হজের উদ্দেশ্য
নবী-রাসূলের স্মৃতি জাগানিয়া স্থানসমূহে কান্নাকাটি করে গোনাহ মাফ করিয়ে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনসহ মানবতার খেদমতই হজের মূল উদ্দেশ্য।
হজের পুরস্কার সমূহ
গোনাহ মাফ: সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করল এবং ওই সফরে সব ধরনের যৌনাকাঙ্ক্ষা, পাপাচার ও ঝগড়াঝাটি থেকে বিরত থাকল, সে এ অবস্থায় ফিরে এলো যেন এই মাত্র মাতৃগর্ভ থেকে আগমন করল। অর্থাৎ মাসুম শিশুর মতো হয়ে গেল।
জান্নাতের সুসংবাদ: তিনি আরও বর্ণনা করেন নবী করিম (সা.) বলেন, ‘মাবরুর হজের (কবুল হজ) বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।’ এর ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট তাবেয়ি হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘হজ আদায়ের পর দুনিয়ার প্রতি অনাগ্রহ ও আখেরাতের কর্মকাণ্ডে আগ্রহ সৃষ্টিই হলো- মাবরুর হজের পরিচয়।’
দারিদ্র্যতা দূর হওয়া: হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বর্ণিত নবী করিম (সা.) বলেন, ‘হজ ও উমরা গোনাহসমূহ মুছে দিয়ে দারিদ্র্যতা দূর করে দেয়, আগুন যেমন সোনা, রুপা ও লোহার ময়লা দূর করে ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়ে তোলে।’
দোয়া বা সুপারিশ কবুলের অধিকার
নবী করিম (সা.) বলেন, প্রকৃত হাজীগণের দোয়া বা সুপারিশ কবুল করা হয়। এক বর্ণনায় এসেছে, একজন হাজি নিজ পরিবার-পরিজনের ৪শ’ লোকের জন্য দোয়া বা সুপারিশের অধিকারী হন। মাসুম শিশুর বায়না যেমন বাবা-মা ফেলতে পারে না, তেমনি মাসুম হাজির দোয়াও আল্লাহতায়ালা কি করে ফেলবেন? তিনি তো পিতার চেয়ে লক্ষ গুণ বেশি মায়াময় দয়াময় রাহমান এবং রাহিম।
হজ না করার ভয়ংকর হুশিয়ারি
হজরত নবী করিম (সা.) বলেন, হজ ফরজ হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যক্তি হজ না করে মারা গেল সে কি ইহুদি না নাসারা হয়ে মারা গেল সে দায়িত্ব আমার নয়। অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে অবহেলা করে হজ তরক (ছেড়ে দেয়) করে আমি জানি না তার মৃত্যু ঈমানের ওপর হবে কি না।’
হজের আগে মক্কায় অবস্থানকালীন আমল
যার ওপর হজ ফরজ তার ওপর উমরা ওয়াজিব। নিজের ওয়াজিব উমরা আদায় হয়ে গেলে সম্ভব হলে নিজ পিতামাতা, নিকটাত্মীয়-স্বজনদের পক্ষে উমরা করে নিতে পারেন। হজের পরে এ সুযোগ নাও পেতে পারেন। ওই সময় প্রচণ্ড ভিড় হয়। উমরার ইহরাম বাঁধার জন্য মক্কাবাসীর মিকাত তানঈম এলাকার আয়েশা মসজিদে যেতে হয়। এর অবস্থান মসজিদে হেরেম থেকে ৪ মাইল উত্তরে। হেরেমের চারদিকেই প্রাইভেট পরিবহন চালকরা আয়েশা আয়েশা বলে ডাকে জনপ্রতি ৫/৮ রিয়াল বাড়া নিয়ে যাওয়া যায়।
এছাড়া ‘সেপ্টেকো’ কোম্পানির লাল রংয়ের বাস, ‘নাফেল’ কোম্পানির সাদা রংয়ের বড় বাস জনপ্রতি ২ রিয়াল ভাড়ায় চলাচল করে। সেপ্টেকো জাবালে উমরের কাছে, নাফেল মেসফালা এলাকায় পাওয়া যায়। এসব যানবাহনে আয়েশা মসজিদ গিয়ে অজু গোসল সেরে ইহরামের কাপড় পরে মসজিদে ইহরামের সুন্নত নামাজ শেষে উমরার নিয়ত করে তালবিয়া পড়তে পড়তে হেরেম শরিফে এসে আবার পূর্বের নিয়মে উমরার কাজ সমাপ্ত করে হালাল হয়ে বাকি সময়টুকু বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে দিন।
শরীরে কুলালে প্রতিদিন ফজরের পর থেকে রোদের প্রখরতা বাড়ার আগেই উমরার কাজ সমাধা করতে পারেন।
নফল তাওয়াফ, উমরা সুযোগ পেলেই করুন এর সওয়াব বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, স্ত্রী, পুত্র-কন্যা এবং নিজ মুরুব্বি-উস্তাদ, পীর-বুজুর্গের নামে উৎসর্গ করুন। এতে মনে এক ধরনের শান্তি পাবেন আর মানসিক শক্তি বাড়বে।