মান্নতের আভিধানিক অর্থ অঙ্গিকার বা প্রতিজ্ঞা করা। ইসলামের পরিভাষায় মান্নত বলা হয়, কোনো কাজ যা ইতোপূর্বে আবশ্যক ছিলো না, ওই কাজকে নিজের ওপর ওয়াজিব করে নেওয়া।
মান্নত একটি ইবাদত। নামাজ, রোজা, দোয়া করা এগুলো যেমন ইবাদত; যা একমাত্র আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্যে তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য করা জরুরি। তদ্রূপ মান্নত কেবল আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্যে, তার নামে হতে হবে। কোনো মাজার, পীর বা কোনো সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বা তার সন্তুষ্ট কামনার্থে মান্নত করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। তাই কোনো মাজারের জন্য কিংবা উদ্দেশ্যে মান্নত করা নাজায়েজ। এটা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। এসব কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
অলি-আউলিয়া কিংবা মাজারের নামে যেসব গরু-ছাগল দেওয়া হয় এবং তাদের কবরের কাছে গিয়ে তা জবেহ করা হয়; ইসলামি স্কলাররা একে শিরকের অন্তর্ভুক্ত বলে সাব্যস্ত করেছেন।
সহিহ বোখারি ও সহিহ মুসলিমে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মশহুর হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ওই হাদিসে বলা হয়েছে, মান্নত করো না। কারণ তাকদিরের লিখনে মান্নত কোনো কাজেই আসে না। এর দ্বারা তো শুধু কৃপণের কাছ থেকে (সম্পদ) বের করা হয়। -মিশকাতুল মাসাবিহ: পৃ. ১৯৭
হাদিসে আছে, সদকার দ্বারা বিপদ দূর হয়। কিন্তু মান্নতে আছে এক ধরনের ‘বাণিজ্য।’ কাজ হলে সদকা দিবো, না হলে দিবো না- এ মানসিকতা গ্রহণযোগ্য নয়।
মান্নত বিষয়ে চারটি মূলনীতি হলো-
এক. মান্নত পূরণ করা ওই সময় ওয়াজিব, যখন কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যাপারে ইবাদতে মাকসুদার নিয়ত করবে। ইবাদতে মাকসুদা বলা হয়, যে ইবাদত কোনো মাধ্যম ছাড়া স্বয়ংসম্পূর্ণ। যেমন- নফল নামাজ, রোজা, উমরা, সদকা বা দান ও জিকির ইত্যাদি।
দুই. মান্নত যদি ইবাদতে মাকসুদার না করা হয়, তাহলে ওই মান্নত পূরণ করা আবশ্যক নয়।
তিন. মান্নত করার সময় মান্নতকে কোনো জায়গা, যুগ, কাল এবং সময়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয় না। তথা ওইসব শব্দের মাধ্যমে মান্নতকে সম্পৃক্ত করা অনর্থক।
চার. মান্নতের কোনো কাজা-কাফফারা নেই। তবে কাজ সফল হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মান্নত পূরণ করা উচিত।
এ সব মূলনীতির আলোকে যেসব মাসয়ালা বের হয়, সেগুলো হলো-
মাসয়ালা: কোনো ব্যক্তি বললো, যদি আমার ছোট বোনের মাথা ব্যথা ভালো হয় তাহলে আমি একটি রোজা রাখবো। তাহলে তার ছোট বোনের মাথা ব্যথা ভালো হলে বড় ভাইয়ের ওপর একটি নফল রোজা ওয়াজিব।
মাসয়ালা: কোনো ব্যক্তি বললো, আমার বাবা সিলেট গেছে। তিনি যদি সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফেরেন, তাহলে আমি মদিনা শরিফে গিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়বো। তাহলে তার বাবা সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসলে যে কোনো মসজিদে বা যে কোনো জায়গায় দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া ওয়াজিব।
মাসয়ালা: কোনো ব্যক্তি যদি বলে, দুই বছরের মধ্যে আমার সরকারি চাকরি হলে উমুক মাজারে গিয়ে একটি ছাগল জবেহ করবো।
অথবা এই মান্নত করে, যদি আমার সন্তান অমুক রোগ হতে আরোগ্য লাভ করলে আমি অমুক মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে একটি ছাগল (জানের বদলে জান) দিবো।
উপরোক্ত দুই মাসয়ালার ক্ষেত্রে মান্নত পূরণ করা ওয়াজিব নয়। কারণ এখানে মান্নতই বিশুদ্ধ হয়নি।
তারপরও যদি সে মান্নত পূরণ করতে চায় (মনের প্রশান্তির জন্য), তবে সে ওই মান্নতের সমপরিমাণ (সম্পদ) টাকা কোনো গরিব-মিসকিনকে দান করে দেবে।
মাজারে কোনো কিছু মান্নত করার নিয়ত করলে ওই ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালার দরবারে তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। -সুনানে আবু দাউদ: ২/৪৬৯
মনে রাখতে হবে, কোনো সৃষ্টিজীব, অলি-আউলিয়া, পীর-দরবেশ কিংবা মাজারবাসী কারো কোনো ধরনের প্রয়োজন পূরণ করতে পারে না। কাউকে সুস্থতা দিতে পারে না। আরোগ্য দান করা, বালা-মুসিবত দূর করা একমাত্র আল্লাহতায়ালার বৈশিষ্ট্য। কোনো সৃষ্টিজীবের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য আছে মনে করা শিরক।
সুতরাং মাজারে মান্নত করলে মাজারওয়ালা খুশি হবেন, অসুখ ভালো হয়ে যাবে এমন ধারণা সম্পূর্ণ শিরক।