কাতারে বাংলাদেশি ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়োগ পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষণায় বলা হয়েছে, কাতারের ওয়াকফ ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাংলাদেশি ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়োগ পরীক্ষার জন্য মোহাম্মদপুরের কবরস্থান মসজিদে (সলিমুল্লাহ রোডে) ২২ নভেম্বর থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদনপত্র গ্রহণ ও সিরিয়াল নম্বর দেওয়া হবে। ২৯ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
অক্টোবর মাসে প্রায় দু’শ জন ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়োগের জন্য এ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে স্পষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ না করে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয় কাতার ওয়াকফ ও ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ থেকে ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়োগ প্রক্রিয়া।
কাতার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে প্রাথমিক বাছাই কমিটির সদস্য মাওলানা ফখরুল হুদা ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়োগ পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি তার ফেসবুক পেইজে পরীক্ষার্থীদের উপকারার্থে ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণের শর্তাবলী উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো-
আবেদনের সময় যা লাগবে
১. মাথায় (গাতরা) রুমালসহ সদ্য উঠানো দুই কপি রঙিন ছবি।
২. পাসপোর্ট (না থাকলে) জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা ভোটার আইডির ফটোকপি। পরীক্ষা দেওয়ার সময় পূর্বে জমাকৃত পরিচয়পত্রের মূলকপি সঙ্গে থাকতে হবে।
আবেদনের শর্তাবলী
১. প্রার্থীকে সঠিক আকিদায় বিশ্বাসী হতে হবে। দ্বীনদার, আমানতদার এবং দায়িত্ব পালনে বিশ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি উত্তম আদর্শ ও চরিত্রের অধিকারী হিসেবে পরিচিতি থাকতে হবে।
২. প্রার্থীর বয়স হতে হবে ন্যূনতম ২০ বছর এবং অনূর্ধ্ব ৪৫ বছর। তাকে মসজিদের যাবতীয় দায়িত্ব পালনে সক্ষম হতে হবে।
৩. প্রার্থীকে ইমাম হাফসের রেওয়ায়েতে সমগ্র কোরআন পূর্ণমাত্রায় ভালোভাবে মুখস্থ থাকার পাশাপাশি তাজবিদসহ সুন্দর উপস্থাপনায় পারদর্শী এবং সুমধুর কন্ঠের অধিকারী হতে হবে।
উল্লেখ্য, কণ্ঠ সুন্দর হওয়া ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়োগ লাভের মৌলিক শর্ত।
৪. ইবাদত সংক্রান্ত মাসয়ালা-মাসায়েল জানা থাকতে হবে। বিশেষ করে পবিত্রতা অর্জন ও নামাজ সংক্রান্ত মাসয়ালা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। সুন্নতে নববীর আলোকে ইবাদত পালনের যোগ্যতা রাখতে হবে।
যেসব দায়িত্ব পালন করতে হবে
১. কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী মসজিদ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজে ইমামকে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে। ইমাম ছুটিতে গেলে তার অনুপস্থিতিতে সানি ইমাম হিসেবে নামাজ পড়ানোর পাশাপাশি অন্যসব দায়িত্বও পালন করতে হবে।
২. যথাসময়ে আজান দেওয়ারসহ ওয়াজারাতুল আওকাফ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে নামাজ কায়েম করতে হবে।
৩. মসজিদ এবং অজুখানা ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে হবে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী মসজিদ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ সম্পাদনে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।
৪. কাজ এবং কর্মীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্তের ওপর আপত্তি করা যাবে না।
৫. নিয়োগ বদলিযোগ্য। সুতরাং কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনে রাষ্ট্রের যে কোনো মসজিদে দায়িত্ব পালন করার মানসিকতা থাকতে হবে। প্রার্থীর পক্ষ থেকে রাজধানীর কাছে কিংবা দূরে অথবা অন্যকোনো শহরে নিজের চাহিদামতো স্থানে দায়িত্ব পালনের শর্ত দেওয়া যাবে না।
৬. নিয়োগ লাভের ৫ বছরের ভেতরে নিজ পরিবার-পরিজনকে কাতার নেওয়া যাবে।
৭. মসজিদ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ঘোষিত সব ইশতেহারের ওপর আমল করা অত্যাবশ্যক ও বাধ্যতামূলক।
যেসব কিতাব পড়তে হবে
কাতার ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত ইসলামের মৌলিক আকিদা ও ফেকাহ বিষয়ক নির্ধারিত কিতাবাদি অধ্যয়ন করতে হবে।
১. ‘মানারুস সাবিল ফি শারহিদ দালিল’ নামক ফেকাহ বিষয়ক কিতাব থেকে পবিত্রতা অর্জনের বিষয় এবং নামাজের মাসয়ালা-মাসায়েল খুব ভালো করে শিখে নিতে হবে।
২. ‘আলামুস সুন্নাহ আল মানশুরাহ’ নামক আকিদা বিষয়ক গ্রন্থ থেকে ইসলামি আকিদা-বিশ্বাসের জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
প্রয়োজনীয় শর্তাবলী
১. প্রার্থীকে মোয়াজ্জিন পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। মাসিক বেতন হবে ৩ হাজার ৮০০ কাতারি রিয়াল। চাকরিতে যোগদানের তারিখ থেকে প্রত্যেক ইংরেজি মাসের শেষে মাসিক বেতন প্রদান করা হবে।
২. চুক্তির মেয়াদ হবে এক বছর। এক বছর পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো পক্ষ চুক্তি শেষ করতে আগ্রহ না দেখাবে।
৩. বার্ষিক ভ্রমণ বাবদ বিজনেস ক্লাসের টিকেট সমপরিমাণ অর্থ পাবেন।
৪. প্রার্থী অন্যে কোনো কাজ করতে পারবে না। বিনিময় নিয়ে হোক বা বিনিময় ছাড়া হোক। তা কোরআন মজিদ পাঠদান হোক বা অন্য কিছু। তবে কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি থাকলে করতে পারবে।
৫. প্রার্থীকে রাষ্ট্রীয় নিয়মকানুন এবং সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি-নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
৬. চাকরির মেয়াদ শেষে (মানব সম্পদ) নিয়মমাফিক অবসর ভাতা পাবেন। তবে শর্ত হলো চাকরির মেয়াদ ন্যূনতম এক বছর হতে হবে।
চাকরির আবেদনপত্র জমা নেওয়া কিংবা পরীক্ষা এবং সাক্ষাৎকারে উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে আওকাফ মন্ত্রণালয় আবেদনকারীকে চাকরি দিতে অথবা সাক্ষাৎকার নিতে বাধ্য নন।
মেধা, আচরণ, মনোমুগ্ধকর কোরআন তেলাওয়াত, শুদ্ধ আরবি ও অন্যান্য সাফল্যের কারণে বাংলাদেশি ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের পারস্য উপসাগরীয় দেশ কাতারে।
কাতারের বিভিন্ন মসজিদের মুয়াজ্জিন ও ইমামদের বড় অংশ বাংলাদেশি। দেশটির ২ হাজার ৪শ’র মতো মসজিদে প্রায় ১ হাজার ৩শ’ বাংলাদেশি ইমাম ও মুয়াজ্জিন কর্মরত। কাতারিদের কাছে মুসলিম রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশি ইমাম-মুয়াজ্জিন বেশ সম্মানিত।