করোনার কারণে ব্যাপকভাবে মসজিদে খতমে তারাবি না হলেও সীমিত পরিসরে চলছে। চলতি রমজানের ৫ম তারাবিতে আজ তেলাওয়াত করা হবে সূরা মায়েদার ৮৩ নম্বর আয়াত থেকে সূরা আরাফের ১১ নম্বর আয়াত পর্যন্ত।
আজকের তেলাওয়াতকৃত অংশের বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে অন্যতম বিষয় হলো- হালাল খাবারের প্রতি গুরুত্বারোপ। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি আজকের তারাবিতে ছয় বার উচ্চারিত হবে। যেমন-
১. হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে সব উৎকৃষ্ট বস্তু হালাল করেছেন তাকে হারাম সাব্যস্ত করো না এবং সীমালংঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের ভালোবাসেন না। আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে হালাল, উৎকৃষ্ট বস্তু খাও এবং যেই আল্লাহর প্রতি তোমরা ঈমান রাখ তাকে ভয় করে চলো। -সূরা মায়েদা: ৮৭-৮৮
২. হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমার বেদি ও লটারির তীর এসবই অপবিত্র, শয়তানি কাজ। সুতরাং এসব পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করো। শয়তান তো মদ জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষের বীজ বপণ করতে চায় এবং চায় তোমাদেরকে আল্লাহর জিকির ও নামাজ থেকে বিরত রাখতে। সুতরাং বলো, তোমরা কি (ওইসব জিনিস থেকে) নিবৃত্ত হবে? -সূরা মায়েদা: ৯০-৯১
৩. সুতরাং এমন সব (হালাল) পশু থেকে খাও, যাতে আল্লাহ নাম নেওয়া হয়েছে- যদি তোমরা সত্যিই তার নিদর্শনাবলীতে ঈমান রাখো। -সূরা আনআম: ১১৮
৪. তোমাদের জন্য এমন কী বাঁধা আছে, যদ্দরুন তোমরা যে সকল পশুতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছে তা থেকে খাও না? অথচ তিনি তোমাদের জন্য (সাধারণ অবস্থায়) যা কিছু হারাম করেছেন তা তিনি তোমাদেরকে বিশদভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তবে তোমরা যা খেতে বাধ্য হয়ে যাও (তার কথা ভিন্ন, হারাম হওয়া সত্ত্বেও তখন তা খাওয়ার অনুমতি থাকে)। বহু লোক কোনো রকমের জ্ঞান ছাড়া (কেবল) নিজেদের খেয়ালখুশির ভিত্তিতে অন্যদেরকে বিপদগামী করে। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক সীমালংঘনকারীদের সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত। -সূরা আনআম: ১১৯
৫. যে পশুতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, তা থেকে খেয়ো না। এরূপ করা কঠিন গোনাহ। (হে মুসলিমগণ!) শয়তান তার বন্ধুদেরকে তোমাদের সঙ্গে বিতর্ক করার জন্য প্ররোচণা দিতে থাকে। তোমরা যদি তাদের কথামতো চলো- তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হয়ে যাবে। -সূরা আনআম: ১২১
৬. (হে নবী! তাদেরকে) বলো, আমার প্রতি যে অহি নাজিল করা হয়েছে তাতে আমি এমন কোনো জিনিস পাই না, যা কোনো আহারকারীর জন্য হারাম, যদি না তা মৃত জন্তু বা বহমান রক্ত কিংবা শোকরের গোশত হয়। কেননা তা নাপাক। অথবা যদি হয় এমন গোনাহের পশু, যাকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে জবেহ করা হয়েছে। হ্যাঁ যে ব্যক্তি বাধ্য হয়ে যায়, আর তার উদ্দেশ্য স্বাদ আস্বাদন না হয় এবং প্রয়োজনের সীমালংঘন করে না, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা আনআম: ১৪৫
হালাল খাবার গ্রহণ আর হারাম খাবার বর্জন ইসলামের অতিব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। মানুষ আল্লাহর দাস। যেভাবে নামাজ দ্বারা মানুষের দাসত্ব প্রকাশ করতে হয় সেভাবে হালাল খাবার খেয়ে আর হারাম খাবার বর্জন করেও দাসত্ব প্রকাশ করতে হয়। নিজের ইচ্ছা হলেই কোনো কিছু খাওয়া যাবে না। আগে জানতে হবে, এ খাবার আমার জন্য হালাল কিনা।
আবার সাধনার নামে সিদ্ধি অর্জনের উদ্দেশ্যে মনগড়াভাবে কোনো হালাল খাবারকে বর্জন করা যাবে না। নিজের আগ্রহ বিসর্জন দিয়ে প্রভুর দেওয়া সীমানা মেনে হারাম গ্রহণ না করা আর হালাল না ছাড়ার মধ্য দিয়েই একজন দাসের প্রকৃত দাসত্ব ফুঁটে উঠবে। তাই একজন ঈমানদারের জন্য হালাল খাবার গ্রহণ আর হারাম খাবার বর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় বিধান। এটা ইসলামের ধর্মের অপরিহার্য অবিচ্ছেদ্য অংশ।
হালাল খাবারকে হারাম সাব্যস্ত করার কয়েকটি পর্যায় আছে। এক. কোনো হালাল খাবারকে হারাম বিশ্বাস করা। দুই. কোনো হালাল খাবার বর্জনের শপথ করা। তিন. কোনো হালাল খাবার বর্জনকে উত্তম বা পূন্যের কাজ মনে করা। যদি কোনো ব্যক্তি কোনো হালাল খাবারকে হারাম বিশ্বাস করে তবে সে ঈমানহারা হয়ে যাবে কাফের হয়ে যাবে। আর যদি কোনো হালাল খাবার বর্জনের শপথ করে তবে তার জন্য এ শপথ ভঙ্গ করে সেই খাবার খাওয়া ওয়াজিব এবং শপথ ভঙ্গের কাফফারা প্রদান করাও ওয়াজিব।
আর যদি কেউ কোনো হালাল খাবারকে হারাম বিশ্বাস করলো না কিন্তু তা বর্জন করাকে উত্তম বা সওয়াবের কাজ মনে করে তবে সে নিকৃষ্টতম বিদআতে লিপ্ত হলো। যেমন- অমুসলিম আহত হবে এ কথা ভেবে কেউ যদি গরুর গোশত না খাওয়াকে শ্রেয় মনে করল তাহলে সে বিদআত করল। আবার কোনো রোগের কারণে বিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে যদি কোনো হালাল খাবার বর্জন করা হয় তবে এতে কোনো সমস্যা নেই।
হালাল খাবারকে হারাম সাব্যস্ত করার পর্যায় হলো- আল্লাহর দেওয়া সীমালংঘন করা। মদ ইসলামের বিধানমতে হারাম খাবার। জুয়ার উপার্জনও হারাম। চাই তা রাষ্ট্রীয়ভাবে পর্যায়ে অনুমোদিত হোক অথবা অনুমোদনবিহীন ব্যক্তিগত পর্যায়ে হোক। ভাগ্য যাচাইয়ের নামে কিছু মানুষকে বঞ্চিত করে কিছু মানুষকে বেশি প্রদানের যত পদ্ধতি আছে তা সবই জুয়া। ‘যদি লাইগ্যা যায়’ জুয়ার একটি মুখরোচক স্লোগান আমাদের দেশে প্রচলিত আছে। সরকারিভাবেও আমাদের দেশে জুয়ার অনেক আয়োজন আছে। মুসলমানমাত্রই এগুলো থেকে কঠোরভাবে বিরত থাকতে হবে। প্রতিমার বেদিতে যে সব খাবার রাখা হয় সেগুলোও মুসলমানদের জন্য হারাম। অনেক মুসলমানকে দেখা যায় অন্য ধর্মের পূজার প্রসাদ খেতে। পূজার প্রসাদ প্রতিমার বেদিতে উৎসর্গিত- তাই তা মুসলমানের জন্য হালাল নয়।
হালাল পশুর গোশত হালাল হওয়ার জন্য অতিরিক্ত তিনটি শর্ত রয়েছে। যথা- ১. পশু জীবিত থাকতেই গলার দিক দিয়ে জবাই করা, ২. আল্লাহর নামে জবাই করা অথবা প্রশিক্ষিত শিকারী পশুকে শিকার ধরার জন্য প্রেরণের সময় আল্লাহর নামে প্রেরণ করা ও ৩. জবাইকারী অথবা শিকারী প্রাণী প্রেরণকারী মুসলমান হওয়া।
মুসলমানদের জন্য মৃত পশু হারাম। আল্লাহতায়ালা ছাড়া অন্য কারও নামে জবাই করা পশুও হারাম। জবাইকারী যদি অমুসলিম হয় তাহলে সেই গোশতও হারাম। মোড়কাবদ্ধ আমদানিকৃত গোশত যারা খাচ্ছেন, বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ, অনুষ্ঠানে যারা মুরগীর গোশত, খাসির গোশত খাচ্ছেন একটু সতর্কতার সঙ্গে ৩টি বিষয় নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ১. এটা কিসের গোশত, ২. পশুটা কে জবাই করেছিল ও ৩. জবাইয়ের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলেছিল কিনা?
হালাল খাবার সম্পর্কে সচেতনতা, সতর্কতা ঈমান সম্পর্কে সচেতন ও সতর্ক থাকার প্রমাণ। অতএব, এ স্থানে কোনো অলসতা নয়, কেন অসচেতনতা নয়।