সূরা দোহা পবিত্র কোরআনের ৯৩তম সূরা। মক্কায় নাজিল হওয়া এ সূরায় রয়েছে ১১টি আয়াত। এ সূরায় বলা হয়েছে, ১. শপথ পূর্বাহ্নের, ২. শপথ রাতের যখন তা গভীর হয়, ৩. আপনার পালনকর্তা আপনাকে ত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি, ৪. আপনার জন্যে পরকাল ইহকাল অপেক্ষা শ্রেয়, ৫. আপনার পালনকর্তা সত্বরই আপনাকে দান করবেন, অতঃপর আপনি সন্তুষ্ট হবেন, ৬. তিনি কি আপনাকে এতিমরূপে পাননি? অতঃপর তিনি আশ্রয় দিয়েছেন, ৭. তিনি আপনাকে শরিয়ত সম্পর্কে বেখবর পেয়েছেন, অতঃপর পথ প্রদর্শন করেছেন, ৮. তিনি আপনাকে পেয়েছেন নিঃস্ব, অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন, ৯. সুতরাং আপনি এতিমের প্রতি কঠোর হবেন না, ১০. সওয়ালকারীকে ধমক দেবেন না, ১১. এবং আপনার পালনকর্তার নেয়ামতের কথা প্রকাশ করুন।
সূরা দোহা নাজিলের প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, একবার একটানা ১৫ দিন নবী করিম (সা.)-এর কাছে অহি নাজিল হয়নি। এ সময় মক্কার কাফের-মুশরিকরা বলাবলি করছিল, মুহাম্মদের প্রতিপালক তাকে ত্যাগ করেছেন ও তাকে শত্রু মনে করেন। মুহাম্মদ যদি নবী হতেন, তাহলে অবশ্যই তার কাছে নিয়মিত অহি তথা খোদায়ি প্রত্যাদেশ নাজিল হতো। এ অবস্থায় সূরা দোহা নাজিল হয় এবং আল্লাহতায়ালা নবী করিম (সা.) কে জানিয়ে দেন যে, তিনি তাকে ত্যাগ করেননি, বরং তাকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্যই অহি নাজিলে কিছুটা বিরতি দেওয়া হয়। তাই শত্রুদের এমন দাবির কোনো ভিত্তি নেই। আর আল্লাহতায়ালা নবী করিম (সা.)-এর ওপর বিরক্ত, হয়েছেন কিংবা তাকে ত্যাগ করেছেন এমনও নয়।
এ ছাড়াও নবী করিম (সা.) যে সব সময়ই আল্লাহতায়ালার অনেক বিশেষ অনুগ্রহ ও দয়া পেয়ে আসছেন সেটাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে সূরা দোহায়। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, নবী করিম (সা.) কে এত বেশি খোদায়ি নেয়ামত দেওয়া হবে যে, তিনি তাতে সন্তুষ্ট হবেন। এ ভবিষ্যদ্বাণীর আলাকে নবী করিম (সা.) দুনিয়াতে তার শত্রুদের ওপর বিজয়ী হয়েছেন এবং তার নেতৃত্বে আল্লাহর মনোনীত শ্রেষ্ঠ ও একমাত্র ধর্ম ইসলাম গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। আর পরকালে তো আরও অনেক বিশাল অনুগ্রহ এবং সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সম্মান ও করুণাগুলো পাবেন তিনি। সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ রাসূল ও নবী হিসেবে তিনি মানবজাতির প্রধান নেতা এবং উম্মতের মুক্তির ব্যাপারে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে, ফলে তিনি খুব খুশি হবেন।
নবী করিম (সা.)-এর প্রতি খোদায়ি অনুগ্রহের বর্ণনা সূরা দোহার ছয় থেকে আট নম্বর আয়াতে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আল্লাহ নবীকে এতিমরূপে পেয়েছেন, অতঃপর তিনি আশ্রয় দিয়েছেন, নবীকে শরিয়ত সম্পর্কে বেখবর পেয়েছেন, অতঃপর পথ দেখিয়েছেন, এমনকি আল্লাহতায়ালা নবী করিম (সা.) কে নিঃস্ব অবস্থায় পেয়েছেন অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন।
সূরায় ‘ইয়াতিম’ (পিতৃহীন) বলে নবী করিম (সা.)-এর শৈশবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর বয়স যখন মাতৃগর্ভে ছয় মাস, তখন তিনি তার বাবা মারা যায়। ছয় বছর বয়সে তিনি মা আমেনাকেও হারা। এরপর ৮ বছর বয়সে অভিভাবক ও তত্ত্বাবধানকারী প্রিয় দাদা আবদুল মোত্তালিবকে হারান, এরপর চাচা আবু তালিব হন নবীর তত্ত্বাবধায়ক ও অভিভাবক।
তাই সূরা দোহায় মহানবীকে (সা.) বলা হয়েছে, আপনি এতিম ছিলেন। তাই এতিমের বেদনা আপনি অন্যদের তুলনায় বেশি অবগত, তাই আপনি এতিমের প্রতি কখনও কঠোর হবেন না, বরং তাদের সহায় হবেন। আপনি নিজে নিঃস্ব ছিলেন ও দারিদ্রের বেদনা অনুভব করেছেন, তাই কোনো সাহায্যপ্রার্থী ও দরিদ্রকে ফিরিয়ে দেবেন না। নিঃস্বতা আর দারিদ্রের পর আল্লাহতায়ালার দয়া ও অনুগ্রহ ভোগ করেছেন বলে খোদায়ী অনুগ্রহ, করুণা ও দয়ার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন। তাই আল্লাহর সব নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন এবং সর্বত্র আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। বস্তুত আল্লাহতায়ালা তার প্রিয়তম রাসূলের মাধ্যমে এ নির্দেশ সব মুসলমানকে দিচ্ছেন। মুসলমানরা যেনো এতিম, অসহায়, নিংস্ব ও দরিদ্রদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। তাদের প্রতি কোনো ধরনের কঠোর আচরণ না করে।