হাজী সাহেবরা হজের সমস্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে মক্কা ছাড়তে শুরু করছেন। সোমবার (২৭ আগস্ট) রাত সোয়া দশটার দিকে হজের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর এসে পৌঁছাবে।
প্রথা অনুযায়ী প্রথম ফ্লাইটের হজযাত্রীদের স্বাগত জানাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পদস্থ কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন।
আগামী একমাসের মধ্যে বাংলাদেশের হাজীরা বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবেন। বিমান বন্দর থেকে হাজীরা নিজ নিজ বাড়িতে যাবেন। বাড়িতে যাওয়ার আগে, হজ থেকে ফেরার পর বিশেষ কিছু আমল রয়েছে সেগুলো পালন করা উত্তম। সেসব নিয়েই আজকের এই আযোজন।
হজ থেকে ফিরে এসে নিকটস্থ মসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত। হজ থেকে ফিরে শুকরিয়াস্বরূপ গরিব-মিসকিন ও আত্মীয়স্বজনকে খাবারের দাওয়াত দেওয়া বৈধ। তবে অহংকার, লোক দেখানো ও বিশেষ উদ্দেশ্য সামনে রেখে এমন দাওয়াতের ব্যবস্থা করা ইসলাম অনুমোদন করে না।
ঘরে ফিরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব।
হাজী সাহেবদের অভ্যর্থনা ও শুভেচ্ছা জানানো, তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, মোসাফাহা, কোলাকুলি করা ও তাদের দিয়ে দোয়া করানো মুস্তাহাব। কিন্তু ফুলের মালা দেওয়া, তাদের সম্মানার্থে স্লোগান ইত্যাদি দেওয়া সীমা লঙ্ঘন। তাই এসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।
আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে উপহার-উপঢৌকন দেওয়া সুন্নত। কিন্তু মনের আগ্রহ ছাড়া কেবল প্রথা পালনের জন্য কোনো কাজ করা শরিয়ত অনুমোদন করে না। হাজীদের হাদিয়া দেওয়া ও তাদের কাছ থেকে হাদিয়া গ্রহণ করা এখন প্রথায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এটা নামের জন্য বা চক্ষুলজ্জার কারণে দেওয়া হয়। তাই তা বর্জন করা উচিত।
আমাদের মনে রাখতে হবে, যেকোনো ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তার হুকুম পালন করার জন্য হয়ে থাকে। তেমনি নামের শুরুতে আলহাজ লেখা কিংবা হাজী সাহেব হওয়ার জন্য হজ পালন করা অবৈধ।
তবে হ্যাঁ, মানুষ যদি এমনিতেই সম্মান করে আলহাজ লেখে কিংবা হাজী সাহেব বলে ডাকে, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু নিজের নামের সঙ্গে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হাজী বা আলহাজ ব্যবহার করা কিংবা কেউ এ বিশেষণটি বর্জন করায় মনঃক্ষুণ্ন হওয়া গর্হিত কাজ। এ মনোভাব ইবাদতের তাৎপর্য নষ্ট করে দেয়। আমলকে সওয়াবহীন করে দেয়। যা আল্লাহ কবুল করেন না।
হজ থেকে হাজী সাহেব পাপমুক্ত হয়ে ফিরে আসেন। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘হজ করার পরে যদি সত্যিকার হাজী মাবরুর করে থাকেন (মাবরুর হজ বলা হয় যেই হজ কবুল করা হয়), তাহলে তার অবস্থা হচ্ছে- তিনি নিষ্পাপ হয়ে ফিরে এলেন।’
এখন নিষ্পাপ ব্যক্তি যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন তিনি তার এই হজটাকে পরবর্তী জীবনে ধরে রাখার জন্য। যাতে করে তিনি এ অবস্থায় থাকতে পারেন। স্বেচ্ছায় যাতে কোনো অপরাধ, অন্যায়, কোনো জুলুমের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত না করেন। কারণ, হজ করার পর আল্লাহর অবাধ্যতার সঙ্গে যদি নিজেকে সম্পৃক্ত করে নেন, এর অর্থ হচ্ছে- তিনি আসলেই জান্নাতের কাছে গিয়েও জান্নাতে পৌঁছাতে পারেননি। যেহেতু আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, কিন্তু তিনি সেই ক্ষমার ওপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রাখতে পারেননি।
তাই একজন হাজী হজ শেষে ফিরে তাওহিদ পরিপন্থী কোনো কাজ করবেন না, ব্যক্তিগত জীবনে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহর অনুসরণকে প্রাধান্য দেবেন, ইবাদত-বন্দেগিতে পূর্ণ মনোনিবেশ করবেন, নিয়মিত নামাজের জামাতে শরিক হবেন, জাকাত আদায়ে বিলম্ব করবেন না, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বিরত থাকার পরামর্শ দেবেন। সেই সঙ্গে অন্যের হক নষ্ট করা থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত রাখবেন।
আমাদের সামাজিক প্রথা মতে, হাজী সাহেবদের বিশেষ সম্মানের চোখে দেখা হয়। তাই হাজী সাহেবদের উচিৎ সম্মানটা ধরে রেখে সমাজ সংস্কারে মনোযোগী হওয়া।