মিয়ানমারকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে আলোচনায় ১০ হাজার ৩৮০ বর্গকিলোমিটারের দেশ গাম্বিয়া। দেশটির মোট জনসংখ্যা বাংলাদেশের একটি জেলারও কম, মাত্র ২০ লাখ। অনেকে গাম্বিয়ার নাম আগে শুনেনি, এবার শুনছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সাহস করে মামলার কারণে।
আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) এই মামলা নানা কারণে যুগান্তকারী। তাই শান্তিকামী মানুষের দৃষ্টি এখন নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে। সেই সঙ্গে আলোচনায় প্রতিবেশী না হয়েও বৈশ্বিক সনদে স্বাক্ষরকারী হিসেবে মিয়ানমার থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরের ভিন্ন আরেক উপমহাদেশের রাষ্ট্র গাম্বিয়া।
পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট এই দেশটি অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রিজ (ওআইসি)-এর পক্ষে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত, রোহিঙ্গাদের ধ্বংসসাধন, পাইকারি হত্যা, ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতা, বসতভিটা থেকে তাড়িয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করার মতো অপরাধের বিচার চেয়ে মামলা করেছে।
সেই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য কিছু অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নেওয়ারও আবেদন জানিয়েছে গাম্বিয়া। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যাসহ সব ধরনের নিপীড়ন বন্ধ রাখা এবং গণহত্যার সব ধরনের আলামত নষ্ট না করা।
রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিচারে গাম্বিয়াকে সব ধরনের সহযোগিতা আর সমর্থন দেবে কানাডা ও নেদারল্যান্ডস।
গাম্বিয়ার রাষ্ট্রীয় নাম গাম্বিয়া ইসলামি প্রজাতন্ত্র। পশ্চিম আফ্রিকার একটি রাষ্ট্র, এটি আফ্রিকা মহাদেশের মূল ভূখন্ডের ক্ষুদ্রতম দেশ। এর উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে সেনেগাল দ্বারা পরিবেষ্টিত। পশ্চিমে রয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর। গাম্বিয়া নদী দেশটির মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে পতিত হয়েছে। বন্দর শহর বানজুল দেশটির রাজধানী আর সেরেকুন্দা দেশের বৃহত্তম শহর।
গাম্বিয়া একটি কৃষিপ্রধান দেশ, প্রধান ফসল বাদাম। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র। পর্যটন শিল্প থেকেও আয় হয়। আটলান্টিক সাগরের উপকূলের সমুদ্রসৈকতগুলোতে ঘুরতে এবং গাম্বিয়া নদীর বিচিত্র পাখপাখালি দেখতে পর্যটকেরা গাম্বিয়ায় যান।
গাম্বিয়া ১৯শ’ শতকে ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়। ১৯৬৫ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পর দেশটি একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গণ্য হয়। ১৯৯৪ সালে এক রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা হয় এবং সামরিক নেতা ইয়াহিয়া জাম্মেহ ক্ষমতা দখল করে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশটি শাসন করেছেন। এর পর থেকে আদামা বারো দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গাম্বিয়ার জনসংখ্যার শতকরা ৯৫ ভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। মুসলিমদের পাশাপাশি দেশটিতে রোমান ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের খ্রিস্টানরাও বসবাস করেন।
২০১৫ সালের ১১ ডিসেম্বর দেশটিকে ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জাম্মেহ এ ঘোষণা দেন। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হলে দেশটিতে অন্য ধর্মের অনুসারীরা তাদের ধর্মকর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবেন।
গাম্বিয়ায় কর্মস্থলে নারীদের চুল খোলা রাখা নিষিদ্ধ। রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষায় গাম্বিয়ায় নাচ-গান এবং ড্রামসহ সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজানো নিষিদ্ধ।
গাম্বিয়াতে বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন মসজিদ রয়েছে। কিং ফাহাদ মসজিদ গাম্বিয়ার রাজধানী বানজুলের অন্যতম প্রধান মসজিদ। মসজিদটি ১৯৮৮ সালে নির্মিত হয়। গাম্বিয়ার প্রথম মসজিদ নির্মিত হয় ১৯৩০ সালে। এ ছাড়া রাজধানী বানজুল, সেরেকুন্দা ও ডেম্বাকুন্দা শহরেও বেশ কিছু মসজিদ রয়েছে। বেশিরভাগ মসজিদ বিভিন্ন মুসলিম দেশের অর্থায়নে নির্মিত।
গাম্বিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থার প্রথম থেকেই কোরআন ও ইসলাম শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়েছে ইসলামকে প্রাধান্য দিয়ে। প্রায় প্রতি পরিবারে রয়েছে কোরআনের হাফেজ। বাচ্চাদের কোরআন শিক্ষা দেওয়া তাদের ঐতিহ্যের অংশবিশেষ। কোরআনিক স্কুলে তারা পৃষ্ঠপোষকতা করে বেশ গুরুত্ব দিয়ে।
২০১৯ সালের হজে গাম্বিয়া থেকে ১৭শ’ জন হজযাত্রী হজপালনের জন্য সৌদি আরব গমন করেন।