আজ হজ: বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আরাফাত ময়দানে

হজ, ইসলাম

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-09-01 11:04:15

আরাফাতের ময়দান (সৌদি আরব) থেকে: সৌদি আরবে আজ জিলহজ মাসের ৯ তারিখ। জিলহজের ৯ তারিখে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হয়। হজ উপলক্ষে মক্কার সব রাস্তা এখন আরাফাতমুখী। হজপালনের জন্য আরাফাতের ময়দানে লাখো মুসুল্লি উপস্থিত। বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের চোখ এখন আরাফাত ময়দানের দিকে।

সৌদি আরবের হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর হজপালনের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৩৩৯ জন হজযাত্রী এসেছেন।

অন্যদিকে সৌদি আরবের নাগরিক ও সৌদি আরবে প্রবাসীদের মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ মানুষকে প্রথমে হজপালনের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু আবেদনকারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় পরে আরও লক্ষাধিক মানুষকে হজের অনুমতি দেওয়া হয়। সে হিসেবে এ বছর প্রায় ২৫ লাখ মানুষ হজপালন করছেন।

 

হজের অন্যতম ফরজ হলো- আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা। হজপালনকারীদের যারা সৌদি আরবে এসে অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদেরকে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে আনা হবে। মূলত ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজ।

হজের আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে সকালে হাজিরা মিনা থেকে রওনা হয়ে আরাফাতের ময়দানে পৌঁছাবেন। লাখো হাজিদের কণ্ঠে ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়াননিমাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাকা’ ধ্বনিতে মুখরিত থাকবে আরাফাতের ময়দান।

আরাফা অর্থ পরিচিত হওয়া। আরাফাতের ময়দানের পাশের পর্বতের নাম- জাবালে রহমত। আরাফাহ ও আরাফাত এই দু'টো শব্দই আরবিতে প্রচলিত। এই ময়দান দৈর্ঘ্যে দুই মাইল,  প্রস্থেও দুই মাইল। এই বিরাট সমতল ময়দানের নাম আরাফাত। ময়দানের তিন দিক পাহাড়বেষ্টিত। আরাফাতের ময়দানে হাজিরা জোহরে ও আসরের নামাজ আদায় করবেন। এছাড়া দোয়া-মোনাজাত, কোরআন তেলায়ত ও নফল নামাজ আদায় করে সময় কাটাবেন। আরাফাতের ময়দানের দোয়া করা সবচেয়ে বেশি ফজিলতের কাজ। আলেমরাও এই পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

৯ জিলহজ সকাল থেকে পুরুষ হাজিরা উচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করবেন, নারীরা তাকবির পাঠ করবেন নিম্ন আওয়াজে। তাকবির হলো- 'আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।' ১৩ জিলহজ আসরের নামাজের পর পর্যন্ত তাকবির বলা ওয়াজিব।

এই ময়দানে ৬৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রিয় নবী হজরত মুহম্মাদ (সা.)-এর নিকট হজ বিধান নাজিল হলে তিনি ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে এক লাখ চল্লিশ হাজার সাহাবিসহ হজ পালন করেন।

 

নবী করিম (সা.) ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে উটের পিঠে আরোহণ করে বিদায় হজের খুতবা দিয়েছিলেন। ওই খুতবা মানবতার ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক হয়ে আছে।

ওই খুতবার অনুসরণে আরাফাত ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে হজের খতিব উপস্থিত হাজিদের উদ্দেশে খুতবা প্রদান করবেন। স্থানীয় সময়ানুসারে সাধারণত খুতবা শুরু হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়।

খুতবার পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত তালবিয়া, তাহমিদ, দোয়া-দুরুদ, ইসতেগফার কোরআন তেলাওয়াত ও আল্লাহতায়ালার দরবারে কান্নাকাটি করে সময় পার করবেন।

হজপালনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সৌদি কর্তৃপক্ষ সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। হাজিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মিনা ও আরাফাতের পথে কিছু দূর পরপর রয়েছে হাসপাতাল। রয়েছে দমকল ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। আরাফাতের ময়দানে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সব হাজিকে বিনামূল্যে খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ সব সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানও হাজিদের নানা উপহার দিচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর