মক্কা (সৌদি আরব) থেকে: 'লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক' অর্থাৎ 'আমি উপস্থিত হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত।' সাদা দুই টুকরো কাপড় গায়ে জড়িয়ে বারবার এ ঘোষণায় আকাশ-বাতাস মুখর করে আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের মধ্য দিয়ে এবার হজপালন করলেন প্রায় ২৫ লাখ মুসলিম। আরাফাতের ময়দানে ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি সফেদ-শুভ্র কাপড় পরে চোখে পানি নিয়ে মোনাজাত করেছেন হাজিরা জীবনের যাবতীয় পাপ মাফের জন্য।
এবার হজপালন করেছেন ২৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪০৬ জন। ২০১৮ সালে হজপালন করেছিলেন ২৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৭৫ জন। গতবারের তুলনায় এবার হজপালনকারীর সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৩১ জন বেশি। এবারের হজপালনকারীদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের হজযাত্রী ছিলো- ১৮ লাখ ৫৫ হাজার ২৭ জন, আর সৌদি আরবের হজপালনকারী ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৯ জন (সৌদি নাগরিক ২ লাখ ১১ হাজার ৩ জন, সৌদিতে কর্মরত বিভিন্ন দেশের নাগরিক ৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৭৬ জন)। এই বিপুল সংখ্যক হজযাত্রীর মধ্যে পুরুষ হজযাত্রী ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ২৩৪ জন (শতকরা ৫৩ ভাগ), নারী হজযাত্রী ১১ লাখ ৪ হাজার ১৭২ জন (শতকরা ৪৭ ভাগ)। এবার ৩ লাখ ৫০ হাজার ৮৩০ দম্পতি হজপালন করেছেন। হজযাত্রীরা আকাশ পথ, সড়ক পথ ও নৌ-পথ ব্যবহার করে হজপালন করতে সৌদি আরব এসেছেন।
হজযাত্রীর সংখ্যা বিবেচনায় এশিয়া মহাদেশ শীর্ষে। আর দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়া। এবার ইন্দোনেশিয়া থেকে হজপালন করছেন ২ লাখ ২১ হাজার হজযাত্রী। বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। বাংলাদেশের হজযাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮। বাংলাদেশি হাজিদের মধ্যে বয়স অনুযায়ী ৪১-৬০ বছর বয়সী যাত্রীর হার শকতরা ৩৪ ভাগ। আর লিঙ্গ অনুযায়ী পুরুষ যাত্রীর সংখ্যা ৬৩ ভাগ। বাংলাদেশ থেকে ঢাকা বিভাগের হজযাত্রী বেশি (শতকরা ৩৩ ভাগ) আর যাত্রী কম সিলেট বিভাগের (শতকরা ২ ভাগ)। হজ অফিস সূত্রে জানা গেছে, শতকরা ৯ ভাগ চাকরিজীবির বিপরীতে শতকরা ৪০ ভাগ ব্যবসায়ী এবার হজ পালন করেছেন।
হজযাত্রীর সংখ্যা হিসেবে শীর্ষ দশের অন্য দেশগুলো হলো- দ্বিতীয় স্থানে পাকিস্তান (১ লাখ ৭৯ হাজার ২১০), তৃতীয় ভারত (১ লাখ ৭০ হাজার), পঞ্চম মিসর (১ লাখ ৮ হাজার), ষষ্ঠ ইরান (৮৬ হাজার ৫০০), সপ্তম তুরস্ক (৭৯ হাজার), অষ্টম নাইজেরিয়া (৭৯ হাজার), নবম আলজেরিয়া (৩৬ হাজার) ও দশম স্থানে রয়েছে মরক্কো (৩১ হাজার)।
উল্লেখিত দেশসমূহ বাদে অন্য দেশসমূহের হজযাত্রীর সংখ্যা ৬ লাখ ৩৫ হাজার ১০৬ জন।
এবারও হজ উপলক্ষে সৌদি সরকার ৫ রিয়াল মূল্যমানের ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছে। প্রথমবারের মতো আরাফাতের ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে দেওয়া হজের খুতবা রেডিওর মাধ্যমের সরাসরি ৬টি ভাষায় অনুবাদ করে প্রচার করা হয়েছে। ওই ৬টি ভাষা হলো- ইংরেজি, চাইনিজ, উর্দু, ফার্সি, ফ্রান্স ও মালি। সৌদি সরকারের ব্যবস্থাপনায় প্রথমবারের মতো ৫০ ভাষার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। হজ অনুষ্ঠানের দিনগুলোতে সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয় হজপালনকারীদের মোবাইলে প্রতিদিন বিভিন্ন পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনামূলক প্রায় ৩২ লাখ এসএমএস পাঠিয়েছে।