকন্ঠে দোয়া-মোনাজাতে কাবা চত্বরে ভিন্ন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ওমরা পালনকারীরা রহমতের বৃষ্টিতে ভিজে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়।
শান্তি স্বস্তি আর আনন্দের স্পর্শ নিয়ে আসতে পারে এক পশলা রহমতের বৃষ্টি, কাবার বৃষ্টি এর উদাহরণ। মানুষ আল্লাহতায়ালার অপার রহমতে বেঁচেবর্তে থাকে এই রুদ্র প্রকৃতিতে, বৈরি বসুন্ধরায়। তার একটু রহমতই যথেষ্ট পৃথিবীকে মানুষের বাসোপযোগী রাখতে। মানুষ তারই আশ্রয়ে বেঁচে থাকে। কৃতজ্ঞতা প্রভু তোমার প্রতি, আলহামদুলিল্লাহ।