করোনা ভাইরাসের সংক্রণ রোধে দেশে তাবলিগ জামাতের সব কাজ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। তাবলিগ জামাতের আলমি শুরার সর্বসম্মত এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে দেশের সব মারকাজে পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি যাত্রাবাড়ীর মাদানি মসজিদে তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বিদের এক জরুরি মাশওয়ারায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তাবলিগের কাজ স্থগিত প্রসঙ্গে আলমি শুরার অন্যতম সদস্য কাকরাইলের অন্যতম শীর্ষ মুরব্বি হাফেজ মাওলানা জোবায়ের এক অডিও বার্তায় সবাইকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেছেন। সেই সঙ্গে মসজিদে পরিচালিত সমস্ত কাজ যেমন- গাশত, তালিম ইত্যাদি আপাতত বন্ধ রাখতে অনুরোধ করে সঙ্কটময় এ পরিস্থিতিতে উলামায়ে কেরামের পরামর্শ মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
অডিও বার্তায় মাওলানা জোবায়ের বলেন, ‘প্রয়োজনের কারেণ বিভিন্ন উপায়-উপকরণ ব্যবহার করাকে শরিয়ত নিষেধ করেনি। আমরা জানি, ‘তাওয়াক্কুল’ আরবি শব্দ। এর অর্থ ভরসা করা। অর্থাৎ দুনিয়া-আখেরাতের সব কাজে, সব মকসুদ হাসিলের জন্য এবং সব ধরনের বিপদ-মসিবত থেকে রক্ষার জন্য একমাত্র আল্লাহতায়ালার ওপর ভরসা রাখা। এটা ইসলামের শিক্ষা, ঈমানের শিক্ষা।
এখানে একটি বিষযয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। তা হচ্ছে ভরসা ও ব্যবহারের পার্থক্য। উপায়-উপকরণের ওপর ভরসা করা যাবে না অর্থ এই নয় যে, তা ব্যবহার করা যাবে না। বৈধ উপকরণ বৈধ পন্থায় ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু ভরসা রাখতে হবে আল্লাহর ওপর।
অতএব তাওয়াক্কুলের অর্থ না বুঝা কিংবা স্বেচ্ছাচারিতার কারণে যদি একজন মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে এর দায় আমার ওপর বর্তাবে।
তাই, আসুন! আমরা উলামায়ে কেরামের রাহনুমায়ি (নির্দেশনা) মেনে চলতে চেষ্টা করি। জজবার (আবেগ) চেয়ে শরিয়তকে অধিক কদর (গুরুত্ব) দেই। ঘরের মধ্যে আমলের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করি। কারও ব্যাক্তিগত জজবার দায় যেন তাবলিগের মেহনতের ওপর না আসে সেদিকে খেয়াল রাখি।’
তাবলিগের মুরব্বিদের সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ৬শ’ জামাত নিজ নিজ এলাকায় চলে গেছেন।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের শ্রী পেতালিং মসজিদ এবং ভারতের নিজামুদ্দিন মসজিদে তাবলিগ জামাতে যোগ দেওয়া অনেকেই করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের তাবলিগের মুরব্বিরা আপাতত তাবলিগের কাজ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিলেন।
এদিকে বাংলাদেশে দাওয়াতে তাবলিগের কাজে আসা ৩২১ বিদেশি ঢাকার দু’টি মসজিদে জড়ো করে রাখা হয়েছে। যাত্রাবাড়ী ও রমনা থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৩২১ জনের মধ্যে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে আছেন ১৯১ জন। তারা মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী। বাকি ১৩০ জনকে জড়ো করে রাখা হয়েছে যাত্রাবাড়ীর কলাপট্টি মদিনা জামে মসজিদে। বিমানবন্দর খুললেই তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠানো হবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ জামাতের যে ১৯১ জন বিদেশি আছে। তাদেরকে আমরা লকডাউন করে রেখেছি। বাইরে থেকে কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ভেতর থেকে তারা চাইলেও আমরা তাকে তাদের বের হতে দিচ্ছি না।
ওসি আরও বলেন, আপাতত সিদ্ধান্ত এ রকমই আছে। পরবর্তীতে যে নির্দেশনা আসবে তা পালন করা হবে।
এদিকে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাজহারুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, যাত্রাবাড়ীর কলাপট্টি মদিনা জামে মসজিদে যে ১৩০ জন তাবলিগ জামাতের বিদেশি আছেন, তারা সবাই সুস্থ আছেন। দেশ ছাড়ার অনুমতি পেলেই তাদেরকে আমরা ছেড়ে দেব। তার আগে আমরা সেখানেই তাদের নজরদারিতে রেখেছি। খোঁজ-খবর রাখছি কিন্তু সাধারণ মানুষদের সঙ্গে তাদের মেলামেশা করতে দিচ্ছি না।