মদিনা মোনাওয়ারা (সৌদি আরব) থেকে: আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবা। কালো গিলাফে ঢাকা কাবার ছবি ছোটবড় সবার মনে অংকিত। সেই সঙ্গে কাবার চারপাশে নির্মিত মসজিদে হারামের ছবিও। মসজিদে হারাম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল স্থাপনা।
এই স্থাপনাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে কাবাকে ঘিরে গড়ে উঠা বিভিন্ন হোটেল ও মার্কেট। এমনই একটি স্থাপনা হলো 'জমজম টাওয়ার' খ্যাত 'আবরাজ আল বাইত কমপ্লেক্স'। এই কমপ্লেক্সে রয়েছে অত্যাধুনিক সব হোটেল ও বড় বড় সুপার মল। বিশ্বের অন্যতম স্থাপনা এটি। যা বারো মাসই থাকে লোকে লোকারণ্য।
বিশাল এই স্থাপনাটি হারামাইন শরিফাইনের নামে ওয়াকফ করে দেন বাদশা আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ আলে সৌদ। অর্থাৎ এই টাওয়ারের যাবতীয় আয় মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীর উন্নয়ন, পরিচালনা ও রক্ষণা-বেক্ষণের কাজে ব্যয় হয়।
কাবা শরিফের দক্ষিণ গেটের কাছাকাছি ৭টি বিশাল টাওয়ারের আবরাজ আল বাইত কমপ্লেক্সের মাঝে তৈরি করা হয়েছে রয়েল 'মক্কা ক্লক টাওয়ার'। এ টাওয়ারের ওপর বসানো হয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঘড়ি 'মক্কা ঘড়ি'। এ ঘড়িটি পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম ঘড়ি।
হজ ও উমরা উপলক্ষে প্রতি বছর মক্কায় লাখ লাখ মুসলমান যাতায়াত করেন। তারা কেনাকাটা না হোক দেখার জন্য হলেও জমজম টাওয়ার ঘুরে দেখেন। কিন্তু তাদের অনেকেই জানেন না, তার চোখের সামনে থাকা ঘড়িটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঘড়ি। ১৪২২ হিজরিতে এ ঘড়ির নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৪৩০ হিজরিতে। পরে এক বছর ঘড়ির বিভিন্ন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ১৪৩১ (২০১০ সালে) হিজরির ১ মহররম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
গ্রিনিচ মান সময় বা গ্রিনিচ মান টাইম (GMT)-এর বিকল্প হিসেবে তৈরি করা হয়েছে 'মক্কা মান সময়' বা Mecca Mean Time (MMT)। সাধারণত সারাবিশ্বের সময় নির্ধারিত হয় গ্রিনিচ মান সময় অনুসরণে। কিন্তু পৃথিবীর বৃহত্তম এ ঘড়িটি চলে আরব সময়সূচী অনুযায়ী। যা গ্রিনিচ সময় থেকে তিন ঘণ্টা এগিয়ে।
১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নির্মিত চতুর্মুখী ঘড়িটির এক মুখে লাগানো হয়েছে ৯ কোটি ৮০ লাখ পিস গ্লাস মোজাইক। শিলালিপির ওপর শৈল্পিক কারুকার্যে অলঙ্করণ করে আরবিতে লেখা আছে- 'আল্লাহু আকবর'। যা ২১০০০ রঙিন বিজলি বাতির আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠে।
আল্লাহতায়ালার নামের ওপরের দিকে ৫৯০ মিটার উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে সোনা দিয়ে মোড়ানো ৭৫ ফুট ডায়ামিটারের একটি বাঁকা চাঁদ।
এই স্থাপনার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ছিল সৌদি আরবের বিন লাদেন গ্রুপ। ডিজাইন করেছেন সুইস ও জার্মানির প্রকৌশলীরা। ঘড়িটির প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জার্মানির এসএল রাশ কোম্পানি।
তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে সেবাহির মলে যে ঘড়িটি আছে আয়তনের দিক দিয়ে এটিই ছিল এতদিন বিশ্বের বড় ঘড়ি, যার ডায়াল ছিল ৩৬ মিটার চওড়া। কিন্তু মক্কা ঘড়ির ডায়াল ৪৩ মিটার। যা লন্ডনের বিগবেনের চেয়ে ৬ গুণ বড়।
বিশেষ বিশেষ দিবস উপলক্ষে এ ঘড়ির ওপরে স্থাপিত মিনার থেকে আকাশে বিচ্ছুরিত হয় ১৬টি উজ্জ্বল আলোক রশ্মি। যা আকাশের ১০ কিলোমিটার উঁচুতে ছড়িয়ে যায়।
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ফ্লাশলাইটের মাধ্যমে আলো জ্বালিয়ে নামাজের ইঙ্গিত দেওয়া হয় এখান থেকে। মক্কার চারপাশ থেকে রাতে ১৭ কিলোমিটার এবং দিনে ১২ কিলোমিটার দূর থেকে স্পষ্টভাবে ঘড়িতে সময় দেখা যায়। আর ঘড়িতে স্থাপিত প্রায় ২০ লাখ LED বাতি আল্লাহতায়ালার নামকে উজ্জ্বল করে রাখে রাতভর।