আজও বাঙালির গলা ভেজাচ্ছে শতাব্দী প্রাচীন প্যারামাউন্ট

, কলকাতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কলকাতা | 2024-01-02 20:55:39

তিলোত্তমা নগরী কলকাতা। পুরো কলকাতা যেনো এক চলন্ত ইতিহাস। এই শহরের অলি-গলি, খাবার, খাবারের দোকান, রাস্তা-ঘাট, দালান-কোঠা সবকিছুর মধ্যে রয়েছে এক অদ্ভুত টান। যেমনটা মধ্য কলকাতার পাঠকদের প্রাণকেন্দ্র কলেজ স্ট্রিটের শরবতের দোকান প্যারামাউন্ট। ফাস্টফুড আর বোতলবন্দী কোমল পানীয়র যুগে যার চাহিদা আজও কমেনি বিন্দুমাত্র৷ শতাব্দী প্রাচীন এই শরবত প্রতিষ্ঠানে তরুণ থেকে যুবা সববয়সীরাই আজও ভিড় জমাচ্ছেন সমানতালে।

 

সালটা ছিল ১৯১৮, তৎকালীন ব্রিটিশ বন্দী অবিভক্ত ভারতের কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে, প্যারামাউন্ট শরবতের দোকানটি খোলেন বরিশালবাসী নীহাররঞ্জন মজুমদার৷ নীহাররঞ্জন মজুমদার, সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের সাথে।

এই বিপ্লবী কলকাতায় এসে শরবতের দোকান খোলার কারণ, খুব কাছ থেকে ব্রিটিশ শক্তির উপর নজরদারী করা এবং তৎকালীন তাবড় বিপ্লবীদের সাথে যোগসাধন রাখা, শরবতকে সামনে রেখে। সেইসময় প্যারামাউন্টে শরবত খেতে আসতেন বহু বিখ্যাত মানুষ৷ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মেঘনাথ সাহা, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, জগদীশচন্দ্র বসু, মেঘনাদ সাহা, সত্যেন বসু, কাজী নজরুল ইসলামসহ নানা মনীষী।

এছাড়া স্বাধীনতার পরবর্তীকালে সত্যজিৎ রায়, বিকাশ রায়, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়, শচীন দেব বর্মন, সুচিত্রা সেন, উত্তম কুমার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ বসু, নবনীতা দেবসেন, অমর্ত্য সেন, শঙ্খ ঘোষ, সৌরভ গাঙ্গুলিসহ কে নেই সেই দীর্ঘ তালিকায়৷ দোকানে দেওয়ালে রাখা আছে ফ্রেমবন্দী সেই লম্বা নামের তালিকা।

১৯৭৯ সালে নীহাররঞ্জন মজুমদারের মৃত্যুর পরেও আজও দোকান চলে সেই পুরানো ঘরানায়। বর্তমানে দোকানের দায়িত্বে আছেন মৃগেন্দ্র মজুমদার। তিনি জানান, এক সময় দোকানের নাম ছিল প্যারাডাইস। পরে নাম পরিবর্তন হয়ে হয় প্যারামাউন্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো আছেই সেইসঙ্গে শরবতের চাহিদা আছে দেশ বিদেশের অবাঙালিদের কাছেও। এক সময় গরমকালে ভিড় বেশি হতো এখন সব ঋতুতেই সমানভাবে গলা ভিজিয়েই যান প্যারামাউন্টে এসে।

ছয়ের দশক পর্যন্ত খসখস, চন্দন, ম্যাগনোলিয়ার মতো বিখ্যাত শরবত পাওয়া গেলেও এখন এগুলি আর পাওয়া যায় না দোকানে৷ তবে পাওয়া যায় প্যাশন ফ্রুট, কোকো মালাই, ম্যাঙ্গো শরবত, কেশর মালাই মিলিয়ে মোট ৩১ রকমের শরবত। তবে সব থেকে ফেমাস গ্রীন ম্যাঙ্গো ও ডাবের শরবত।

তিনি জানান, বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ছিলেন নীহাররঞ্জন মজুমদারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তিনিই এসে নীহারবাবুকে বলেছিলেন, ‘এমন একটা শরবত বানাও তো যা খেয়ে পেটও ভরবে আবার তৃষ্ণাও মিটবে। সেই থেকে বসিরহাটের ডাবের পানি, শাঁস এবং এক গোপন ফর্মুলা দিয়ে তৈরি হয় ডাবের শরবত। যা আজও ভারত বিখ্যাত৷ বলা হয় নাকি আজ পর্যন্ত ওই শরবতের ওই স্বাদ কেউ আনতে পারেনি।

শতাব্দী প্রাচীন বাঙালির শরবতের দোকান প্যারামাউন্ট আজও ভারত বিখ্যাত। তাই নীহাররঞ্জন মজুমদারের উত্তরসুরী মৃগেন্দ্র মজুমদারদের ব্যবসা চালানোর জন্য কাগজে বা টিভিতে বিজ্ঞাপনের মতো পাবলিসিটির প্রয়োজন পড়েনি। যার প্রচার চলে লোক মুখে। কারণ আজও চলে নানান এক্সপেরিমেন্টাল শরবত। তার বয়সের ভার দমাতে পারেনি প্যারামাউন্টের জৌলুশ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর