৪ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে চলতি বছরের হজ ফ্লাইট। এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৯৮ জন হজে যাবেন। বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জেদ্দা, মক্কা ও মদিনায় সহায়তা করতে সরকার বেশ কয়েকটি টিম গঠন করে সৌদি আরব প্রেরণ করেন। দলগুলো হলো- হজ চিকিৎসক দল, হজ প্রশাসনিক দল, হজ কারিগরি দল ও হজ চিকিৎসক দলের সহায়ক দল।
হজ মৌসুমে সৌদি আরবে অসুস্থ বাংলাদেশি হজযাত্রীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ২৩০ সদস্যবিশিষ্ট হজ চিকিৎসক দল গঠন করা হয়েছে অনেক আগেই। দুই দলে বিভক্ত হয়ে তারা সৌদি আরবে দায়িত্ব পালন করবেন। হজ চিকিৎসক দলে ১০৫ জন চিকিৎসক, ৭৫ জন নার্স-ব্রাদার, ৪০ জন ফার্মাসিস্ট ও ১০ জন ওটি এসিস্ট্যান্ট-ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান রয়েছেন।
সৌদি আরবে হজ ব্যবস্থাপনার সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয়, হজযাত্রী সেবা ও প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য গঠন করা হয়েছে ৫৭ সদস্যের হজ প্রশাসনিক দল।
হজ মৌসুমে সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজ অফিস জেদ্দা, মক্কা ও মদিনায় হজ প্রশাসনিক দল ও মৌসুমি অফিসারদের দাফতরিক সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক সহায়তার রয়েছে ১৭ সদস্যের হজ কারিগরি দল।
এবার হজ চিকিৎসক দলকে সহায়তার জন্য গঠন করা হলো ১১৮ সদস্যের হজ সহায়ক দল। তারা চিকিৎসক দলকে ‘সহায়তা’ করবেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আবদুল্লাহ আরিফ মোহাম্মদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে হজ চিকিৎসক দল গঠনের কথা জানা গেছে।
প্রশ্ন উঠেছে- ১০৫ জন চিকিৎসক, ৭৫ জন নার্স-ব্রাদার, ৪০ জন ফার্মাসিস্ট এবং ১০ জন টেকনিশিয়ানের সমন্বয়ে গঠিত চিকিৎসক দলের কাজ কী? যদি চিকিৎসক দলের সহায়তা দল প্রয়োজন হয়, তাহলে চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের এ দলে অন্তর্ভুক্ত করাই ছিল বেশি যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তা না করে, মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপারভাইজার, অফিস সহায়ক, প্লাম্বার, পৌরসভার সচিব, পুলিশ কনস্টেবল, সিকিউরিটি ইন্সপেক্টর, জমাদার সরদার, টেকনিশিয়ান, মোটর ক্লিনার, ওয়্যারম্যান, ইমাম, মুয়াজ্জিন, সহকারি হজ অফিসার, বার্তাবাহক, মসজিদের খাদেম, মন্ত্রীর নিরাপত্তাকর্মী, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, টাইপিস্ট, জনসংযোগ কর্মকর্তা, প্রুফ রিডার, মালি, গাড়ি চালক, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাসহ আরও যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এই সহায়তা দলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে- তাদের কারও সঙ্গে চিকিৎসক দলকে সহায়তা করার কোনো সম্পর্ক নেই।
চিকিৎসা বিষয়ে তাদের কী অভিজ্ঞতা আছে সেটাও স্পষ্ট নয়, তারা কোন উপায়ে চিকিৎসক দলকে ‘সহায়তা’ করবেন সেটাও বোধগম্য নয়। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, হজযাত্রীদের চিকিৎসক দলকে সহায়তা করার জন্য আলাদা ‘সহায়ক টিম’ সৌদি আরবে পাঠানোর আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে কি না?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, চিকিৎসকদের সহায়তা করতে পারেন নার্স ও ব্রাদাররা, তাদের সঙ্গে থাকতে পারেন কিছু পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এভাবে চিকিৎসক, নার্স-ব্রাদার, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দল পাঠানোই যথেষ্ট। সেখানে আবার তাদের সহায়তার নামে আলাদা একটা টিম গঠন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীর পছন্দের লোকজনকে সেই টিমের অন্তর্ভুক্ত করে জনগণের করের টাকায় সৌদি আরবে বেড়াতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া একেবারেই অনুচিত।
তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৩০ জন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ২২ জন, গানম্যান ৬ জন ও ১৭ জন গাড়ি চালক রয়েছেন। এতজন ড্রাইভার কি সৌদি আরব যেয়ে গাড়ি চালাবেন? গানম্যানরা কাকে নিরাপত্তা দেবেন? তদ্রুপ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা চিকিৎসক দলকে কিভাবে সহায়তা করবেন? তাদের পদ-পদবি বিবেচনায় এ দলে অন্তর্ভুক্ত করা কতটা শোভন সেটা নিয়েও কথা উঠছে।
হজ সহায়ক দল গঠনের প্রজ্ঞাপনে হজ চিকিৎসক দলের সহায়তাকারী সদস্যদের মেডিকেল অথবা ক্লিনিকে রোগীদের সৃষ্ট ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার, রোগীদের চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ গ্রহণে সহযোগিতা, ক্লিনিক পরিছন্ন রাখা এবং হজ চিকিৎসক দলের দলনেতা, উপ-দলনেতার নির্দেশক্রমে অপরাপর দায়িত্ব পালন করার কথা বলা হয়েছে।
বলা হয়েছে, হজ চিকিৎসক দলের সহায়তাকারীগণ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে দলনেতা, উপদলনেতা এবং অন্যান্য চিকিৎসকগণের নির্দেশমতে কাজ করবেন। যে সব রোগী শয্যায় চিকিৎসা গ্রহণ করবেন তাদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সহায়তকারীরা বাংলাদেশের হাসপাতালে যেভাবে দায়িত্ব পালন করেন ঠিক সেভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
৪ দলে বিভক্ত হয়ে সহায়তা দলের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। ফ্লাইট প্রাপ্তি সাপেক্ষে তারা ৯ জুলাই থেকে সৌদি আরব গমন করবেন।