পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা, সেখানে মাটির নিচে বিপদ বাড়ছে। শহরের ভূগর্ভস্থ পানিস্তর ক্রমেই নামছে। আর তাতেই কলকাতায় বাড়ছে ভূমি ধসের আশঙ্কা। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা পানির স্তর কমার কারণে আর্সেনিকের প্রকোপও বাড়বে। শহরে পানির অপচয় রুখতে হাজার প্রচার সত্ত্বেও, কাজের কাজ তেমন কিছু হয়নি। বহুতল আবাসনগুলো বোরিং মেশিন ব্যবহার করে মাটির নিচ থেকে পানি তুলে নিচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও বোরিং ব্যবহারে বাড়ছে পানি নিয়ে অসাধু ব্যবসাও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সর্ষের মধ্যেই ভুত রয়েছে। সরকার প্রচার করলেও সবকিছু জেনেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। কলকাতার স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ এর অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরী বক্তব্য, যেভাবে কলকাতার পানিরস্তর কমছে, তাতে এই মুহূর্তে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তবে আগামী দিনে পানির জন্য আরও হাহাকার হতে পারে।
মুলত, কলকাতায় পানীয় জলের চাহিদা মেটায় গঙ্গা এবং ভূগর্ভের পানি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৫৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মাটির নীচের পানিরস্তর ক্রমেই কমেছে। কোথাও ৭ মিটার, কোথাও আবার ১১ মিটার। ২০১৬ থেকে প্রায় ১৪ মিটার কমেছে কলকাতার জলস্তর। আর এভাবে পানিরস্তর নেমে যাওয়ায় কলকাতায় বড়সড় ধস নামতে পারে। যেমনটা সম্প্রতি মাটির তলায় মেট্রোরেলের কাজের সময় উত্তর কলকাতার বউবাজারে ধস নেমেছিল। এরকম ভাবে ফের ধসে যেতে পারে শহরের ঘরবাড়ি। পাশাপাশি পানিস্তর কমায় বাড়তে পারে আর্সেনিকের প্রকোপও।
গবেষণা বলছে, কলকাতার পার্কস্ট্রিট, ক্যামাক স্ট্রিট, পার্ক সার্কাস-সহ বিভিন্ন জায়গায় পানিস্তর অনেকটাই কমেছে। ১৯৮৬ সালে মাটির নীচ থেকে পানি তোলার পরিমাণ ছিল দিনে ১২ কোটি ১৫ লাখ লিটার। ২০০৪ সালে তা বেড়ে হয় ২০ কোটি ৮৭ লাখ লিটার। ২০০৬ সালের পর থেকে পানি তোলায় নিয়ন্ত্রণ আনার উদ্যোগ নেয় কলকাতা পুরসভা। অভিযোগ, তাতে বিশেষ কাজ হয়নি।
মাটির নিচের পানি পূর্ণ করে বৃষ্টি। কলকাতায় বছরে ১ হাজার ৬৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টির এই পানি ধরে রাখতে হবে। সেই পানি কৃত্রিমভাবে ভূগর্ভে পাঠাতে হবে। তবেই সম্ভব কলকাতার জলভান্ডার অটুট রাখা। এমনটা করছে ভারতের গুজরাট রাজ্য। তবে কলকাতা এমন চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বড়সড় বিপদের মুখে পড়বে। আর সেদিন খুব বেশি দূরে নেই।