শ্রেষ্ঠ আমল হজ, বিনিময়ে জান্নাত

, ইসলাম

ড. মুফতি মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-09-01 21:34:53

১৪ জুলাই শুরু হবে হজ ফ্লাইট। বাংলাদেশ থেকে এবার প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলামান হজপালনের জন্যে সৌদি আরব গমন করবেন।এবার যারা হজে যাচ্ছেন, তাদের প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। হজ পালনেচ্ছুদের সুবিধার্থে বার্তা২৪.কম ধারাবাহিকভাবে হজের নিয়ম-কানুন, মাসয়ালা, আমল ও প্রয়োজনীয় দোয়া প্রকাশ করবে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ থাকছে সংক্ষিপ্ত হজগাইডের দ্বিতীয় পর্ব

হজের ফজিলত বা উপকারিতা
মানুষ সবকাজেই লাভ খুঁজে। লাভ পেলেই এগিয়ে যায় তা পালনে। আখেরাতের দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক লাভ রয়েছে হজে।

১. হজের মাধ্যমে ক্ষমা পাওয়া যায়
মুমিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ক্ষমা। যদি মাফ পেয়ে যায় তাহলে তার আর কোনো চিন্তা নেই।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হজ আদায় করলো- যৌন বিষয় ও গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকলো, সে সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর মতো (গোনাহমুক্ত হয়ে) ঘরে ফিরল।’ -সহিহ বোখারি: ১৪১৪

আরেক বর্ণনায় রয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় ইসলাম বিগত সব (পাপ) মুছে দেয়। নিশ্চয় হিজরত তার পূর্বের সব গোনাহ মুছে দেয়। অবশ্যই হজ বিগত জীবনের সব অপরাধ মাফ করে দেয়। -সহিহ মুসলিম: ১৭৩

২. জান্নাত মিলবে
হজ আদায় করলে তা যদি কবুল হয় তাহলে পুরস্কার হিসেবে পাওয়া যাবে জান্নাত। যেখানে আল্লাহর দিদার (সাক্ষাত) পাওয়া যাবে। পাওয়া যাবে অফুরন্ত নিয়ামত। যে জান্নাতে একবার প্রবেশ করবে যে দোজখের আগুন থেকে বেঁচে যাবে, কাটাবে শান্তিময় সময়।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘একটি উমরা বিগত উমরার পর থেকে হয়ে যাওয়া গোনাহের ক্ষতিপূরণ। আর মাবরুর হজের পুরস্কার অবশ্যই জান্নাত।’ -সহিহ বোখারি: ১৬৫০

মাবরুর হজ বলতে কী বুঝায়? এ নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে।
১. মাবরুর হজ মানে- কবুল হজ।
২. লৌকিকতাহীন হজ।
৩. যে হজের পর আর গোনাহ হয় না।
৪. যে হজ করার পর দুনিয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যায়, আর আখেরাতের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে। -মুয়াল্লিমুল হুজ্জাজ, ২২

আরও পড়ুন: আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম

৩. হজ শ্রেষ্ঠ আমল
হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- কোন আমলটি শ্রেষ্ঠ। তিনি জবাবে বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলের ওপর ঈমান আনা। আরেকজন জানতে চাইলো, তারপর কোনটি? হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ। আবার জিজ্ঞাসা করা হলো, অতপর? নবী করিম (সা.) বললেন- কবুল হজ।’ -সহিহ বোখারি: ১৪২২

এ ছাড়া হজের সময় পালনীয় প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা সওয়াব ও ফজিলত রয়েছে। যেমন কাবার দিকে তাকিয়ে থাকা, তওয়াফ করা, নামাজ পড়া, দুই পাহাড়ের মাঝে দৌঁড়ানো, পাথর নিক্ষেপ করা, আরাফায় অবস্থান, মুজদালিফায় অবস্থান, কোরবানি করা এসবের জন্য আলাদা আলাদা সওয়াব রয়েছে।

আপনি কেন হজ করবেন?
আপনার ওপর হজ ফরজ হলে মুসলিম হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে চাইলে অবশ্যই হজ করতে হবে। এখানে অন্য কোনো কারণ, লাভ-ক্ষতি খোঁজার সুযোগ নেই। যদি একবার হজ করে থাকেন তাহলে আবার কেন হজ করবেন? হজের কী তাৎপর্য রয়েছে, কী লাভ রয়েছে তা-ই বিবেচ্য বিষয়। পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে-

১. মকবুল হজের মাধ্যমে জান্নাত পাওয়া যায়।

২. বিগত জীবনের গোনাহ মাফ হয়।

৩. নিজের জীবনে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠে হজের মাধ্যমে।

৪. হজের সফরে কাফনের কাপড়ের মতো ইহরামের কাপড় পরিধান করে পরোক্ষভাবে কবরের জন্য প্রস্তুত এ বিষয়টিই জানান দেওয়া হয়। হাজিরা যেন আখেরাতের পথিক।

৫. ইহরামের অবস্থায় ঝগড়া ও পাপাচার থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হয়। অনেক জায়েজ কাজও আল্লাহর পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে করতে পারে না। এতে আত্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষা অর্জন করা যায়। আত্মনিয়ন্ত্রিত ব্যক্তি আখেরাতে তো সফল হবেই, সে পার্থিব জীবনেও সফল হয়।

৬. নবী- রাসূলরা যেসব স্থানে হেঁটে বেড়িয়েছেন সেসব স্থানে পথচলা সত্যিই সৌভাগ্যের ব্যাপার।

অারও পড়ুন: বিষন্নতা ও মানসিক চাপ কমাতে কোরআন তেলাওয়াত

৭. বায়তুল্লাহ শরীফে এক রাকাত নামাজ পড়লে এক লাখ রাকাত নামাজ পড়ার সওয়াব পাওয়া যায়। হজের সফরে মসজিদে হারামে শত শত রাকাত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে লক্ষ-কোটি সওয়াব অর্জন করে আখেরাতে নাজাতের পথকে সুগম করা যায়।

যাদের ওপর হজ ফরজ
যে ব্যক্তি তার নিজ প্রয়োজনীয় বস্তুর অতিরিক্ত এমন সম্পদের মালিক হন যার মাধ্যমে হজের মাসে মক্কায় যাতায়াত করতে পারবেন এবং হজকালীন খরচ বহন করতে পারবেন। পাশাপাশি এ সময়ে পরিবারের খরচের ব্যবস্থাও করে যেতে পারবেন তার ওপর হজ আদায় করা ফরজ।

সহজ ভাষায়, বর্তমান সময়ের ক্ষেত্রে যারা হজের মাসগুলোতে সরকার নির্ধারিত হজের সর্বনিম্ন খরচ (বর্তমানে সাড়ে তিন লাখ টাকার মতো) ও পরিবারের ৪০-৪২ দিনের আনুমানিক (ব্যক্তিভেদে) খরচ ৫০ হাজার টাকার মালিক হন তাদের ওপর হজ করা ফরজ।

কারও ঋণ বা নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যয় থাকলে তা মূল সম্পদ থেকে বাদ যাবে। ছেলে-মেয়ের বিয়ে, বাড়ি নির্মাণ নিত্য প্রয়োজনীয়ের অন্তর্ভুক্ত নয়।

কারও ওপর যদি হজ করা ফরজ না হয় তাহলে কর্জ করে বা লোকজনের কাছে সাহায্য চেয়ে হজ করা উচিত নয়। তবু যদি কেউ এভাবে হজ আদায় করে তাহলে তার হজ আদায় হয়ে যাবে। পরবর্তীতে সম্পদের মাধ্যমে তিনি উপযুক্ত হলেও আবার হজ করা তার জন্য ফরয হবে না। -কিতাবুল হজ, পৃ. ১১

হজ জীবনে একবার আদায় করা ফরজ। একাধিকবার আদায় করলে তা নফল হিসেবে গণ্য হবে। তাতেও হজের পূর্ণ ফজিলত পাওয়া যাবে।

তবে লোকদেখানো নফল হজ গোনাহের কারণ।

ফরজ হজ প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় আদায় করতে হবে। কেউ ছোটবেলায় হজ করে থাকলে পরবর্তীতে প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর আবার হজের উপযুক্ত হলে পুনরায় হজ আদায় করা তার জন্য ফরজ।

লেখক: অধ্যাপক, উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

হজ বিষয়ে জানতে আরও পড়ুন

** হজ: আল্লাহপ্রেমিকদের মিলনমেলা

** হিসাব রক্ষক ও ফিল্ড সুপারভাইজার এখন সরকারি হজগাইড!

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর