১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস। ১৯৭৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ সভার ২৮তম অধিবেশনে আরবি ভাষাকে এর দাপ্তরিক ভাষার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। ২০১২ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে ১৯০তম অধিবেশনে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৮ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
২০১২ সাল থেকে ইউনেসকোসহ আরব বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের দেশ দিবসটি বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা ও সভা-সেমিনারের মাধ্যমে পালন করে আসছে। আরবি ভাষার গুরুত্ব বৃদ্ধি, আরবি ভাষার প্রচার-প্রসার এবং বিশ্বময় আরবি ভাষাকে ছড়িয়ে দিতে দিবসটি অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে।
প্রতিবছর দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন আরবিয় সংস্থা ও ইউনেসকোর যৌথ উদ্যোগে একটি স্লোগান বা আলোচনার প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো- ‘আরবি ভাষা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।’
২০১৩ সালে প্রথম এ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা, ‘মিডিয়া ও আরবি ভাষা।’ ২০১৪ সালে ‘আরবি হরফ।’ ২০১৫ সালে ‘আরবি ভাষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান।’ ২০১৬ সালে এর প্রতিপাদ্য ছিলো, ‘আরবি ভাষার প্রচার জোরদার করা।’ ২০১৭ সালে ‘আরবি ভাষা ও নতুন তথ্য-প্রযুক্তি এবং ২০১৮ সালের প্রতিপাদ্য ছিলো- ‘আরবি ভাষা ও তারুণ্য।’
এবারের দিবসটি পালনে সৌদি আরবের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা অনুষদে রয়েছে আলোচনা অনুষ্ঠান, আরবি ভাষা ইনস্টিটিউটে বিদেশি ছাত্রদের জন্য রয়েছে বিশেষ অুনষ্ঠান।
বাংলাদেশে ২০১৪ সাল থেকে ‘মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশ’ বা ‘আরবি ভাষা ও সাহিত্য কেন্দ্র বাংলাদেশ’ দিবসটি পালন করে আসছে। এবারও মারকায কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন আয়োজন করেছে।
বিভিন্ন দেশে অবস্থিত সৌদি দূতাবাস দিবসটি পালনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন মাদরাসা, মারকায এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আরবি ভাষা দিবস নানা আয়োজনের মাধ্যমে পালন করছে। এসব আয়োজনের মূল লক্ষ্য হলো, সবার কাছে আরবি ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরা। যেনো মানুষ আরবি ভাষা শিখতে আগ্রহী হয়।
এবারের আরবি ভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়ের দাবি হচ্ছে, অন্যান্য ভাষা যেভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছে, তেমনিভাবে এর মাধ্যমে যেন আরবি ভাষারও খেদমত করা যায়। বিভিন্নক্ষেত্রে রোবট কিংবা এ জাতীয় যন্ত্রের মাধ্যমে আরবিতে খেদমত নেওয়া যায়। এ ছাড়া এর মাধ্যমে যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাষাবিষয়ক অনেক সমস্যার সমাধান, অনুবাদ, মূল আরবি পাঠ ও বিশ্লেষণ করা যায়।
তবে আরবি ভাষার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়টি কতটুকু ফলপ্রসু হবে তা নিয়ে আরবি ভাষাবিদদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অক্ষম হবে সে ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত পোষণ করেছেন। এটা আসলে আরও গবেষণার দাবি রাখে। প্রযুক্তির উৎকর্ষ এ বিষয়ে ভবিষ্যতে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
১৮ ডিসেম্বর আরবি ভাষা দিবস হলেও আরবি সবসময়ের জন্য আমাদের কাছে সমান গুরুত্ব রাখে। আরবি আমাদের ইসলামের ভাষা, পবিত্র কোরআনের ভাষা; আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষা। তাই দিবস পালন আমাদের মূল উদ্দেশ্য নয়, বরং সবসময় গুরুত্বের সঙ্গে আমাদের সবাইকে আরবি ভাষার প্রচার-প্রসারে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। এ ভাষার উৎকর্ষ সাধনে যোগ্যদের আত্মনিয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনীয় সবধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সাধারণ মুসলমানদের কোরআনে কারিম শেখানোর মাধ্যমে আরবি ভাষার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টিতে আলেমসমাজকে ব্যাপক কাজ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের উচ্চতর আরবি ভাষা শিখতে এবং এ ভাষায় বুৎপত্তি অর্জনে আত্মনিয়োগ করতে হবে। শুধু কোরআনে কারিম ও ইবাদত-বন্দেগির ভাষা হিসেবে নয় বরং জীবন্ত ও ব্যবহারিক ভাষা হিসেবে আরবি ভাষা এবং আরবি শব্দের ব্যাপক প্রচারে সচেষ্ট হতে হবে। আরবি ভাষার প্রচারে আরবি মাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।
সার্বিক উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কোরআনের ভাষা আরবি, এ বিষয়টি প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের হৃদয়ে স্থান করে নিক, এ ভাষা ছড়িয়ে পরুক সবখানে; সব প্রতিষ্ঠানে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে স্কুল ও মাদরাসার সিলেবাসে আরও বেশি করে আরবি বিষয়াদি অন্তুর্ভুক্ত করা সময়ের দাবি। আমাদের প্রত্যাশা, আরবির ভালোবাসায় ভরে উঠুক প্রতিটি হৃদয়, প্রতিটি প্রাণ; আজকের দিনে এই হোক আমাদের আন্তরিক প্রত্যাশা।
মুহিউদ্দীন ফারুকী: প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশ