দুষ্টু লোকেরা সাধারণ মানুষকে নানাভাবে প্রতারিত ও বিভ্রান্ত করে থাকে। সহজ-সরল মানুষের মাঝে মিথ্যা কথা, গুজব রটানো, অলিক কথাবার্তা ও নানা কল্পকাহিনী প্রচার করে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালায়।
কোনো বিষয়ে সঠিকভাবে কিছু জানা না থাকলে আন্দাজে তা না বলার জন্য আল্লাহতায়ালা কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। সূরা বনি ইসরাইলে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার নিশ্চিত বিশ্বাস নেই আন্দাজে তা প্রচার করো না। কেননা চোখ, কান ও অন্তর এ সবেরই জবাবদিহিতা করতে হবে।’
বর্ণিত আয়াতের আলোকে ভিত্তিহীন প্রচারণা ও গুজব রটানোর ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা সহজে অনুমান করা যায়। নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র ছাড়া কেউ কোনো খবর কেউ প্রচার করলে সে সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। গুজব ছড়ানো, প্রচার ও বিশ্বাস কবিরা গোনাহ।
কোরআনে কারিমে এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘হে মুসলমানগণ! যদি কোনো ফাসেক, মন্দ লোক কোনো খবর নিয়ে আসে, তাহলে তা যাচাই-পরীক্ষা করে দেখবে যেন অজ্ঞতাবশতঃ কোনো জাতির ওপর আক্রমণ করা না হয়। এরূপ কাজ করলে তোমাদেরকে নিজেদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অনুতাপ করতে হবে।’ অর্থাৎ কোনো মন্দ লোকের খবর ততক্ষণ বিশ্বাসযোগ্য না, যতক্ষণ তা প্রমাণিত না হবে।
কোরআনে কারিমের এই সুনীতির অনুসরণ করা হলে গুজব রটনা বা মিথ্যা প্রচারণায় কোনো মুসলমান বিভ্রান্ত হতে পারে না। মিথ্যাকে প্রত্যাখ্যান ও বিশ্বাস না করার যেখানে উপদেশ দেওয়া হয়েছে এবং মিথ্যা প্রচারের কুফল বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে ন্যায় ও সত্য অনুসরণ এবং তাতে কোনো প্রকারের সংশয় না করারও আদেশ দেওয়া হয়েছে। সন্দেহ এবং সংশয়ের বিষয়গুলো হতে বিরত থাকার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ন্যায়-অন্যায়, সত্য-অসত্য এবং ভুল ও নির্ভুল বিষয় যে কোনো সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ব্যক্তি নির্ধারণ করতে পারে। মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করা এবং তা প্রচার করা যেরূপ পাপ, সত্য ও ন্যায় সম্পর্কে সংশয়বোধ করাও তেমনি অপরাধ।
সূরা হুজরাতে এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! অধিক সংশয়বোধ হতে বিরত থাকো। কেননা কোনো কোনো সংশয় পাপকার্যের অন্তুর্ভুক্ত।’
এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, যারা মুসলমানদেরকে সংশয়গ্রস্ত করে তোলে, তারা বড় পাপী। হাদিস শরিফে সংশয় সৃষ্টিকে ‘মিথ্যা’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সত্য সম্পর্কে তোমরা সংশয় সৃষ্টি হতে বেঁচে থাকো। কেননা সংশয় সৃষ্টি মিথ্যা কথা স্বরূপ।’
মিথ্যা প্রচার ও গুজব রটনা সম্পর্কে কোরআন-হাদিসের এসব বাণী বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, গুজবের কারণে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। সুতরাং কোনো অবস্থাতেই গুজবে কান দেওয়া যাবে না, গুজব বিশ্বাস করা যাবে না। কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো কিছু বলা ও প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে।
হাদিস শরিফে রাসূলুল্লাহ (সা.) সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন, মিথ্যা খবর ও গুজব ছড়ানোর পেছনে শয়তানের হাত রয়েছে। সহিহ মুসলিমের ভূমিকায় ইমাম মুসলিম (রহ.) সাহাবি আবদুল্লাহ বিন মাসউদের সূত্র থেকে হাদিস বর্ণনা করে বলেন, ‘মানুষের রূপ ধরে শয়তান অনেক সময় কিছু লোকের সামনে কোনো একটি মিথ্যা খবর রেখে যায়। তার রেখে যাওয়া মিথ্যা খবরটি সে লোকগুলো অন্যদের কাছে পৌঁছে দিয়ে বলে, একজন এসেছিলো, তার চেহারা ঠিকই চিনি, কিন্তু নাম কি তা জানি না। অমুক ঘটনার খবর দিয়ে গেলো।’
নবী করিম (সা.) ভিত্তিহীন কথা প্রচার করতে কঠিনভাবে নিষেধ করে বলেছেন, একজন মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, যা শুনবে, তাই বলে বেড়াবে। -সহিহ মুসলিম
আমরা তো সমাজের চলতে-ফিরতে অনেক কথা শুনতে পাই। যার অনেকগুলোই সত্য নয়। এসব অসত্য কথা প্রচার করা অনেক বড় গোনাহের কাজ। যা লোকের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। সমাজের অনেক মানুষ আছে, যারা এসব খবর প্রচারে খুবই মজা পান। শয়তান তাদের ব্যাপারে বড়ই খুশি। কারণ শয়তানের কাজটি তারা করে যাচ্ছেন।
গুজবের প্রেক্ষিতে সংঘঠিত ঘটনাগুলো প্রমাণ করে মানুষের জ্ঞানের যথেষ্ট কমতি রয়েছে। মৌলিক ইসলামি জ্ঞানের অভাব থাকায় শয়তান অনেককে এমন পাপের কাজে লিপ্ত করায়। আমাদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। মিথ্যা প্রচার ও কোনো ধরনের গুজবে কান দেওয়া যাবে না।