মিন্নির জবানবন্দির আগে এসপির সংবাদ সম্মেলন, প্রশ্ন হাইকোর্টের

, আইন-আদালত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-25 15:36:31

বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাইকোর্ট বলেছেন, তদন্ত চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গণমাধ্যমে কথা বলার বিষয়ে নীতিমালা থাকা দরকার। আদালত বলেছেন, তদন্ত পর্যায়ে কথা বললে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়।

রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদনের শুনানিতে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

শুনানিতে আদালত বলেন, মামলা তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় সে বিষয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) কিভাবে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, মিন্নি দোষ স্বীকার করেছে? তখনও আসামি (মিন্নি) আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দেয়নি।

আদালত বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি ইদানীং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) করে আসামিকেও হাজির করা হচ্ছে। এর আগে গাজীপুরের এক জঙ্গির মামলার সময় আমরা (আদালত) বলেছিলাম, আসামিদের এভাবে মিডিয়ার সামনে হাজির করে বক্তব্য (সংবাদ সম্মেলন) না দিতে। কিন্তু এখন দেখছি বিভিন্ন সময় আসামিদের মিডিয়ার সামনে হাজির করা হচ্ছে। এটা দুনিয়ার আর কোন দেশে আছে কিনা জানা নেই।

আদালত আরও বলেন, শুধু এ মামলায় না আরও অনেক মামলায় আমরা সংবাদ সম্মেলন (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর) দেখছি। তদন্ত পর্যায়ে এ ধরণের সংবাদ সম্মেলন করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? বরগুনার এসপি বলেছেন, আসামি মিন্নি দোষ স্বীকার করেছে। বিচারিক জবানবন্দির আগে এসব কি পাবলিকের (সংবাদ সম্মেলন করে) সামনে বলা যায়? প্রায় দেখা যায়, তদন্ত পর্যায়ে এ ধরণের ব্রিফিং করা হচ্ছে, যা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়। সে (মিন্নি) যদি দোষ স্বীকার করেও তাহলেও কি এসপির এ ধরণের সংবাদ সম্মেলন করা ঠিক হয়েছে?

এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, এটা করা উচিত হয়নি।

আদালত বলেন, মিন্নিকে সকালে সাক্ষী হিসেবে নেওয়া হয়েছে পুলিশ লাইনে। রাতে তাকে আসামি করা হয়েছে। তাহলে সুষ্ঠ তদন্ত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু আছে?

জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, মিন্নিকে অনেক পরে (মামলা হওয়ার) ডাকা হয়েছে।

আদালত বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের অনেক নিয়ম নীতি রয়েছে। আগে ক্যান্টনমেন্টে ডাকা হতো। সেখানে একজন লোককে নেয়া হলে তার মানসিক অবস্থা কি হতে পারে?

মিন্নির আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন আদালতকে বলেন, জামিন আবেদনকারীকেও (মিন্নি) সাক্ষী হিসেবে ডাকা হয়েছিলো। পরে আসামি করা হয়েছে।

তখন আদালত বলেন, অতি উৎসাহী হলে নানান সমস্যা হয়। এগুলোর একটা নীতিমালা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে) থাকা দরকার।

তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, আগামী ২২ আগস্ট এ মামলায় বিচারিক আদালতে পুলিশ প্রতিবেদনের দিন ধার্য রয়েছে। সেখানে সব উঠে আসবে।

তখন আইনজীবী আমিন উদ্দিন বলেন, ১৬৪ ধারায় মিন্নির জবানবন্দি পড়লে বোঝা যায়, এটা সাজানো। একজন মানুষের কি এত ক্ষমতা যে তিনি এত সুন্দর করে ঘটনার বর্ণনা দেবেন? আসামিকে (মিন্নি) যদি জামিন দেয়া হয় তবে কোনভাবেই তদন্ত প্রভাবিত হবেনা। জামিন দিলে সে পালিয়ে যাবেনা। তার বাবার হেফাজতে থাকবে। 

আমিন উদ্দিন বলেন, তাকে ডেকে নিয়ে সারাদিন জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার দেখানো হয়। একটা মেয়েকে ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করায় তার উপর কতটা চাপ থাকে তা বোঝা যায়! এছাড়াও এ মামলার আরেক আসামিকে ১ জুলাই গ্রেফতারের পর ১৪ জুলাই জবানবন্দি নেয়া হয়েছে যার মধ্যে একটি বড় সময়ের ব্যবধান রয়েছে।

এরপর আদালত মিন্নিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। ২৮ আগস্ট এ রুলের ওপর শুনানি হবে। একইসঙ্গে মিন্নির জবানবন্দির বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেন। আগামী ২৮ আগস্টের মধ্যে তাকে ওই ব্যাখ্যা দিতে হবে। এছাড়া এ মামলার যাবতীয় নথি (কেস ডকেট) নিয়ে হাজির হতে তদন্ত কর্মকর্তাকে তলবের আদেশ দেন আদালত।

আরও পড়ুন: মিন্নির রিমান্ড ও জবানবন্দির তথ্য জানতে চান হাইকোর্ট

 হাইকোর্টে ফের মিন্নির জামিন আবেদন

 মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর

এ সম্পর্কিত আরও খবর