দিন দিন বেড়ে চলেছে আত্মহত্যার প্রবণতা। পত্র-পত্রিকা খুললে হরহামেশা দেখতে পাই আত্মহত্যার সংবাদ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যনুযায়ী সারাবিশ্বে আত্মহত্যায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম। প্রতিবছর বাংলাদেশে দশ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যার মতো জঘন্য পথ বেছে নেয়। অন্যান্য দেশে যেখানে পুরুষের আত্মহত্যার পরিমাণ নারীদের তুলনায় দুই গুণ বেশি। সেখানে বাংলাদেশে সম্পূর্ন উল্টো চিত্র। পুরুষের তুলনায় নারীদের মাঝে আত্মহননের প্রবণতা বেশি। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে গড়ে প্রতিদিন ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। যাদের বেশিরভাগই নারী। নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট আত্মহত্যাকারীদের বেশিরভাগের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ যারা টগবগে যুবক। বাংলাদেশে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
ইসলামে আত্মহত্যা মহাপাপ ও অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। আমাদের সমাজে অনেক লোক আছে, যারা জীবনযাপনের কঠিন দুঃখ-দুর্দশা ও ব্যর্থতার গ্লানি থেকে পরিত্রাণের জন্য অথবা আবেগের বশবর্তী হয়ে বেছে নেয় আত্মহননের পথ।
তখন তার মধ্যে বিবেক-বুদ্ধি আত্মবোধ, মনুষত্ব বলতে কিছুই থাকে না। সে তখন তার মাঝে লালন করে আত্মঘাতীপূর্ণ চিন্তা-চেতনা। ভুলে যায় নিজেকে, বুঝতে পারে না সে; ফলে আত্মহত্যা নামক জঘন্য কাজটি কেন করছে? কি লাভ হবে জীবনকে নিঃশেষ করে? সে তার জীবনে ও পরিবারে ডেকে আনে মহা বিপর্যয়।
পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে নির্দেশিত হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর করুণাময়।’ -সূরা আন নিসা: ২৯-৩০
পারিবারিক বিপর্যয় কিংবা মানসিক অশান্তিসহ নানা সঙ্কটে ইসলাম মানুষকে ধৈর্যধারণের কথা বলেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।’ -সূরা বাকারা: ১৫৩
কারণ আল্লাহতায়ালা দুনিয়াকে পরীক্ষাগার বানিয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলবোই, মাঝে-মধ্যে তোমাদেরকে বিপদের আতঙ্ক, ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে, সম্পদ, জীবন, পণ্য-ফল-ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে। আর যারা কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য-নিষ্ঠার সঙ্গে চেষ্টা করে, তাদেরকে সুখবর দাও।’ –সূরা আল বাকারা: ১৫৫
দুনিয়াতে ভালোমন্দ সবই থাকবে। তবে যেকোনো পরিস্থিতে নিরাশ হওয়া যাবে না। কারণ মুমিন কখনও নিরাশ হতে পারে না। শয়তান মানুষকে নিরাশ করে দেয়। আর অধিকাংশ মানুষ হতাশা আর নৈরাশ্য থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কারণ তার সামনে আপাতদৃষ্টিতে বেছে থাকার সকল উপায় রূদ্ধ।
আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘বলো, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ। তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেন। সন্দেহ নেই, তিনিই ক্ষমাশীল দয়ালু।’ -সূরা যুমার: ৫৩
তাই নিরাশ হওয়া যাবে না, কারণ নিরাশ হওয়া কুফরির নামান্তর। দুনিয়ার কষ্ট লাঘব করার জন্য মানুষ আত্মহত্যা করে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে কষ্টকে লাঘব করেনি বরং নিজেকে এক সুনিশ্চিত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। হাদিসে আত্মহত্যাকারীর ব্যাপারে জঘন্য হুঁশিয়ারী এসেছে।
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামেও তার সেই যন্ত্রণাকে অব্যাহত রাখা হবে। আর যে ব্যক্তি ধারালো কোনো কিছু দিয়ে আত্মহত্যা করবে, তার সেই যন্ত্রণাকেও জাহান্নামে অব্যাহত রাখা হবে।’ –সহিহ বোখারি
কোরআনে কারিমে এমন কিছু আয়াত রয়েছে, যেগুলো আমাদেরকে জীবনের প্রকৃত অবস্থাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। কিছু আয়াত রয়েছে যা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমরা কীভাবে নিজেরাই নিজেদের জীবনটাকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দেই। আর কিছু আয়াত রয়েছে যা আমাদেরকে জীবনের সব দুঃখ, কষ্ট, ভয় হাসিমুখে পার করার শক্তি-সাহস জোগায়।
এ জন্য আমরা নিজেদের এবং সন্তানদের অঙ্কুর থেকেই ধর্মীয় শিক্ষা ও ধর্মীয় অনুভূতি জাগিয়ে তুলি তাহলে আমাদের সমাজ ধীরে ধীরে আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হবে।
আত্মহত্যার শাস্তি সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি বলেছেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের এক ব্যক্তি আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। সে একটি ছুরি দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে। এরপর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়।’ এ ব্যক্তি সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
আল্লাহতায়ালা আমাদের এ অমার্জনীয় জঘণ্য অপবাদ থেকে বেছে থাকার তওফিক দান করুন। আমিন।