ক্রোয়েশিয়ার ব্যতিক্রমী নকশার রিজেকা মসজিদ

, ইসলাম

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 22:37:20

চলতি বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার উত্থান অনেকটা রূপকথার মতো। ইউরোপের দেশটি টানা দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাইবেকারে জয়ী হয়ে ১৯৯৮ সালের পর আবারও সেমিফাইনালের স্বাদ পেলো। তাদের এ জয়ে রাজধানী জাগ্রেবে উৎসবের আমেজ দেখা গেছে।

৫৬ হাজার ৫৯৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশ ক্রোয়েশিয়ায় ২০১৫ সালে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন কোলিনদা গ্রেবার কিতারোভিচ। তিনি ক্রোয়েশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর রিজেকা’র বাসিন্দা।

ক্রোয়েশিয়ার মোট জনসংখ্যা ৪৫ লাখের মতো। তন্মধ্যে মুসলমান ৭০ হাজারের কাছাকাছি। ইসলাম ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্ম। দেশটিতে বসবাসকারী মুসলিমদের বেশিরভাগ আলবেনিয়া, বসনিয়া ও হারজেগোভিনা থেকে আগত। ক্রোয়েশিয়ায় ইসলামের আগমন অটোম্যান আমলে হলেও দেশটিতে প্রথম মসজিদ প্রতিষ্ঠিত গুঞ্জায় ১৯৬৯ সালে।

রাজধানীতে অবস্থিত জাগ্রেব মসিজদ দেশের বৃহত্তম মসজিদ। এটি ১৯৮৭ সালে নির্মিত হয়। সরকার অনুমোদিত বেশকিছু নামাজখানা ছাড়া আরও ১১টি মসজিদ রয়েছে ক্রোয়েশিয়ায়। এর অন্যতম একটি হলো- ক্রোয়েশিয়ার উপকূলীয় শহর রিজেকা ইসলামিক সেন্টার ও মসজিদ।

মসজিদটি বিশ্বের অন্যতম সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি মসজিদ। এর স্থাপত্যশৈলী সহজেই যেকোনো মানুষের মন কাড়ে। রাতে মসজিদটিকে আরও বেশি সুন্দর দেখায়।

দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের নকশা করেছেন ক্রোয়েশিয়ান স্থপতি দসান দজমোঞ্জ (১৯২৮-২০০৯)। তিনি মেটাল ভাস্কর্য নিয়ে বেশি কাজ করেন, এ জন্যই তিনি বিখ্যাত। তিনি সর্বপ্রথম রিজেকা ইসলামিক সেন্টারের একটি সংক্ষিপ্ত জিজাইন করেন। পরে স্থাপত্যবিদ ডার্কো ভ্লাও ভিও এবং ব্রংকো ভুনিভোইচ তার নকশায় কিছুটা পরিবর্তন করে নতুন ডিজাইন করেন। এখন যে নকশার ওপর মসজিদ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠিত।

নতুন ডিজাইনে দেখা যাচ্ছে, মসজিদের গম্বুজগুলো প্রচলিত অন্য গম্বুজের মতো নয়। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সিলভার কালারের গম্বুজগুলো ডিমের ভাঙা খোসার মতো। এগুলো মাটি থেকে উত্থিত হয়ে একটি অন্যটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। গম্বুজের ওপরে আলাদা কোনো কিছু ব্যবহার করা হয়নি।

মসজিদ ভবন থেকে একটু দূরে অবিস্থত মসজিদের একমাত্র মিনারটি বেশ দৃষ্টিনন্দন। ছাই রঙের পিলারকে মেটালিকের পাত দ্বার মুড়িয়ে মিনারটি নির্মিত। মিনারে শিখরে প্রচলিত মিনারের মতো একটি সূক্ষ্ণফলা ও চাঁদের মতো দু’টো গোলাকার স্বর্ণালী পিণ্ড রয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, মিনারটি আপনমনে খেলছে খোলা আকাশে। এটাই শিল্প, শিল্পের সৌন্দর্য।

মসজিদের ভেতরের নকশা খুবই মনোমুগ্ধকর ও অসাধারণ। যা মুসল্লিদের মনে এনে দেয় আধ্যাত্মিক ও শান্ত এক অনুভূতি। একটিমাত্র প্রবেশপথ ছাড়া মসজিদটির আর কোনো প্রবেশপথ নেই, নেই কোনো জানালাও। মসজিদের গম্বুজগুলোর ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে আলো-বাতাস প্রবেশের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা।

এই মসজিদ কমপ্লেক্স স্থাপনের ইতিহাস বেশ লম্বা। রিজেকার মুসলমানরা ১৯৬৮ সালে এখানে প্রথম মসজিদ স্থাপনের প্রস্তাব করেন। পরে তাদেরকে ১০ হাজার বর্গমিটার জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে অস্থায়ী স্থাপনায় মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়।

অবশেষে নানা ঘটনা-পরিক্রমা শেষে এই ডিজাইনে মসজিদ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালে, আর তা শেষ হয় ২০১৩ সালে।

ক্রোয়েশিয়ার মসজিদগুলোতে ইসলাম ও কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। মুসলিমদের বিয়ে, ইসলামি বিভিন্ন অনুষ্ঠান এসব মসজিদকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। ক্রোয়েশিয়ায় তাবলিগের কাজ চলে, নারীরা বোরকাসহ চলাফেরা করতে পারেন। প্রায় সব শপিংমলেই হালাল খাবারের দোকান রয়েছে।

হজ বিষয়ে জানতে আরও পড়ুন

** হজ: আল্লাহপ্রেমিকদের মিলনমেলা

** হিসাব রক্ষক ও ফিল্ড সুপারভাইজার এখন সরকারি হজগাইড!

** শ্রেষ্ঠ আমল হজ, বিনিময়ে জান্নাত

** নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ?

** যেসব পদ্ধতিতে হজ আদায় করা যায়

এ সম্পর্কিত আরও খবর