ভবিষ্যত গড়ায় ইসলামের উৎসাহ

বিশেষ নিবন্ধ, ইসলাম

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম | 2023-08-31 22:36:09

ইসলাম হলো- হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শের ভিত্তিতে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার কাছে নিঃশর্ত ও পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ। এই আত্মসমর্পণ ব্যতীত দুনিয়ার জীবন যেমন ব্যর্থ, তেমনি পরকালীন জীবনও ব্যর্থ। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। এর মধ্যে আছে মানবজীবনের প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে নির্দেশনা। তাই ইসলামকে জীবনে পূর্ণাঙ্গভাবে ধারণ না করে চলার আদৌ কোনো সুযোগ নেই। মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নীতিমালা ইসলামে বর্তমান। জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে আয়-উপার্জন, জীবন পরিচালনার নানা দিক, সঞ্চয়, খরচ এমনকি চিকিৎসাসেবার বিধানও বাদ যায়নি ইসলামি জীবনবিধানে। রাষ্ট্র পরিচালনার বিধি-বিধান, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ও কূটনীতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয়েও ইসলামের নির্দেশনা সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান। ইসলামের এই সুবিন্যস্ত বিষয় থেকে আজকে আলোচনা করবো মানুষের ভবিষ্যত জীবন প্রসঙ্গে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে।

আমরা জানি, জন্মের পর থেকে মানুষের জীবনে বিভিন্ন পরিবর্তন আসে। কখনও সে শিশু আবার কখনও সে কিশোর, এরপর সময়ের ব্যবধানে যৌবন পাড়ি দিয়ে সে পৌঁছায় বার্ধক্যে। সময়ের এই পরিবর্তন-পরিবর্ধনের মাঝে মানুষ স্বপ্ন দেখে সুন্দর পৃথিবীর এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার। এ জন্য সে বিভিন্ন পরিকল্পনা করে, কাজে মনোযোগ দেয়- যাতে সে তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। ক্ষণস্থায়ী এই পৃথিবীতে আল্লাহ প্রদত্ত বিধানসমূহ পালনের পাশাপাশি মানুষের আনন্দময় জীবনযাপন কিংবা উজ্জ্বল ভবিষ্যত বিনির্মাণের লক্ষে গৃহীত কোনো পরিকল্পনায় ইসলাম বাঁধা দেয় না, বরং ভবিষ্যত জীবন গঠনে এ ধরণের ‘ইচ্ছা ও পরিকল্পনাকে’ ইসলাম সাধুবাদ জানায়। তবে এই জায়গায় কিছু নিয়ম ও শর্ত মানার কথা বলে ইসলাম।

অনেক সশয় দেখা যায়, মানুষ তার ভবিষ্যতের বিভিন্ন বিষয়কে নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় নানা অন্যায় পথে। আয়-উপার্জন থেকে শুরু করে চলাফেরায় তারা অন্যায়কে নিত্যসঙ্গী বানায়, লক্ষ্য হাসিল কিংবা কোনো বিষয় অর্জনের জন্য বিভিন্ন মন্দ পথ ও প্রক্রিয়া অবলম্বন করে। যা ইসলাম কখনও স্বীকৃতি দেয় না। ইসলাম কাউকে ধন-সম্পদ উর্পাজনে নিষেধ করে না। নতুন নতুন বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে নিরুৎসাহিত করে না। শুধুমাত্র বিষয়টি হালালপন্থায় সম্পাদনের কথা বলে ইসলাম।

মানুষ তার মানবিক চাহিদা থেকে ভবিষ্যত জীবনের সুরক্ষা চায়। সন্তানাদির জন্য নিশ্চিন্ত জীবনের পাথেয় রেখে যেতে চায়। এই চাওয়া অন্যায় কিছু নয়, পাপের কাজও নয়। কিন্তু ভবিষ্যত নির্মাণের চিন্তায় অনেকে অবৈধ ও অসত্য পথে চলতে কুন্ঠিত হন না। হালাল-হারামের তোয়াক্কা করেন না। শুধু নিজের স্বার্থ, নিজের অর্জন ও উপার্জন নিয়ে চিন্তা করেন। এমন মনোভাবকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। ইসলাম অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, জীবনের সবকিছুতে, সর্বাবস্থায় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পথকে অনুসরণ করতে হবে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবজাতির জন্য একমাত্র আদর্শ। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর রাসূলের জীবনে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ -সূরা আহজাব: ২১

ইতিহাস সাক্ষ্য, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হয়েছিলেন এক অসভ্য জাতিকে সভ্য করার জন্য। এ জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন, নিখুঁত পরিকল্পনা করেছেন, নানা ছক এঁকেছেন, প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছেন।

বিনিময়ে সুন্দর একটি সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ জন্য আমাদেরও প্রতিটি ভালো ও কল্যাণমূলক কাজ পরিকল্পনা করে, ছক এঁকে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। মনে রাখতে হবে, একটি সুন্দর পরিকল্পনা গৃহীত কাজকে অনেক সহজ করে দেয়। যাদের কাজে কোনো পরিকল্পনা নেই, তাদের কাজের সফলতার মাত্রা অনেক কম। ভবিষ্যত জীবন গঠনে সুন্দর পরিকল্পনা ও সুউচ্চ লক্ষ্য না থাকলে উল্লেখযোগ্য জীবন গঠন সম্ভব নয়। তাই তো দেখা যায়, নিষ্ফল জীবনের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আল্লাহর ওপর ভরসাহীন হয়ে অনেকে নানাবিধ হতাশায় ভোগে। এ হতাশা একজন মানুষকে কুফর পর্যন্ত নিয়ে যায়। ফলে উভয় জগতেই তাকে ব্যর্থ জীবনের গ্লানি টানতে হয়।

তবে সবকিছুর আগে এটা মনে রাখতে হবে, মুসলমান হিসেবে মানুষের সাধ্য খুবই সীমিত। নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে যাওয়ার সুযোগ তার নেই। আবার জীবনে বল্গাহীন হওয়া চলবে না। পার্থিব জগতকে সাজাতে পরকাল ভুলে থাকার সুযোগ নেই। নিজের শরীর ও সংসারকে অস্বীকার করার অবকাশ নেই। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের অধিকার এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। বরং এসব বিষয় ও প্রতিটি বিষয়ের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে, যাবতীয় দিক বিবেচনা করতে হবে। ইচ্ছেমতো জীবন পরিচালনার সুযোগ নেই।

হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, পাঁচটি বিষয়কে অন্য পাঁচটি বিষয়ের ওপর গনিমত মনে করো। বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকাল, অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতা, দারিদ্রের পূর্বে ধনাঢ্যতা, ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময় এবং মৃত্যুর পূর্বে জীবনের মূল্যায়ন।

আমরা যেভাবেই জীবন অতিবাহিত করি, সর্বদা আমাদের মনে রাখতে হবে পরকালের হিসাব-নিকাশের কথা। ভালো কিছু করে যেতে পারলে পুরস্কার হিসেবে আল্লাহর জান্নাতে স্থান পাবো, অন্যথায় কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। তাই দুনিয়ার ভবিষ্যতের চিন্তার পাশাপাশি আখেরাতের পুঁজিও বানাতে হবে।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, সাতটি বিষয়ের সওয়াব মৃত্যুর পরও মানুষের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে। এই বিষয়গুলো দুনিয়ার সব কাজের সময় সামনে রাখলে দুনিয়া অর্জনের পাশাপাশি পরকালের পাথেয়ও অর্জন হয়ে যাবে খুব সহজে।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি দ্বীনী ইলম শিক্ষা করেছেন অথবা কোনো নদী খনন করেছেন অথবা কোনো কূপ খনন করেছেন অথবা কোনো বৃক্ষরোপণ করেছেন অথবা কোনো মসজিদ নির্মাণ করেছেন অথবা কাউকে একটি কোরআন দান করেছেন অথবা কোনো সুসন্তান রেখে গেছেন যে তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করে। পরকালের কঠিন দিবসে এসব বিষয় মানুষের নাজাতের মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর