হজের দিন উপস্থিত হজপালনকারীরা আরাফাতের ময়দানে থাকেন বিধায় কাবা চত্ত্বরে মুসল্লিদের ভিড় কম থাকে। এই সুযোগে পুরনো রীতি অনুযায়ী ৯ জিলহজ হজের দিন কাবা শরিফে নতুন গিলাফ পরানো হয়।
সেই ধারাবাহিকতায় সোমবার (২০ আগস্ট) ফজরের পর শুরু হয় গিলাফ পরানোর কাজ। গিলাফ পরিবর্তনের কাজে সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি, রাজপরিবারের সদস্য, বিভিন্ন মুসলিম দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। কাবা শরিফের গিলাফ পরিবর্তনের কাজ তদারকি করছেন মসজিদের হারামের প্রধান ইমাম ও খতিব ড. শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইস।
গিলাফ পরিবর্তনের কার্যক্রম সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করছে।
এর আগে ১২ আগস্ট কাবা শরিফের সিনিয়র তত্ত্বাবধায়ক সালেহ বিন জাইন আল আবিদিন আল শায়েবের কাছে কাবা শরিফের গিলাফ (কিসওয়া) হস্তান্তর করেন মক্কার গভর্নর প্রিন্স খালেদ আল ফয়সাল।
কাবা শরিফের দরজা ও বাইরের গিলাফ দু’টোই মজবুত রেশমি কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়। গিলাফের মোট পাঁচটি টুকরা বানানো হয়। চারটি টুকরা চারদিকে এবং পঞ্চম টুকরাটি দরজায় লাগানো হয়। টুকরাগুলো পরস্পর সেলাইযুক্ত। এর পর্দার উচ্চতা ১৪ মিটার।
কাবার গিলাফের প্রতিটি কাপড়ের জন্য প্রয়োজন হয় ৬৭০ কেজি রেশম, ১৫০ কেজি সোনা ও রুপার চিকন তার। ৪৭ থান সিল্কের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয় এই গিলাফ। গিলাফের মোট আয়তন ৬৫৮ বর্গমিটার। প্রতিটি থান ১ মিটার লম্বা, ৯৫ সেন্টিমিটার চওড়া। একটা আরেকটার সঙ্গে সেলাই করা।
প্রতিবছর দু’টি করে (একটি সতর্কতামূলক) গিলাফ তৈরি হয়। একটি হাতে তৈরি। এটা বানাতে সময় লাগে আট-নয় মাস। অন্যটি মেশিনে মাত্র এক মাসে তৈরি করা হয়।
কাবার গিলাফ বানানো হয় বিশেষ একটি কারখানায়। কারখানাটি মক্কা মোকাররমার চার কিলোমিটার দূরে উম্মুল জুদ এলাকায় অবস্থিত। এখান থেকে হুজরায়ে নববির গিলাফও তৈরি করা হয়।
১৩৪৬ হিজরি সনে বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সৌদের শাসনামলে এ কারখানাটি স্থাপন করেন।
কাবার গিলাফ পাল্টানোর কাজকে পবিত্র ও সম্মানের কাজ হিসেবে ইসলামের পূর্ব যুগ থেকে বিবেচনা করা হয়। বছরে একবার এ পবিত্র ঘরের গিলাফ পরিবর্তন করা হয়।
মালিক তুব্বা নামক এক বাদশাহ সর্বপ্রথম কাবাঘরে গিলাফ পরান।
সৌদি আরবে কাবার বিশেষ গিলাফ তৈরির কারখানা স্থাপন করার আগে আগে মিসর, তুরস্ক ও পাকিস্তান থেকে গিলাফ তৈরি করিয়ে আনা হতো।
কাবার গিলাফে রেশমি সুতায় স্বর্ণের প্রলেপযুক্ত তার দিয়ে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে পবিত্র কোরআনের আয়াত উৎকীর্ণ করা হয়। অতি উন্নতমানের কালো কাপড়ের ওপর কোরআনের আয়াত শিল্পীরা নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলেন।
১৪০৩ ও ১৪১৭ হিজরিতে বাদশাহ ফাহাদের সময় কাবার গিলাফ পরিবর্তন করা হয়। তার আগে প্রতি বছর গিলাফ পাল্টানো হতো না। এখন প্রতি বছর হজের সময় পরিবর্তন করা হয়।