এখনকার সময়ে গোনাহ করা একেবারেই সহজ। ধরুন, আপনি নির্জনে বসে আছেন, হাতে মোবাইল। বসে বসে অশ্লীল কিছু দেখে ফেললেন তখন গোনাহ হয়ে গেল। অফিসের বসে কাছে বকা না খেতে মিথ্যা বললেন কিংবা ধোঁকাবাজি করলেন অথবা কোনো আমানত নষ্ট করলেন তখন গোনাহ হয়ে গেল।
বন্ধুদেরকে হাসাতে মিথ্যা বললেন, কারো কাছে ভালো সাজতে অপরের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিলেন। এভাবেই নিয়মিত আমাদের ভালো আমল থেকে বদ আমল বেশি হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হরো- গোনাহ হয়ে গেলে আপনি কী করবেন? ক্ষমার কোনো পথ আছে? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আছে। কারণ আল্লাহতায়ালা ক্ষমাশীল এবং তওবা কবুলকারী।
ইসলামের শিক্ষা হলো- কোনো মুসলমান যখন গোনাহ করে ফেলে তখন তার প্রথম কাজ হলো তওবা করা, প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আসা। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা যদি পাপাচার করতে, এমনকি তোমাদের পাপ আকাশের সীমা পর্যন্ত পৌঁছে যেত, অতঃপর তোমরা তওবা করতে, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের তওবা কবুল করবেন।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪২৪৮
গোনাহ করে ফেললে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। এ বিষয়ে সূরা হুদের ১১৪ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তুমি নামাজ আদায় করো দিবসের দুই প্রান্তে এবং রাতের প্রথম অংশে। নিশ্চয়ই ভালো কাজ মন্দ কাজকে মিটিয়ে দেয়। এটি উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশ।’
‘ওই ব্যক্তি জীবিত বা মৃত থাকা অবস্থায় কোনো মুমিন তার জন্য দোয়া করলে তার গোনাহ ক্ষমা হয়। মুমিনদের জন্য দোয়া করা নবীদের সুন্নত ছিল। নবী নূহ (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, ‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি জালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।’ -সূরা নূহ: ২৮
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা হজরত আব্বাস (রা.) বলেন, বনু সাঈদার নেতা সাদ ইবনে উবাদা (রা.)-এর মা মারা গেলেন। তখন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। অতঃপর নবী (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা আমার অনুপস্থিতিতে মারা গেছেন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে তা কি তার কোনো উপকারে আসবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। হজরত সাদ (রা.) বললেন, ‘তাহলে আপনাকে সাক্ষী করে আমি আমার মিখরাফের বাগানটি তার উদ্দেশ্যে সদকা করলাম। -সহিহ বোখারি: ২৭৬২
দুনিয়া জীবনে অশান্তি-দুঃখ-কষ্ট দিয়েও গোনাহ ক্ষমা করা হয়।
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে সব বিপদ-আপদ আসে এর দ্বারা আল্লাহ তার পাপ দূর করে দেন। এমনকি যে কাঁটা তার শরীরে ফুটে এর দ্বারাও। -সহিহ বোখারি: ৫৬৪০
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি কেউ গোনাহ করে ফেলে, তারপর পবিত্রতা অর্জন করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। -তিরমিজি: ৩২৭৬
আমাদের সবার দ্বারাই গোনাহ হচ্ছে। কারো কম, কারো বেশি। আল্লাহতায়ালা সূরা জুমারের ৫৩ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘সব আদম সন্তান পাপী।’
আমরা গোনাহ করলেও আল্লাহতায়ালা আমাদের আশার বাণী শুনিয়ে বলেছেন, ‘বলুন! হে আমার গোলামেরা, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করছ, তোমার আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ -সূরা জুমা: ৫৩
আসুন, গোনাহ হয়ে গেলে হতাশ না হয়ে পবিত্রতা অর্জন করে, দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তওবা করে ফিরে আসি, ক্ষমা প্রার্থনা করি।